মাওলানা ফারুকী হত্যা: ৮ বছরেও শেষ হয়নি মামলার তদন্ত
২৭ আগস্ট ২০২২ ১০:২৮
ঢাকা: ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাত ৯টার দিকে ১৭৪ পূর্ব রাজাবাজারের দোতলা বাসায় বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’য়ের ইসলামিক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক নুরুল ইসলাম ফারুকী কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তার ছেলে ফয়সাল ফারুকী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দায়েরের ৮ বছর পার হলেও এখনো প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি সিআইডি।
সর্বশেষ গত ৭ আগস্ট মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। এজন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালত আগামী ১২ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।
তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এখন পর্যন্ত ৬২ বার সময় নিয়েছেন ।
মামলাটি সম্পর্কে নুরুল ইসলাম ফারুকীর ছেলে ফয়সাল ফারুকী জানান, বাবা খুন হয়েছেন ৮ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলাটির তদন্তই শেষ হলো না। থানা পুলিশ, ডিবির হাত ঘুরে এখন মামলার তদন্তে আছে সিআইডি। একের পর এক তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হচ্ছেন কিন্তু তদন্ত শেষ হচ্ছে না। আমরা পুরো পরিবার হতাশ। এটা নিয়ে আমরা ব্যথিত।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তবুও মামলায় ন্যায়বিচার পাবো এ নিয়ে আমরা এখনো আশাবাদী। পুরো পরিবার প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছি। প্রধানমন্ত্রী যদি এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতেন তাহলে হয়তো আমরা মামলাটির বিচার পেতাম। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ, তিনি যেন বিষয়টি একান্তভাবে মনিটরিং করেন। যারা তাকে (নুরুল ইসলাম ফারুকী) হত্যা করতে কলকাঠি নেড়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। তাদের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হোক।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী শওকত উল্লাহ চৌধুরী জানান, মামলার এজাহারে আসামিদের যে বয়স উল্লেখ করা হয়েছে তার সঙ্গে কাজী ইব্রাহিমের বয়সের মিল নেই। মামলার কোনো কিছুর সঙ্গেই তার মিল নেই। অযথা তাকে এ মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। হয়রানী করতে তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে।
আরেক আইনজীবী জায়েদুর রহমান জানান, মামলাটির তদন্ত সঠিক সময়ে শেষ না হওয়ায় আসামিদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রতি ধার্য তারিখে তাদের আদালতে হাজিরা দিতে হয়। এদের মধ্যে অনেকের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। মামলার তদন্তে পুলিশ যদি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না পায় তাহলে তারা মামলা থেকে অব্যাহতি পাবেন। তাদের ভোগান্তির শিকার হতে হবে না।
এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিরা হলেন, হাদিসুর রহমান সাগর, আবু রায়হান, আব্দুল গফ্ফার, মিঠু প্রধান, খোরশেদ আলম, রিয়াজ ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজ, তারিকুল ইসলাম ওরফে মিঠু, কাজী মো. ইব্রাহিম, জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজিব গান্ধী, জাহিদুল ইসলাম সোহাগ, বাপ্পী মিয়া, আব্দুল্লাহ আল তাসনিম, রাইসুল ইসলাম, খোরশেদ আলম, ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজ, তরিকুল ইসলাম, আলেক ব্যাপারী, মোস্তফা আহমেদ ও মোজাফ্ফর হোসেন ওরফে সাঈদ। আসামিদের মধ্যে প্রথম ১০ জন কারাগারে আছেন। শেষের ৬ জন জামিনে আছেন।
উল্লেখ্য, নুরুল ইসলাম ফারুকী চ্যানেল আইয়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘কাফেলা’ ও ‘শান্তির পথে’ এবং মাই টিভির লাইভ অনুষ্ঠান ‘সত্যের সন্ধান’ উপস্থাপনা করতেন। এছাড়া তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পাদক এবং সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিবও ছিলেন।
সারাবাংলা/এআই/আইই