কৃষ্ণ সাগরের বন্দর খুলে দিতে ইউক্রেন-রাশিয়ার চুক্তি সই
২২ জুলাই ২০২২ ২০:৪১ | আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২২ ০০:৫৪
ঢাকা: শস্য রফতানির জন্য কৃষ্ণ সাগরের অবরুদ্ধ বন্দরগুলো খুলে দিতে রাজি হয়েছে ইউক্রেন ও রাশিয়া। তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ইস্তাম্বুলে এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যুদ্ধরত প্রতিবেশী দুই দেশের প্রতিনিধিদল। শুক্রবার (২২ জুলাই) ইস্তাম্বুলে স্থানীয় সময় বিকেলে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিস্যেপ তাইয়েপ এরদোগান ও জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের উপস্থিতিতে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
তবে ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে বা একই কাগজে স্বাক্ষর করেনি। ইউক্রেনের দাবি, তৃতীয় পক্ষ— অর্থাৎ, জাতিসংঘ ও তুরস্কের সঙ্গে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করা হয়েছে, সেখানে কৃষ্ণ সাগরের বন্দর খুলে দেওয়ার ব্যাপারে রাজি হয়েছে রাশিয়া। রাশিয়াও ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বলে জানিয়েছে।
উল্লেখ্য যে, যুদ্ধ শুরুর পর কৃষ্ণ সাগরের কিছু এলাকা অবরোধ করে রেখেছে রাশিয়া। ইউক্রেনও সাগরের কিছু এলাকায় নৌযান চলাচলে বাধা সৃষ্টিকারী মাইন পেতে রেখেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব জানিয়েছেন, ইউক্রেন কিছু মাইন সরিয়ে ফেলার ব্যাপারে রাজি হয়েছে।
এ চুক্তির ফলে ইউক্রেনের ২০ মিলিয়ন টন শস্য অবরোধমুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যুদ্ধরত দুই দেশের চুক্তি স্বাক্ষরের খবরের প্রভাব ইতিমধ্যে শস্যের বাজারে পড়তে শুরু করেছে। বিবিসির খবরে বলা হয়, শুক্রবার বিশ্ববাজারে গমের দাম কমেছে ২ শতাংশ।
তবে এ ব্যাপারে আল জাজিরার সংবাদিক জানান, কিয়েভ স্পষ্ট করে জানিয়েছে, এ চুক্তির অর্থ এই নয় যে, কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের জলসীমায় রুশ জাহাজ প্রবেশের অনুমতি পাবে। বরং রাশিয়ার কোনো জাহাজ বা কর্মকর্তাকে ইউক্রেনের কোনো বন্দরে অবস্থানের অনুমতি দেবে না কিয়েভ।
এদিকে, ইউক্রেনের পার্লামেন্ট সদস্য ওলেকসি গোনচারেঙ্কো জানিয়েছেন, আগামী সপ্তা থেকে গম রফতানি শুরু করতে পারে ইউক্রেন। তবে তিনি জানান, চুক্তি স্বাক্ষর হলেও কৃষ্ণ সাগরের বন্দরগুলো রাশিয়া আদৌ খুলে দেবে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয় তার সরকার। ক্রেমলিনের অতীত আচরণের ফলে তিনি এমন আশঙ্কা করছেন বলে দাবি করেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে এটি প্রথম কোনো বড় চুক্তি। উল্লেখ্য যে, ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম গম, ভুট্টা এবং সূর্যমুখী তেল রফতানিকারক দেশ। রুশ আগ্রাসনে কৃষ্ণ সাগরের বন্দরগুলো অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় ইউক্রেন থেকে শস্য রফতানিও বন্ধ হয়ে যায়। যদিও কিছু শস্য ইউরোপের মধ্য দিয়ে রেল, সড়ক ও নদীপথে পরিবহণ করা হচ্ছে। তবে সমুদ্রপথের তুলনায় এর পরিমাণ খুবই কম।
তুরস্কের গণমাধ্যম টিআরটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের সামরিক প্রতিনিধিদল ইস্তাম্বুলে এ ব্যাপারে বৈঠক করেছিলেন। ওই বৈঠকে একটি অস্থায়ী চুক্তিতে পৌঁছানোর ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন তারা। কৃষ্ণ সাগরের বন্দরগুলো থেকে জাহাজ ছেড়ে যাওয়া এবং বন্দরে পৌঁছানোর জন্য যৌথ নিয়ন্ত্রিত এবং স্থানান্তর রুটের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যাপারে রাজি হয়েছিল দুই পক্ষ। জাহাজ চলাচলের জন্য ইস্তাম্বুলে একটি সমন্বয় কেন্দ্র তৈরি করা হবে বলেও প্রস্তাব রয়েছে। এ সমন্বয় কেন্দ্রে জাতিসংঘ, তুর্কি, ইউক্রেনীয় এবং রুশ প্রতিনিধিরা থাকবেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান দুই দেশের এ চুক্তিকে বিশ্ব শস্য বাজারের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এরদোগান চুক্তি স্বাক্ষরের পর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা এই উদ্যোগে সহায়ক হতে পেরে গর্বিত। এই চুক্তি বৈশ্বিক খাদ্য সংকট সমাধানে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে। চুক্তি স্বাক্ষরে মধ্যস্থতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগ তুরস্কের প্রশংসা করেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব রাশিয়া এবং ইউক্রেনের এই সমঝোতায় বিশ্বে স্বস্তি আসবে বলে মন্তব্য করেছেন। অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, আজ কৃষ্ণ সাগরে একটি আলোকবর্তিকা, একটি আশার আলো জ্বলে উঠেছে। এই চুক্তিটি বিশ্বের জন্য একটি স্বস্তির বাতিঘর, যা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
সারাবাংলা/আইই