মাকে খুন করা ছেলে গ্রেফতার, ‘অনুশোচনা’ নেই আচরণে
১৮ আগস্ট ২০২২ ১৬:৩১
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে পটিয়া উপজেলায় মাকে গুলি করে খুনের একদিন পর ছেলেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটিও জব্দ করা হয়েছে। র্যাব জানিয়েছে, মাকে খুন করে ঢাকায় পালানোর চেষ্টা করেছিল ওই যুবক। গ্রেফতারের পর ওই যুবকের আচরণে মাকে হত্যার জন্য কোনো ধরনের অনুশোচনা দেখা যায়নি।
বুধবার (১৭ আগস্ট) রাতে নগরীর শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে র্যাব জানিয়েছে।
গ্রেফতার মাঈনুল ইসলাম ওরফে মাঈনুদ্দীন মাঈনু (২৯) বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত শামসুল আলম মাস্টারের ছেলে। চট্টগ্রামের আলোচিত রাজনীতিক শামসুল আলম মাস্টার পটিয়া পৌরসভার মেয়র ছিলেন। আমৃত্যু তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গত ১৩ জুলাই তিনি মারা যান।
গত মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) পটিয়া পৌর সদরে নিজ বাড়িতে ছেলের গুলিতে নিহত হন শামসুল আলম মাস্টারের স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৬০)। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে বাদী হয়ে মাঈনুদ্দীনকে আসামি করে পটিয়া থানায় মামলা করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ জানান, জেসমিন আক্তারকে গুলি করে দ্রুত পালিয়ে মাঈনুদ্দীন মাঈনু পটিয়ার পাশের উপজেলা চন্দনাইশের দোহাজারিতে চলে যায়। সেখান থেকে পরিচিত এক ‘বড় ভাইয়ের’ মাধ্যমে সাতকানিয়ায় গিয়ে একটি কারখানায় আশ্রয় নেয়। গ্রেফতার এড়াতে মাঈনুদ্দীন তার মোবাইল ফোন সেট ফেলে দেয়। এরপর ঢাকায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
‘বুধবার সাতকানিয়ার কেরাণীহাট থেকে সে ঢাকাগামী বাসে উঠলেও টিকিট না কেটে বাস সুপারভাইজারের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে গাড়িতে উঠেছিল। ওই বাস শাহ আমানত সেতু এলাকায় পৌঁছার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে নিয়ে অভিযানে গিয়ে সাতকানিয়া এলাকার একটি গুদাম থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গ্রেফতারের পর মাঈনুদ্দীনের মধ্যে মাকে খুন করার জন্য কোনো ধরনের অনুশোচনা দেখিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, হ্ত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি সে তার বাবার অফিস থেকে সংগ্রহ করেছিল। সেটি বৈধ নাকি অবৈধ তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে র্যাব অধিনায়ক এম এ ইউসুফ জানান, শামসুল আলম মাস্টার জীবিত থাকা অবস্থায়ই মাঈনুদ্দীন উচ্ছৃঙ্খল ও নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এজন্য ছেলের ওপর তিনিও বিরক্ত ছিলেন। ছেলেকে বাদ দিয়ে তার সম্পত্তি স্ত্রী ও মেয়ের নামে রেখে যান। গত ১৩ জুলাই শাসমুল আলম মাস্টার মারা যাওয়ার পর তাদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
ঘটনার দিন সকালে মেয়েকে নিয়ে ব্যাংকে গিয়েছিলেন জেসমিন। সেটি জেনে মাঈনুদ্দীনের ধারণা হয়েছিল, তাকে বাদ দিয়ে তার মা ও বোন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন এবং সম্পত্তি বিক্রি করে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাবেন। সেটি নিয়ে দুপুরে ঘরে গিয়ে মা ও বোনের সঙ্গে ঝগড়া বাধায় মাঈনুদ্দীন। একপর্যায়ে নিজের কোমরে থাকা পিস্তল বের করে বোনের দিকে গুলি ছোড়ে। সেটি তার শরীরে না লাগায় আরেকটি গুলি ছোড়ে মায়ের দিকে।
র্যাব জানায়, প্রয়াত শামসুল আলম মাস্টারের মেয়ে স্বামীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। ২০১৭ সালে মাঈনুদ্দীনকেও সেখানে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের কারণে একবছর পর দেশে ফিরতে বাধ্য হয়। এরপর জেসমিন অস্ট্রেলিয়ায় মেয়ের কাছে চলে যান। কয়েক মাস আগে জেসমিন ও তার মেয়ে দেশে ফেরেন। তারা আবারও অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
এ জন্য মাঈনুদ্দীনের ধারণা হয়েছিল, মা-বোন তাকে বঞ্চিত করে সম্পত্তি বিক্রি করে টাকাপয়সা নিয়ে চলে যাবেন।
সারাবাংলা/আরডি/একে