‘সার্বভৌমত্ব কতটুকু বিক্রি করছেন, দেখার জন্য অপেক্ষায় জনগণ’
৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৩:৫৬ | আপডেট: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬:১৭
ঢাকা: ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব কতটুকু বিক্রি করছেন, সেটি দেখার জন্য দেশের জনগণ অপেক্ষায় আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি এ মন্তব্য করেন। জাতীয়তাবাদী মহিলার দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে জিয়ার কবরে যান রিজভী।
তিনি বলেন, ‘আজকে দেশের মানুষকে ক্ষুধায় রেখে, অনাহারে রেখে, তীব্র দুর্ভিক্ষ অবস্থার মধ্যে ফেলে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গেছেন। আমার বক্তব্য হচ্ছে- আপনি ওখানে গিয়ে তো এখনো তিস্তা চুক্তি করতে পারেননি। আপনি এখনো আমাদের যে ন্যায্য পাওনা- অভিন্ন নদীর পানি আদায় করতে পারেননি।’
‘আপনি ক্ষমতায় থাকার জন্য দেনদরবার করতে গেছেন। আর এই দেনদরবারে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব কতটুকু বিক্রি করছেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়। এটি দেখার জন্যই জনগণ চেয়ে আছে যে, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশের সার্বভৌমত্ব কতটুকু বিক্রি করছেন?’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটা সময় এখানে এসেছি, যখন চারিদিকে অন্ধকার। কারও কোনো কথা বলার অধিকার নেই। যে অন্যায়গুলো হচ্ছে, সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে, তাদের প্রতি যে ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা অত্যন্ত নির্মম এবং নিপীড়নমূলক। গণন্ত্রে সভা-সমাবেশ করার অধিকার চিরকালীন, সার্বজনীন একটা অধিকার। সেই অধিকারকে কী নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে আমাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে। আপনারা দেখেছেন, সেখানে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী নির্মমভাবে আক্রমণ করছে প্রতিনিয়িত। গতকালও নাটোরের লালপুরে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় হামলা করা হয়েছে। প্রতিদিন শুধু রক্তপাতের ঘটনা। বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর বর্বরচিত আক্রমণের ঘটনা শুধু জন্ম দেয়নি, এই আক্রমণে আহত হয়ে কারও চোখ চলে যাচ্ছে, কেউ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে চিরতরে। ইতোমধ্যে তিনজনের জীবন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এর উপরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। শত শত নেতাকর্মী ঘরছাড়া, গ্রামছাড়া, এলাকাছাড়া, মহল্লাছাড়া।’
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন দুই দিনের মধ্যে ডিমের হালি ৫৫টাকা হয়েছে। এটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা কি অন্যায়? প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি হয়েছে। এই দাম বৃদ্ধি হলে দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকা হচ্ছে এর বিরোধিতা করা। কেন আজকে এটা বৃদ্ধি হচ্ছে। আশপাশের দেশে তো বৃদ্ধি হচ্ছে না। যখনই আমরা এটা বলতে যাচ্ছি, তখনই সরকারের চণ্ডমূর্তি নিয়ে আবির্ভূত হচ্ছে। নিপীড়ন-নির্যাতনের সকল মাত্রা তারা নামিয়ে নিয়ে আসছে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপরে।’
‘বিএনপি দেশে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করার চেষ্টা করছে’— ক্ষমতাসীন দলের এমপি-মন্ত্রী-নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া তিনি বলেন, ‘এটা বলা ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই। কারণ, গণভিত্তির উপর একটা সরকার দাঁড়িয়ে থাকে, যদি সত্যিকারে অর্থে দেশে গণতন্ত্র থাকে। কিন্তু এখানে তো গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। তাহলে জনগণের কাছে কী বলবে? আপনারা দেখেছেন— বিভিন্ন জায়গায় ঘটনা তারাই ঘটাচ্ছেন, গুলি করছেন, নিহত করছেন। উল্ট তারাই আবার বিবৃতি দিচ্ছেন যে, বিএনপি নাকি এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে।’
‘এটা যুগে যুগে একদলীয় কর্তৃবাদী সরকার করে আসছে। বিরোধী দলের ওপর বুলডোজার চালিয়ে দিয়ে, স্ট্রিম রোলার চালিয়ে দিয়ে, তারাই আবার বিবৃতি দিয়েছে। আগে সরকারি প্রেস নোট দেওয়া হতো। বাস্তবের সঙ্গে সেই প্রেস নোটের কোনো মিল থাকত না। এখনো সরকারি দলের নেতা-নেত্রীরা সেই প্রেসনোটই দিচ্ছেন, যেটা তাদের অন্যায় ঢাকার জন্য দিতে হয়। আমরা এরশাদের আমলে দেখেছি ছাত্রদের ওপর ট্রাক চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর প্রেস নোট দেওয়া হলো, ছাত্ররাই গাড়ির নিচে এসে পড়েছে। কেউ নিজের জীবন ট্রাকের সামনে চেপে দিতে পারে? ওই একনায়কতন্ত্র যা করেছে, শেখ হাসিনাও তাই করছেন’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।
বাংলাদেশের ভূমিতে মিয়ানমারের মর্টারশেল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা দুর্বল ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ফল। দেশের এই রকম একটা পরিস্থিতিতে শক্ত ভাষাটাও পরাষ্ট্রমন্ত্রী বা সরকারের কেউ দিতে পারছে না। কারণ, তাদের কোনো গণভিত্তি নেই। তাদেরকে চারিদিকের সমর্থনে টিকে থাকতে হয়। আজকে যদি সত্যিকারে জনগণের দল হতো, তাহলে একটা শক্ত প্রতিবাদ হতো।
সারাবাংলা/এজেড/এনএস