Saturday 11 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যানজট নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র ৪ স্কুলে চালু হচ্ছে স্কুলবাস

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:১৮ | আপডেট: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১১:২৬

ঢাকা: যানজট নিরসনে রাজধানীর চারটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য স্কুলবাস চালু করা হচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায়। প্রাথমিকভাবে এই চারটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের স্কুলবাস চালু হলে রাজধানীতে ব্যাপক হারে যানজট কমার পাশাপাশি দূষণ কমবে বলে আশা করছেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) গুলশান-২ নগর ভবনে ডিএনসিসি এলাকার চারটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের অভিভাবকদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীতে যানজট নিরসন ও জ্বালানি সাশ্রয়ে স্কুলবাস চালু করার জন্য ডিএনসিসির উদ্যোগের প্রাথমিক কর্মকৌশলের অংশ হিসেবে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় মেয়রের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে অভিভাবকরা জানিয়েছেন, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে স্কুলবাসে সন্তানদের পাঠাতে আপত্তি নেই।

এদিন সভার শুরুতেই যানজট নিরসনে ডিএনসিসির প্রাথমিক পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

এরপরে বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে কীভাবে স্কুলভিত্তিক বাস পরিচালনা করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে তা জানানো হয় অভিভাবকদের।

ভিডিও প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য আরামদায়ক বাস, নির্দিষ্ট স্থান থেকে শিক্ষার্থীদের বাসে তোলা ও স্কুলের গেটে নামানো, প্রশিক্ষিত চালক ও সহকারী নিয়োগ, অ্যাপের মাধ্যমে বাসে শিক্ষার্থীদের ওপর নজরদারির পাশাপাশি যাতায়াতের খরচ ও অন্যান্য বিষয় সভায় তুলে ধরা হয়।

এসময় অভিভাবকরা বাসের ফিটনেস, চালক ও সহকারীর বৈশিষ্ট্য, স্কুলের সময়, যানজট, বাসে ওঠা-নামার সময় ও নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।

বিজ্ঞাপন

তারা জানান, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেই তারা স্কুলবাসে সন্তানদের দেবেন।

এদিন মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাত্র চারটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে চার হাজার। এই শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েই স্কুলে আসে। এর প্রভাব পড়ে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায়। ফলে যানজটে নাকাল হয় নগরবাসী। সেকারণে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, প্রতিটি স্কুলের নির্দিষ্ট বাসে চড়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসবে। কোনো শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকরা বাচ্চাদের নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে স্কুলে আসতে পারবেন না।’

তিনি বলেন, ‘স্কুলবাস চালু হলে যানজট কমে যাবে। একইসঙ্গে দূষণ কমার পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণও অনেকাংশে কমে যাবে। আমরা ইতোমধ্যেই অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলছি। এ বিষয়ে অনেক শিক্ষক একমত পোষণ করেছেন। এটি বাস্তবায়নে অভিভাবকদের সদিচ্ছা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

চারটি স্কুলের নাম উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘সবার আন্তরিক সহযোগিতায় প্রথম ধাপে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন এলাকার চারটি স্কুলে পাইলট প্রকল্প হিসেবে স্কুলবাস চালু করা হবে। স্কুল চারটি হলো- চিটাগাং গ্রামার স্কুল-ঢাকা, স্কলাস্টিকা স্কুল, স্যার জন উইলসন স্কুল এবং বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল।’

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বিদেশে দেখেছি স্কুলের ১০০ গজের মধ্যে কোনও ব্যক্তিগত গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। কারণ স্কুলে সবাই সমান। আমার গাড়ি আছে ওর নেই— এমন চিন্তা যেন শিশুদের মধ্যে না আসে। আমরা এটিই করতে চাই।’

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থীর জন্য একটি গাড়ি ব্যবহার করা হয়—এমনটাও অনেক স্কুলে দেখা যায়। ফলে রাস্তায় চলাচল করে অসংখ্য ব্যক্তিগত গাড়ি। যদি স্কুলবাস চালু করা হয় তবে এই ব্যক্তিগত গাড়িগুলোর চলাচল কমে যাবে ব্যাপক হারে। একসঙ্গে স্কুলে আসা-যাওয়ার কারণে ছেলে-মেয়েদের মাঝে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হবে ও তাদের সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হবে। একইভাবে ছেলে-মেয়েরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে বড় হওয়ার পাশাপাশি বাড়বে তাদের সক্ষমতাও।’

সন্তানদের নিরাপত্তা বিষয়ে এক অভিভাবকের করা প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সন্তানরাই বাবা-মায়ের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। স্কুলবাসগুলোতে সিসি ক্যামেরাসহ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘অ্যাপসের মাধ্যমে ট্রাকিং ব্যবস্থা থাকবে। নিরাপত্তা ও স্কুল বাসের চালক ও স্টাফদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে। একটি হটলাইন নাম্বার থাকবে যেটির মাধ্যমে অভিভাবকরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতে পারবেন, জানতে পারবেন তাদের সন্তানদের অবস্থান।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক পরিবারে বাবা-মা দুজনেই চাকরিজীবী। তাদের যেন ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়া আসা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে হয় সেক্ষেত্রে নিরাপদ স্কুলবাসই চমৎকার সমাধান হবে। সময়, নিরাপত্তা ও খরচ সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই এসব বাস সার্ভিস চালু করা হবে। আমরা এক্ষেত্রে একটি টেকসই সমাধান লক্ষ রেখে কাজ করে যাব।’

বাস রুট বিষয়ে আরেক অভিভাবকের প্রশ্নের জবাবে মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুলের শিক্ষার্থীদের বাসার ঠিকানা অনুযায়ী বাস রুট নির্ধারণ করা হবে। রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে একটি বাসে নির্দিষ্ট রুটের স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করবে। এর ফলে খরচ অনেক কমে আসবে।’

পর্যায়ক্রমে সব স্কুলেই এমন স্কুলবাস চালু করা হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ঢাকা উত্তরের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে চালু হলেও পর্যায়ক্রমে সকল স্কুলেই স্কুলবাস সার্ভিস চালু করা হবে। স্কুলবাস সার্ভিস বাধ্যতামূলক করা হলে স্কুলের ১০০ গজের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বহন করা ব্যক্তিগত গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।’

তবে এই বাস সার্ভিসের সফল বাস্তবায়নের জন্য অভিভাবকদের মাইন্ডসেট খুব গুরুত্বপূর্ণ বলেও জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম।

এদিন আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন স্কুলবাস চালনার জন্য ‘শাটল ফর স্কুল’ অ্যাপসের প্রধান নির্বাহী রিয়াসাত চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শরীফ উদ্দিন, চিটাগাং গ্রামার স্কুল-ঢাকা’র প্রিন্সিপাল আছিয়া আলম চৌধুরী, স্কলাস্টিকা স্কুল, মিরপুর শাখার প্রিন্সিপাল নুরুন নাহার মজুমদার, স্যার জন উইলসন স্কুলের প্রিন্সিপাল সাবরিনা শাহেদ ও বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়ালের প্রিন্সিপাল লুবনা চৌধুরীসহ অন্যান্যরা।

এর আগে সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) বনানীর শেরাটন হোটেলে বাংলাদেশ-জার্মান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিজিসিসিআই) আয়োজিত এক সভায় স্কুলের বাসের পরিকল্পনার কথা জানান ডিএনসিসি মেয়র।

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সবাই মিলে স্কুলবাসে যাতায়াত করলে আনন্দ পাবে। একসঙ্গে যাতায়াতে সুসম্পর্ক তৈরি হবে। স্কুলবাস হলে বাচ্চাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। বাসে সিসি ক্যামেরাসহ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।’

জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক স্কুলবাস চালুর বিষয়ও বিবেচনায় আছে বলেও উল্লেখ করেন উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

সারাবাংলা/এসবি/একে

ডিএনসিসি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর