৩০০০ নয়, দেশে তৈরি কিটেই করোনা শনাক্ত হবে ২৫০ টাকায়
৭ আগস্ট ২০২২ ২১:২২ | আপডেট: ৮ আগস্ট ২০২২ ০০:১২
ঢাকা: দেশে সাশ্রয়ী দামে করোনা শনাক্তের কিট উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বিসিএসআইআরের বিজ্ঞানীদের দীর্ঘ এক বছরের গবেষণায় এই কিট উদ্ভাবন করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আরটিপিসিআরের মাধ্যমে আগে যেখানে করোনা পরীক্ষায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ হয়, সেখানে বিসিএসআইআরের কিটে করোনা পরীক্ষা হবে মাত্র ২৫০ টাকায়।
রোববার (৭ আগস্ট) বিসিএসআইআর অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আফতাব আলী শেখ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিসিএসআইআরের নেতৃত্বে এই কিট তৈরিতে সহায়তা করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপনা তুলে ধরেন বিসিএসআইআরের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোর্শেদ হাসান সরকার। তিনি জানান, বিসিএসআইআরে কোভিড কিটে ‘এম’ জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এই জিনে অন্যান্য জিনের মতো মিউটেশন ঘটার প্রবণতা কম। এই কিটে ভুল নেগেটিভ ফলাফলের আশঙ্কা কম।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফতাব আলী শেখ বলেন, ‘দেশে বর্তমানে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের জন্য বিপুল সংখ্যক শনাক্তকরণ কিট আমদানি করতে হয়। এটি আমাদের দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস ঘন ঘন তার জিনগত পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। ফলে বাণিজ্যিক কিটগুলোর শনাক্তকরণে সেনসিটিভি ও স্পেসিফিকেশনে হ্রাস পাচ্ছে, যা অনেক ক্ষেত্রে ভুল ফলাফল দিতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সার্স কোভ-২ (SARS-CoV-2) শনাক্তকরণে কিউআরটি-পিসিআর (qRT-PCR) টেস্টকে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়। বর্তমানে যে কিউআরটি-পিসিআর কিট ব্যবহৃত হচ্ছে তা অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ। প্রতিটি পরীক্ষায় ব্যয় হয় আনুমানিক তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। কিন্তু বিসিএসআইআর উদ্ভাবিত এই কিটে মাত্র ২৫০ টাকা খরচ হবে। ফলে বিপুল আমদানি খরচ থেকে দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে।’
অধ্যাপক আফতাব বলেন, ‘বিসিএসআইআর কোভিড কিট করোনা শনাক্তের জন্য একটি সহজ ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি। এটি একটি অভাবনীয় আবিষ্কার। ফলে এখন দেশের মানুষ স্বল্পমূল্যে করোনা পরীক্ষা করতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর এই কিট উৎপাদনের অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ মেডিকেল গবেষণা পরিষদ এই কিটের অ্যাথিকেল ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই কিটের ন্যূনতম শনাক্তকরণ ক্ষমতা ১০০ কপি ভাইরাস/মিলি, যেখানে আমদানি করা অন্য কিটগুলোর শনাক্তকরণ ক্ষমতা ১ হাজার কপি ভাইরাস/মিলি। অর্থাৎ বিসিএসআইআরের কোভিড কিট দ্বারা একেবারেই ন্যূনতমসংখ্যক ভাইরাসকে শনাক্ত করা যাবে। ফলে রোগের উপসর্গ প্রকাশের আগেই ভাইরাসের উপস্থিতি জানা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, এই কিটে ফলস নেগেটিভ ফলাফলের সম্ভাবনা কম এবং ফলাফল বিশ্লেষণ করা তুলনামূলক সহজ ও যথাযথ। এ কিটের জন্য টার্গেটকৃত প্রাইমার ও প্রোব বিসিএসআইআরের বিজ্ঞানীরা নিজস্ব গবেষণাগারে ডিজাইন করেছেন। তাই এই কিট অন্য বাণিজ্যিক কিটের তুলনায় স্বতন্ত্র।
সংবাদ সম্মেলনে বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফতাব আলী শেখ জানান, বিসিএসআইআর অত্যন্ত স্বল্প ব্যয়ে আরএনএ এক্সট্রাকশনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। এ জন্য বিসিএসআইআরের কিটের উৎপাদন খরচ বাণিজ্যিক কিটগুলোর চেয়ে কম। তাই উদ্ভাবিত এই কিট দ্বারা প্রতিটি শনাক্তকরণ পরীক্ষায় খরচ হবে ২৫০ টাকা। এখন দেশীয় কোনো প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান দিয়ে কিটটি উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘বিসিএসআইআর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মিলে যে আমরা বড় কাজ করতে পারি, তার একটি নমুনা পাওয়া গেল। এসব ল্যাবকে কাজে লাগাতে হবে। দেশের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনকে অনুপ্রাণিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞান গবেষণায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অকাতরে টাকা দেন। বিজ্ঞানীদের গবেষণায়ও প্রধানমন্ত্রী সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন ও ল্যাব প্রতিষ্ঠা করছে সর্বোচ্চ মানের।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এগিয়ে যেতে হলে আমাদের উন্নত জিনোম সিকোয়েন্স লাগবে। এর জন্য সরকারপ্রধানকে বললে তিনি সব করে দিয়েছেন। এর আগে এই ল্যাবে দুই হাজার জিনোম সিকোয়েন্স হয়েছে। প্রতিটি গবেষণা কাজে আমরা সহযোগিতা করে এসেছি। কেউ চাইলে আমরা ল্যাবও দেব।’
বিএসএমএমইউর উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাঙালির মেধা ভিন্ন দেশে আগে কাজ করতো। এখন থেকে নিজ দেশেও বাঙালিরা অনুপ্রেরণা পাবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএসএমএমইউর কোষাধ্যক্ষ (ট্রেজারার) আতিকুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রফিকুল হাসানসহ অন্যান্যরা বক্তব্য দেন।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম