বৃষ্টি আছে পূর্বাভাসে, বাস্তবে নেই
২১ আগস্ট ২০২২ ১৮:২৬
ঢাকা: বর্ষপঞ্জি থেকে বর্ষাকাল বিদায় নিয়েছে। শরতের শুরুতে যে বৃষ্টির দেখা মিলেছে, তাও ছিল ক্ষণিকের। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে প্রতিদিন সারাদেশে বৃষ্টিপাতের কথা বলা থাকলেও বাস্তবে বৃষ্টির দেখা খুবই কম পাওয়া যায়। এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলে, পাঁচ ঘণ্টা কাঠফাটা রোদ ও গরম সহ্য করতে হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের পরিমান কমে যাওয়া আর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া আবহাওয়ার এই পরিবর্তন স্বাভাবিক বিষয় না বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী ক্রমেই উষ্ণ হচ্ছে। যার প্রভাব সবখানেই কম বেশি পড়ছে। এদিকে সাগরে যে নিম্মচাপটি সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি ভারতের ছত্তিশগড়ে গিয়ে দুর্বল হয়ে গেছে। যদিও দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা এখনো কমেনি।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, ভারতের ঝাড়খণ্ড ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্মচাপটি পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে স্থল নিম্মচাপ আকারে ছত্তিশগড় ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। এটি ক্রমান্বয়ে আরও দুর্বল হয়ে যেতে পারে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, স্থল নিম্মচাপের কেন্দ্রস্থল, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর কমবেশি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। নিম্মচাপ দুর্বল হলেও বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো বিভাগে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের দৈনিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোববার (২১ আগস্ট) খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা , ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে।
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একই ধরনের পূর্বাভাস গত কয়েকদিন ধরে দেওয়া হলেও সে অনুযায়ী বৃষ্টিপাত হতে দেখা যায়নি। শনিবারও (২২ আগস্ট) সারাদেশে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জে ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। রাজশাহী বিভাগের রাজশাহীতে ২৭ মিলিমিটার, ঈশ্বরদিতে ৫ মিলিমিটার, বদলগাছীতে ৪ এবং তাড়াশে ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়েছে যার পরিমান উল্লেখযোগ্য নয়। চট্টগ্রাম বিভাগে সব মিলিয়ে ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, খুলনা বিভাগে ৬৮ মিলিমিটার, বরিশালে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হাতিয়ায় ৩২ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে এর বিপরীতে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাঙামাটি, হাতিয়া ও টেকনাফে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া দেশের অন্তত ২০ জেলায় তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তি ছিলো।
আবহাওয়াবিদদের মতে, আবহাওয়ার এই পরিবর্তন স্বাভাবিক নয়। আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারাবিশ্বই এখন উষ্ণ হয়ে উঠছে। যার প্রভাব সর্বত্র দেখা দিয়েছে। যেমন বর্ষাকালে মুশলধারে বর্ষার দেখা নেই। আবার শীতে অতিরিক্ত শীত অনুভূত, বছরজুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি। আবহাওয়ার এমন আচরণ পরিবেশ প্রতিবেশের ওপরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
আবহাওয়া অধিদফতরের মতে, বর্তমান যে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, তা আগামী তিনদিন অন্তত এমন থাকবে।
সারাবাংলা/জেআর/এএম