কমছে না বিদ্যুৎ ঘাটতি, লোডশেডিং বাড়বে আরও
২৫ জুলাই ২০২২ ২০:৩৫ | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২২ ২২:২৪
ঢাকা: জ্বালানি সাশ্রয়ে প্রাথমিকভাবে এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টার লোডশেডিংয়ের সাত দিন সময় সীমা শেষ হলো। সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়সূচি অনুযায়ী বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, শুধু গ্রামাঞ্চলেই নয়, রাজধানীর কোথাও কোথাও তিন থেকে চার ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, এসিসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক পণ্য ব্যবহারে গ্রাহকদের নিরুৎসাহিত করলেও অনেকেই তা মানছেন না। যে কারণে উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় রুটিনের বাইরে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এদিকে, প্রথম সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ শেষে ঘাটতি মেটাতে আরও এক ঘণ্টা অর্থাৎ দুই ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, গত ১৭ জুলাই সর্বোচ্চ চাহিদা ছিলো ১৩ হাজার ১৪৩ মেগাওয়াট, চাহিদার বিপরীতে লোডশেডিং তেমন ছিল না। ১৮ জুলাই চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৮৮৯ মেগাওয়াট, এদিনও চাহিদার বিপরীতে লোডশেডিং ছিল না। কিন্তু ১৯ জুলাই মোট চাহিদা ১৩ হাজার ৪৮৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে লোডশেডিং ছিল ২ হাজার ৩৮৫ মেগাওয়াট। ২০ জুলাই ১৩ হাজার ১৫১ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে লোডশেডিং ছিল ১ হাজার ১৭০ মেগাওয়াট। ২১ জুলাই ১৩ হাজার ২৭৬ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ছিল ১ হাজার ৫৫৮ মেগাওয়াট। ২২ জুলাই ১২ হাজার ২১৬ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে এভারেজ লোডশেডিং ছিল না। ২৩ জুলাই ১৩ হাজার ৩২৭ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ৭৮৩ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল। ২৪ জুলাই চাহিদার বিপরীতে ১৬ মেগাওয়াটের মতো লোডশেডিং দিতে হয়েছে।
এদিকে, সরকার নির্ধারিত এক ঘণ্টার লোডশেডিং বেশিরভাগ এলাকায় মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রাহকরা জানিয়েছেন, এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের ঘোষণা দেওয়া হলেও কার্যত তিন থেকে চার ঘণ্টা করে লোডশেডিং খোদ রাজধানীতেই হচ্ছে। আর গ্রামে এই সময় আরও বেশী।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের গবেষণা সংস্থা পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয়ক করব। আর এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লোডশেড করব। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা গেল, অনেক গ্রাহকই তা মানছেন না। আমরা গত এক সপ্তাহ রিভিউ করে দেখেছি যে, এক হাজার মেগাওয়াট সাশ্রয় করার যে উদ্যোগ নিয়েছিলাম তা আর সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘যারা আরাম প্রিয় তারা লোডশেডিংয়ের সময় জেনারেটর কিংবা আইপিএস ব্যবহার করছেন। তাদের অসহযোগিতার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা কমছে না। বরং আরও পাঁচ থেকে ছয়শ মেগাওয়াট লোডশেড বাড়ছে। এখন এই বাড়তি লোডশেড নোটিশে নিয়ে আবার রিভিউ করতে হবে। আমরা সেজন্য লোডশেডিংয়ের সময় আরও এক ঘণ্টা বাড়িয়ে দেব। কারণ ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে। জনগনের সহযোগিতা ছাড়া কোনোভাবই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব নয়।’
উল্লেখ্য, জ্বালানি সংকটের কারণে দেশের ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়ে গ্যসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে এক ঘণ্টা করে লোডশেড দেওয়ার ঘোষণা আসে গত সোমবার। এরপর মঙ্গলবার থেকে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর শুরু করলেও তা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা দেয় বিপত্তি। ঘোষণা দিয়ে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা বলা হলেও সেটি কোথাও কোথাও চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম