দিনে কৃষক, রাতে ‘অস্ত্রের কারিগর’
৩১ আগস্ট ২০২২ ১৯:০৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় দুর্গম পাহাড়ে একটি অস্ত্রের কারখানার সন্ধান পেয়ে অভিযান চালিয়েছে র্যাব। সেখান থেকে বিপুল অস্ত্রশস্ত্রসহ অস্ত্র তৈরির মূল ‘কারিগরকে’ গ্রেফতার করা হয়েছে। র্যাব জানিয়েছে, অস্ত্র তৈরির ওই কারিগর দিনে কৃষিকাজ করে। রাতে গহিন পাহাড়ে কারখানায় অস্ত্র তৈরি করে সহযোগীদের নিয়ে। তৈরি অস্ত্র বিক্রি করে ডাকাত, জলদস্যু ও মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দুপুর আড়াইটা থেকে টানা ছয়ঘণ্টা ধরে উপজেলার জঙ্গল চাম্বল পাহাড়ে অভিযান চালান র্যাব সদস্যরা।
গ্রেফতার জাকেরুল্লাহ (৫০) জঙ্গল চাম্বল গ্রামের মৌলভী নুরুল হুদার ছেলে। তার কারখানা থেকে ৮টি ওয়ান শ্যূটার গান, দুইটি পিস্তল এবং অস্ত্র তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ জানান, বাঁশখালীর মূল সড়ক থেকে অন্তত দেড়ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় দুর্গম পাহাড় জঙ্গল চাম্বলে। সেখানে টিনের ছাউনি দেওয়া একটি ঘরকে অস্ত্র তৈরির কারখানা হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল জাকেরউল্লাহ ও তার এক সহযোগী। অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহারের জন্য কাছাকাছি এক বাড়ি থেকে নেওয়া হয়েছিল বিদ্যুৎ সংযোগ। মূলত সেই বিদ্যুৎ সংযোগের সূত্র ধরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব অস্ত্রের কারখানাটির সন্ধান পায়।
জাকেরকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব কর্মকর্তা ইউসুফ আরও বলেন, ‘জাকের ও তার এক সহযোগী মিলে অস্ত্র তৈরি করত। তারা দিনে জমিতে কৃষিকাজ করত। রাতে কারখানায় অস্ত্র তৈরি করত। প্রায় ৭-৮ বছর ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা কারখানাটি পরিচালনা করে আসছিল। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় স্থানীয় লোকজনও সেখানে অস্ত্র তৈরির বিষয়ে কিছু জানত না।’
‘একটি ছোট ওয়ান শ্যুটারগান তৈরিতে ৫ থেকে ৬ দিন সময় লাগে তাদের। প্রকারভেদে সর্বোচ্চ ১৫ দিন লাগে। দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে এসব অস্ত্র তৈরি হলেও বুলেট হিসেবে ব্যবহার করা হত একে-২২ এবং চাইনিজ রাইফেলের গুলি। এ সব গুলি আসত প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। প্রতিটি অস্ত্র বিক্রি হয় ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা দরে। আর বিক্রি করা হত জলদস্যু বাহিনী-ডাকাত দল এবং মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে।’
র্যাব জানায়, অস্ত্র তৈরির কাঁচামাল তারা স্থানীয় বিভিন্ন ওয়ার্কশপ থেকে সংগ্রহ করত। প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করত বিভিন্ন আকৃতির পাইপ ও লোহার টুকরা। অস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরিতে জাকের ও তার সহযোগী খুবই পারদর্শী। ওই কারখানা থেকে গ্রাইন্ডার মেশিন, ঝালাই মেশিন, ড্রিল মেশিন, হাতুড়ি, রড কাটার, বাটালসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ র্যাব উদ্ধার করেছে।
এ ঘটনায় বাঁশখালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে র্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সারাবাংলা/আরডি/একে