ধানক্ষেতে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি
২৫ জুলাই ২০২২ ১৫:২৯ | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২২ ১৯:৩৮
ঢাকা: কুমিল্লার হোমনায় ধানক্ষেতে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে নবজাতকটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার নাক, মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
রোববার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে ঢামেকের নবজাতক বিভাগের এনআইসিইউতে শিশুটি ভর্তি রয়েছে।
নবজাতকটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা মানিক মিয়া জানান, তাদের বাড়ি কুমিল্লার হোমনা উপজেলার গাগুটিয়া ইউনিয়নের দড়িচর গ্রামে। গত শুক্রবার সকালে তার চাচাতো ভাই আমিরুল ইসলাম বাড়ির পাশে ক্ষেতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় ধানক্ষেত থেকে বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনতে পান। তখন তিনি ক্ষেতের ভেতর নবজাতকটিকে দেখতে পান। তবে তিনি বাচ্চাটি না ধরে দৌড়ে গিয়ে বাড়িতে খবর দেন। এরপর বাড়ির নারীদের নিয়ে ক্ষেত থেকে নবজাতকটিকে তুলে আনেন।
মানিক মিয়া আরও জানান, নবজাতকটির নাকটি সম্পূর্ণটা ইঁদুর বা অন্য কোনো প্রাণী খেয়ে ফেলেছে। তার মাথার পেছনেও ক্ষত রয়েছে। ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করার পর নবজাতকটিকে প্রথমে হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনদিন সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিল। চিকিৎসায় নবজাতকটির অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য রেফার্ড করেন।
মানিক মিয়া ও লাকি আক্তার দম্পতির ৪ ছেলে। এলাকায় বাজারে মানিকের টেলিকমের দোকান রয়েছে। তার স্ত্রী গৃহিণী। মেয়ে সন্তানের ইচ্ছা তাদের বহুদিনের। নবজাতকটি পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্যও দূরে থাকেনি তারা। হাসপাতাল চত্বরেই কাটছে তাদের সময়।
লাকি আক্তার বলেন, ‘যখন বাচ্চাটিকে পাওয়া যায়। তখন অনেকেই বাচ্চাটিকে দেখতে এসেছিল। তিনজন এসেছিল বাচ্চাটির দায়িত্ব নিতে। তবে তারা যখন দেখেন বাচ্চাটি স্বাভাবিক না, তার নাক, মাথায় সহ শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত রয়েছে তখন তারা চলে যায়।’
লাকি আক্তার আরও বলেন, ‘আমাদের কোনো মেয়ে সন্তান নেই। আমরা তুলে না আনলে বাচ্চাটা ওখানেই মারা যেত। আমরা বাচ্চাটিকে নিজেদের সন্তানের মতো লালন-পালন করতে চাই। শিশুটি উদ্ধার হওয়ার পর থেকে পুলিশ, উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে হাসপাতালে যোগাযোগ করেছেন।’
ওই দম্পতি জানান, বাচ্চাটির চিকিৎসার জন্য গতকাল পর্যন্ত কেউ কোনো সহায়তা করেনি। চিকিৎসার সব খরচ তারা বহন করছেন। গতকাল ঢাকা আসার আগে এলাকার লোকজন ১০ হাজার টাকা তুলে দেন তাদের হাতে।
ঢাকা মেডিকেলে আসার পর এখানকার চিকিৎসকরা বলছেন, সুস্থ হলেও শিশুটিকে তাদের কাছে দেওয়া হবে না। বাচ্চাটিকে নিতে হলে আদালতের অনুমতি নিতে হবে।
ঢামেক হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনীষা ব্যানার্জী বলেন, ‘নবজাতকটির নাক, মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত রয়েছে। তার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। বর্তমানে নবজাতকটিকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।’
সারাবাংলা/এসএসআর/একে