বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের যাত্রা শুরু
১ আগস্ট ২০২২ ১৩:৫০ | আপডেট: ১ আগস্ট ২০২২ ১৩:৫৯
গোপালগঞ্জ থেকে: শোকাবহ আগস্টে প্রদর্শনের জন্য আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ একটি ব্রডগেজ এবং একটি মিটারগেজ কোচ নিয়ে সারাদেশে প্রদর্শনের জন্য তৈরি করা হয়েছে এই জাদুঘরটি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন সংগ্রাম, স্বাধীনতাযুদ্ধ আর ইতিহাসের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ এই জাদুঘর তৈরি করা হয়েছে। জাদুঘরটি ১ আগস্ট থেকে বিনা টিকিটে সবাই পরিদর্শন করতে পারবেন।
সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে গোপালগঞ্জ রেলস্টেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক বীরেন্দ্রনাথ মজুমদার অতিরিক্ত মহাপরিচালক মনজুরুল আলম চৌধুরী, গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘একটি ভারসাম্য যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে রেলপথের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু স্বাধীনতার পর আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শে দিন দিন রেলপথকে সংকুচিত করে সড়ক পথের ওপর নির্ভরশীল বাড়ানো হয়। এতে সারাদেশে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রেলপথের সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেন। তারই উদ্যোগের ফলে সারাদেশকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, আদর্শ তার আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেম সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
রেলমন্ত্রী বলেন, ‘এই ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা স্টেশনগুলোতে বঙ্গবন্ধুর জন্ম থেকে মৃত্যুপর্যন্ত তার কর্মজীবন রাজনৈতিক জীবন আত্মত্যাগ সাধারণ মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক বীরেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জীবনী আত্মত্যাগ এবং তার রাজনৈতিক দর্শনকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বাংলাদেশ রেলওয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল যাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়েছে। এ জাদুঘরের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাধারণ মানুষ বঙ্গবন্ধুকে জানার সুযোগ পাবেন।’
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মো. মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’ রেলের ইতিহাসে প্রথম ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর। একটি ব্রডগেজ ও একটি মিটারগেজ কোচকে সর্বোচ্চ প্রযুক্তিতে সাজানো হয়েছে। জাদুঘরটিতে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির পিতার ঐতিহাসিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, সংগ্রামী ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে।’
সাধারণ দর্শনার্থীরা টাচ স্ক্রিনে আঙুল স্পর্শ করতেই ভেসে আসবে বঙ্গবন্ধু ছবি, ভাষণ, তার জীবনের নানা দিক-নির্দেশনা। প্রায় দেড় বছর সময় ধরে এটি তৈরি করা হয়েছে। দেশের ৮০ শতাংশ রেলস্টেশন গ্রাম-বাংলায় ছড়িয়ে রয়েছে। প্রান্তিক মানুষের কাছে জাতির পিতার ঐতিহাসিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, সংগ্রামী জীবনী তুলে ধরতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্রডগেজ কোচের জাদুঘরটি পশ্চিমাঞ্চল এবং মিটারগেজের জাদুঘরটি পূর্বাঞ্চলে প্রদর্শন করা হবে। শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের জন্য জাদুঘরটি উন্মুক্ত থাকবে।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তার জীবন দিয়ে আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে একটি জাতির জন্য আত্মত্যাগ করতে হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার স্মৃতিকে জীবন্ত করে রাখতে আমি ব্যক্তিগতভাবে দুটি উদ্যোগ গ্রহণ করি। উদ্যোগ দুটির একটি হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর অন্যটি হলো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার লেখা একটি থিম সং।’
জানা গেছে, আজ পয়লা আগস্ট থেকে পর্যায়ক্রমে সারাদেশের বিভিন্ন রেল স্টেশনে এই ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। গোপলগঞ্জে এই জাদুঘরটি ১ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচদিন থাকবে। প্রতিদিন সকাল থেকে সূর্যাস্তের আগপর্যন্ত সবাই তা পরিদর্শন করতে পারবেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এরইমধ্যে ঢাকা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত রেল জাদুঘরটি ট্রায়াল সম্পন্ন করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী— আজ থেকে মিটার গেজ ভ্রাম্যমাণ আরেকটি রেল জাদুঘর বিকেল পাঁচটায় চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ উদ্বোধন করবেন। সেটি চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে আর ব্রডগেজ শুরু হবে গোপালগঞ্জ স্টেশন থেকে।
জানা গেছে— দুটি কোচের একটি থাকবে দেশের পূর্বাঞ্চলে অন্যটি থাকবে পশ্চিমাঞ্চলের রেলস্টেশনে। জাদুঘরটি কোন রেলস্টেশনে কত দিন থাকবে শিডিউল অনুযায়ী দেখা যায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে একটি জাদুঘর থাকবে ১ থেকে ৫ আগস্ট, ভাটিয়ারী স্টেশনে থাকবে ৫ থেকে ৭ আগস্ট, সীতাকুন্ড স্টেশনে থাকবে ৭ থেকে ৯ আগস্ট, চিনকিআস্তানা স্টেশনে থাকবে ৯ থেকে ১১ আগস্ট, ফেনী জংশনে থাকবে ১১ থেকে ১৫ আগস্ট, গুণবতী স্টেশনে থাকবে ১৪ থেকে ১৭ আগস্ট, নাঙ্গলকোর্ট স্টেশনে থাকবে ১৬ থেকে ১৯ আগস্ট, লাকসাম জংশনে থাকবে ১৮ থেকে ২৩ আগস্ট, চৌমুহনী স্টেশনে থাকবে ২৪ থেকে ২৫ আগস্ট, মাইজদীকোর্ট স্টেশনে থাকবে ২৬ থেকে ২৭ আগস্ট, নোয়াখালী স্টেশনে থাকবে ২৮ থেকে ২৯ আগস্ট, চাঁদপুর স্টেশনে থাকবে ৩০ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর, কুমিল্লা স্টেশনে থাকবে ২ থেকে ৪ নভেম্বর, আখাউড়া স্টেশনে থাকবে ৫ থেকে ৮ নভেম্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে থাকবে ৯ থেকে ১০ নভেম্বর, ভৈরব স্টেশনে থাকবে ১১ থেকে ১২ নভেম্বর, নরসিংদী স্টেশনে থাকবে ১৩ থেকে ১৪ নভেম্বর, টঙ্গী জংশনে থাকবে ১৫ থেকে ১৬ নভেম্বর এবং ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে থাকবে ১৭ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত।
অন্যদিকে আরেকটি কোচ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের গোপালগঞ্জ স্টেশনে থাকবে ১ থেকে ৫ আগস্ট, কাশিয়ানী স্টেশনে থাকবে ৬ থেকে ৭ আগস্ট, ভাটিয়াপাড়া ঘাট স্টেশনে থাকবে ৯ থেকে ১০ আগস্ট, মধুখালী জংশনে থাকবে ১২ থেকে ১৩ আগস্ট, রাজবাড়ী স্টেশনে থাকবে ১৫ থেকে ১৭ আগস্ট, ফরিদপুর স্টেশনে থাকবে ১৯ থেকে ২০ আগস্ট, পাংশা স্টেশনে থাকবে ২২ থেকে ২৩ আগস্ট, কুমারখালী স্টেশনে থাকবে ২৫ থেকে ২৬ আগস্ট, কালুখালী জংশনে থাকবে ২৮ থেকে ২৯ আগস্ট, কুষ্টিয়া স্টেশনে থাকবে ৩০ থেকে ৩১ আগস্ট, খুলনা স্টেশনে থাকবে ২ থেকে ৭ নভেম্বর, দৌলতপুর স্টেশনে থাকবে ৯ থেকে ১০ নভেম্বর, নোয়াপাড়া স্টেশনে থাকবে ১২ থেকে ১৩ নভেম্বর, যশোর স্টেশনে থাকবে ১৫ থেকে ১৮ নভেম্বর, বেনাপোল স্টেশনে থাকবে ২০ থেকে ২১ নভেম্বর, নাভারণ স্টেশনে থাকবে ২২ থেকে ২৩ নভেম্বর, মোবারকগঞ্জ স্টেশনে থাকবে ২৫ থেকে ২৬ নভেম্বর, দর্শনা স্টেশনে থাকবে ২৮ থেকে ২৯ নভেম্বর এবং চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে থাকবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
উল্লেখ্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, অধিকার আদায়ে আন্দোলন, সংগ্রাম এবং তার কর্মজীবন পৌঁছে দিতে দেশে প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠা হলো ‘বঙ্গবন্ধু রেল জাদুঘর’।
বাংলাদেশ রেলওয়ের উদ্যোগে একটি মিটারগেজ ও একটি ব্রডগেজ রেল কোচের ভেতরে গড়ে তোলা ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরটি গত ২৭ এপ্রিল উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা আজ থেকে যাত্রা শুরু করবে।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রেলের বগিতে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরটি নির্মাণ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। একটি মিটারগেজ ও একটি ব্রডগেজ কোচে একই জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে। জাদুঘর দুইটিতে বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর নির্মিত তথ্যবহুল ও মনোমুগ্ধকর বারোটি পৃথক চিত্র ও দুর্লভ আলোকচিত্রের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে।
সারাবাংলা/জিএস/একে