Sunday 05 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এখনও আঁতকে ওঠেন কাইয়ুম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ আগস্ট ২০২২ ০৮:৩৯ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২২ ১০:৪৭

ঢাকা: ‘সেই ভয়ংকর শব্দ এখনও কানে বাজে। ভয়ে থর থর করে কাঁপি। মাঝে-মধ্যে ঘুমও আসে না; যদিওবা আসে স্বপ্নের মধ্যে দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে ফিরি, আঁতকে উঠি। এই ঝুঝি আবার জনতার পায়ের নিচে পিষে যাই। এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করলেন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার শব্দে ভয় পেয়ে দৌড়াতে গিয়ে জনতার পায়ের নিচে পড়ে আহত তৎকালীন সাপ্তাহিক এশিয়া বার্তার সাংবাদিক কাইয়ুম আহমেদ। বর্তমানে তিনি প্রতিদিনের সংবাদের জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক; যিনি কাজ করেছেন সংবাদ, যায়যায়দিন, জনতাসহ কয়েকটি খবরের কাগজে।

বিজ্ঞাপন

এই প্রতিবেদকের কাছে কথাগুলো বলার সময় ডুকরে কেঁদে উঠেন তিনি। বলেন, আগে নিজের ব্যথা নিয়ে না ভাবলেও এখন তিন ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যতের ভাবনায় কাতর। এক রকম পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে আছি। ঘাড়, পিঠ, হাড়, কোমর ও হাঁটুর যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। চিকিৎসকরা বলছেন, আমি আর সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারব না। বরং ধীরে ধীরে আরো খারাপের দিকে যাব।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনায় কাইয়ুম বলেন, ‘হামলার সময় নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য দৌড়াতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ মূল সড়কে (নবাবপুরের দিকের রাস্তা) পড়ে যাই। আমার ওপর দিয়ে মানুষ ছুটে গেলে কোমরে ও মেরুদণ্ডে আঘাত পাই। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করি। কিন্তু ব্যথার উপশম হয়নি। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে যায়যায়দিনে কর্মরত অবস্থায় মেরুদণ্ডে ব্যথার কারণে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হই। কয়েক দিন পর সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও কোমর ও মেরুদণ্ডের ব্যথা বাড়তেই থাকে। পরে দুই দফা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছি। তখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর স্পাইনাল কর্ড ও লিভারে সমস্যা ধরা পড়ে। এরপর থেকে নিয়মিত ওষুধ খেয়ে এবং ফিজিওথেরাপি নিয়েও ব্যথা থেকে রেহাই পাইনি। এখনো সেই ব্যথা বয়ে বেড়াচ্ছি।’

কাইয়ুম আরও বলেন, ‘সেদিন মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়ে আবার ফিরে আসায় হয়তো নতুন জীবন পেয়েছি—কিন্তু যত দিন তারা বেঁচে থাকব তত দিন বহন করে যেতে হবে সেই শব্দের ভয়াবহতা, যা দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায়। রাতে ঘুমাতে পারি না। ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েও মাঝে মাঝে ঘুম আসে না। রাতে চিৎকার করে করে উঠি। সেই শব্দ। সেই ভয়ে থর থর করে কাঁপতে থাকি। সেই ভয়ংকর শব্দ এখনো কান থেকে যায় না। মাথায় শব্দ ভর করে আছে। কঠিন যন্ত্রণা ভোগ করছি।’

বিজ্ঞাপন

 

ওাজধানীর ডেমরা থানার আমুলিয়ায় ভাড়াবাড়িতে এভাবেই নিজের ভয়াল স্মৃতিচারণ করছিলেন সাংবাদিক কাইয়ুম আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সমাবেশ স্থলে ট্রাকের পূর্ব পাশে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে (আওয়ামী লীগ অফিসের রাস্তার মুখে) ছিলাম। শেখ হাসিনা বক্তব্যের শেষ দিকে জয় বাংলা স্লোগান দিলেন, ঠিক তখনই বিকট শব্দ। ভয়ে আতঙ্কে দৌড়াতে গিয়ে পড়ে যাই। জনতার ঢল ছুটছে সঙ্গে চিৎকার চেঁচামেচি। কখন যেন জনতার পায়ের নিচে পড়ে যাই। চিৎকার করলেও কে শোনে কার কথা সবাই দিগ্বিদিক। পরে অনেক কষ্টে উঠে আবার দৌড়াই। পরে বাসায় গিয়ে ব্যথায় ছটফট করি।’

জানা গেছে, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল এবং সাভারের সিআরপিতে বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসার জন্য অনেক অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এমআরআই রিপোর্টে ঘাড়, মেরুদণ্ড এবং হাঁটুতে সমস্যা ধরা পড়ে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ওষুধ সেবন করে ও থেরাপি নিছের সমস্যা কাটেনি; বরং বেড়েছে। এখন উঠা-বসাও কঠিন হয়ে পড়েছে। অসটোসিস কলার ও স্ক্র্যাচে ভর করে হাঁটতে হচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যেও নিয়মিত অফিস করছেন। সবশেষ আগারগাঁওয়ের ইনস্টিটিউশন অব নিউরোসায়েন্সের চিকিৎসক বলেছেন অপরারেশন করাতে। তবে চিকিৎসা ব্যয় বহনে জন্য পর্যাপ্ত টাকাও নেই তার।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চিকিৎসা করাতে তিন থেকে চার লাখ টাকার প্রয়োজন। তবু বাকি জীবন ব্যথামুক্ত পার করা সম্ভব নয়। এই বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা ব্যয় মেটানো কাইয়ুম ও তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়।

সাংবাদিকতা পেশায় সম্পৃক্ত কাইয়ুম একসময় আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি সাবেক ৭৪ নং ওয়ার্ড (বর্তমান ৩৮নং ওয়ার্ড) আওয়ামী লীগের একটি ইউনিটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

সারাবাংলা/একে

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা টপ নিউজ সাংবাদিক কাইয়ুম

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর