নির্বাচনের ওপর জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে— সংলাপে বাংলাদেশ ন্যাপ
২৮ জুলাই ২০২২ ১৫:০২ | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২২ ১৬:৫৩
ঢাকা: বর্তমানে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা আছে বলে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক জোটের দলগুলো ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও জনগণ বিশ্বাস করে না বলে অভিমত জানিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে বসে দলটি এমন অভিমত জানায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে এতে ইসি কমিশনার মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা, আনিছুর রহমান ও বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান ও ইসি সচিব হুমায়ন কবির খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ন্যাপের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য বলা হয়, নির্বাচনের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি জনগণও সম্পূর্ণভাবে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এমতবস্থায়, নির্বাচন কমিশনকে গণতন্ত্রের স্বার্থে, সুস্থ ধারার রাজনীতির প্রয়োজনে সর্বাগ্রে স্বচ্ছ, প্রশ্নমুক্ত, গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন ব্যবস্থায় জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশ ন্যাপ যেকোনো মূল্যে, সবদলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়।
সংলাপে বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানির নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন- দলের মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার মশিউর রহমান গানি, যুগ্ম মহাসচিব মো. নুরুল আমান চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. জসীমউদ্দিন তালুকদার, মো. রেজাউল করিম রীবন, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এখলাস হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন, নির্বাহী সদস্য মোফাক্কারুল ইসলাম পেলাব।
এ সময় দলের পক্ষ থেকে আরও বলা হয় যে, ভোটের মাধ্যমে নিজের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এই মৌলিক অধিকার প্রয়োগের দায়িত্বটি নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। তাই নির্বাচন কমিশনের কর্তব্য হবে আগে সব রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের আস্থা অর্জনে যাবতীয় বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করা।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ মহান মুক্তিযুদ্ধের মুল চেতনা, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষে ১১দফা প্রস্তাবনা এবং পরামর্শ উপস্থাপন করে। সেগুলো হলো—
১. বাংলাদেশ ন্যাপ মনে করে স্বাধীনতার ৫০ বছরে দারিয়ে বিশ্বের প্রায় সকল সংসদীয় গণতন্ত্রের রাষ্ট্রগুলোর মতোই বাংলাদেশেও দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ আজ সময়ের দাবি।
২. গত ৫০ বছরে দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ফলে জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
৩. বিদ্যমান আসনভিত্তিক প্রত্যক্ষ নির্বাচনের পাশাপাশি দল বা জোটের সারাদেশে প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন।
৪. জাতীয় নির্বাচনের কমপক্ষে ছয় মাস আগে ভোটারদের হাল নাগাদ তালিকা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করা প্রয়োজন।
৫. দেশের রেমিট্যান্সযোদ্ধা প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত ও তাদের ভোট গ্রহণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৬. রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পদ্ধতি শর্তাবলী সহজ করা। যে সব শর্ত সংবিধানের মৌলক গণতান্ত্রিক চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অসঙ্গতিপূর্ণ আরপিও’র সেসব ধারা বাতিল করা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এক শতাংশ সমর্থনের বিধান রহিত করতে হবে।
৭. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন লেভেল প্লেইংফিল্ড। সেক্ষেত্রে একটি সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় আরেকটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেই লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করা সম্ভব নয়। সেহেতু নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করা প্রয়োজন।
৮. অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক আমলা ও তারকা ব্যবসায়ীরা নূন্যতম পাঁচ বছর রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার পরই কেবল তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন।
৯. একটি আধুনিক ইলেকটরাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএমএস) অর্থাৎ আধুনিক নির্বাচন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। যেমন— ক) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজনকে রিটার্নিং অফিসার না করে তিন সদস্যবিশিষ্ট জেলা রিটারনিং প্যানেল তৈরি করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর একজন সদস্যকে অবশ্যই এই প্যানেলে অর্ন্তভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। খ) প্রতিটি নির্বাচনি কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার পৌঁছানো থেকে কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ভোট দেওয়ার গোপন কক্ষ ছাড়া প্রতিটি কক্ষে ও বুথে অনিয়ম রোধে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে লাইভ স্ট্রিমিং, রেকর্ডিং এবং কেন্দ্রের বাইরে প্রদর্শন করতে হবে। প্রার্থীদের এই সিসিটিভি লাইভস্ট্রিমিং ও রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের সুযোগ করে দিতে হবে; যেন যেকোনো অনিয়মের অভিযোগ তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তি করা যায়। গ) প্রতিটি নির্বাচনি কেন্দ্রে পিপল কাউন্টিং মেশিন স্থাপন করে নির্বাচনের দিন মোট ভোটের যোগফলের সাথে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি পর্যবেক্ষণে আনতে হবে; যাতে করে কোনোভাবেই একজন ভোটার এক এর অধিক ভোট দিতে না পারে। ঘ) প্রতিটি কেন্দ্রের নির্বাচনি ফলাফল প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের সামনে কেন্দ্রতেই ঘোষণা নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রত্যেক প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের সার্টফিকেট ইস্যু বাধ্যতামূলক হতে হবে।
১০. বাংলাদেশ ন্যাপ মনে করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা। ভোটারদের মধ্যে ইভিএম’র বিষয়ে গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি না করে ইভিএম চাপিয়ে দিলে সিদ্ধান্তটি একটি অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
১১. বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনী বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন পরিচালনা করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এখন সময় এসেছে সশস্ত্রবাহিনীকে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রধান সহযোগী শক্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম