পরিবেশ রক্ষায় ফেলনা জিনিস দিয়েই ভাস্কর্য বানান রুদ্র
১৯ আগস্ট ২০২২ ০৯:১১ | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২২ ০৯:১২
কক্সবাজার: জেলা শহরের লাল দিঘির পাড়ার ‘ঈশান মিষ্টি পান বিতান’ নামে ছোট্ট একটি পানের দোকান করেই জীবন চলে প্রকাশ রুদ্রের (৩৮)। এছাড়াও শৈল্পিক গুন রয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধী এই যুবকের। ফেলে দেওয়া কাগজের ঢাল ও পরিত্যক্ত জিনিস দিয়েই তৈরি করছেন ভাস্কর্যসহ নানা শিল্পকর্ম। পরিবেশ রক্ষার জন্যই এসব জিনিস দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি করছেন বলে জানিছেন রুদ্র।
শহরের ঘোনার পাড়ার বাসিন্দা কৃষ্ণপদ রুদ্রের ছেলে প্রকাশ রুদ্র। সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির একটি কক্ষে চলছে ভাস্কর্য তৈরির কাজ করছেন তিনি। এছাড়া কাগজের ঢাল ও পরিত্যক্ত জিনিস দিয়ে তৈরি তাজমহল, স্ট্যাচু অব লিবার্টি, বিভিন্ন দেশের স্টেডিয়াম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইতালী ও রোমের ভাস্কর্য, করোনার অভয়ব, ইন্দ্রারা গান্ধী, মাদার তেরেসা, নেনসন মেন্ডেলা, সক্রেটিসসহ আরও বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিদের ভাস্কর্য ঘরের চারদিকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
পরিবার জানায়, ছোট বেলা থেকেই ছবি আঁকতেন রুদ্র। কিন্তু ভাগ্য তার অনুকূলে ছিল না। এসএসসি পরীক্ষা শেষে হঠাৎ ডান হাত অকেজ হয়ে পড়ায় আর ছবি আঁকতে পারেননি তিনি। কিন্তু পঙ্গুত্ব তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। শুরু করেন ভাস্কর্য তৈরির কাজ। কাগজের ঢাল আর পরিত্যাক্ত জিনিস দিয়ে প্রথমে একটি তাজমহল বানলেন। তার এই কাজ দেখে সবাই অবাক। সবাই খুব প্রসংশা আর উৎসাহ দিল। এই শক্তিতে তিনি একে একে শতাধিক দৃষ্টিনন্দন কাজ করেন। কিন্তু অর্থ অভাব, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও পরিবারের হাল ধরাসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে বাধা গ্রস্থ হচ্ছে তার সৃষ্টিশীল এই কাজের। এরপরেও হাল ছাড়েনি রুদ্র।
এদিকে তার বন্ধু ও স্বজনরা বলেন, ‘শত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও কষ্ট করে করা এই সৃষ্টিশীল কাজের সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না। যা খুবই দুঃখজনক।’
রুদ্রের কাকা চম্পক পাল বলেন, ‘রুদ্র দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করছে। সে যখন কাজ করে তখন খাবার ও ঘুমের ঠিক থাকে না। পরিত্যাক্ত জিনিস দিয়ে তৈরি করা এসব কাজ দেখে লোকজন তার প্রসংশা করে। কিন্তু এতে তার কোনো লাভ হচ্ছে না। একদিকে পরিবারের হাল অন্যদিকে শিল্পকর্ম। সবমিলে সে পেরে উঠছে না। এই মুহূর্তে এই শিল্পকে বাঁচাতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন। নয়ত এই শিল্প হারিয়ে যাবে।’
রুদ্রের মা করুনা রুদ্র বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই রুদ্র ছবি আঁকত। পরে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এই কাজে পরিবার তাকে তেমন সহযোগিতা করেনি। এজন্য সে অনেক বকা শুনেছে। শুরুর দিকে তার সন্তানের কাজ প্রসংশা পেলেও নগদ কোনো প্রাপ্তি না থাকায় তা এখন হারিয়ে যাচ্ছে। কোনো আর্থিক লাভ না থাকায় তার বাবাও এই কাজ আর পছন্দ করছেন না। সবাই প্রশংসা করে কিন্তু তার সন্তানের মূল্যায়ন করে না।‘
এ বিষয়ে প্রকাশ রুদ্র জানান, পরিবেশ রক্ষায় ফেলনা জিনিস দিয়েই শিল্প কর্ম চালিয়ে যাবেন। নতুন প্রজন্মের কাছে তার বার্তা হলো আন্তরিকতা ও সঠিক ব্যবহারের মানসিকতা থাকলে ফেলনা জিনিস দিয়েও অনেক কিছু তৈরি করা যায়। তার এই কাজে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি সমাজ পরিবর্তনের বার্তা রয়েছে। কিন্তু পরিবারের দায়িত্বসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন। স্বপ্ন পূরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চান তিনি।
অবহেলা ও অসচেতনতার কারণে প্রতিভাবান এই শিল্পীর শিল্পকর্ম হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার হাত বাড়ানোর দাবি স্থানীয় সচেতন মহলের।
সারাবাংলা/এনএস