ইউপিডিএফের ‘রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত’ বক্তব্যের প্রতিবাদ
২২ জুলাই ২০২২ ১৫:৪৭ | আপডেট: ২২ জুলাই ২০২২ ১৭:১৪
রাঙ্গামাটি: দলীয় প্রধান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমাকে নিয়ে ইউপিডিএফের বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত’ বলে অভিহিত করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। সংগঠনটি পাহাড়িদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তাদের নেতৃত্বে একত্রিত হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে।
শুক্রবার (২২ জুলাই) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করে ইউপিডিএফের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে সন্তু লারমার সংগঠন জনসংহতি সমিতি। জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা বিবৃতিতে সই করেছেন।
বিবৃতিতে ইউপিডিএফের মানববন্ধনে দেওয়া ‘উদ্দেশ্যমূলক’ বক্তব্য ও স্লোগানের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। অবিলম্বে এসব বক্তব্য ও স্লোগান প্রত্যাহারের পাশাপাশি পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছে জেএসএস। সংগঠনটি জুম্ম জাতি ও পার্বত্য অধিবাসীদের সামগ্রিক স্বার্থে চুক্তিবিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থি ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে এসে জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নসহ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য ইউপিডিএফসহ সবার প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে।
আরও পড়ুন- সন্তু লারমাকে পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধের আহ্বান
বিবৃতিতে জেএসএস বলছে, গত ২০ জুলাই হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের ব্যানারে পার্বত্য চুক্তিবিরোধী সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) রাঙ্গামাটিতে জেএসএস সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমাকে ‘খুনি’, ‘সন্ত্রাসীদের গডফাদার’, ‘জাতীয় কুলাঙ্গার’, ‘দালাল’ ইত্যাদি বলে আখ্যা দেয়। ‘জেএসএসের (সন্তু) প্রতি ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধের আহ্বানে’ শীর্ষক ব্যানার নিয়ে আয়োজিত মানববন্ধনে ‘সন্তু তোমার খুনের রাজনীতি বন্ধ করো’ স্লোগান দেওয় হয়।
জেএসএস বলছে, ইউপিডিএফের মানববন্ধনে উসকানিমূলক, উগ্র ও অসৌজন্যমূলক স্লোগান ও বক্তব্যের প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। মানববন্ধনে জেএসএসের প্রতি তথাকথিত ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানানো হলেও তাদের অধিকাংশ বক্তব্যে ও স্লোগানে জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা লক্ষ্য করে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ আক্রমণাত্মক, বিদ্বেষমূলক, উসকানিমূলক, মানহানিকর ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।
বিবৃতিতে সজীব চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চায়— কায়েমি স্বার্থবাদী একটি বিশেষ মহল চুক্তিবিরোধী ও জুম্ম স্বার্থের পরিপন্থি যে গভীর ষড়যন্ত্র চলমান রয়েছে, সেই মহলেরই নির্দেশে এবং তারই অংশীদার হিসেবে চুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফ ওই দুই সংগঠনকে ব্যবহার করে এই ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক মানববন্ধনের নাটক মঞ্চস্থ করেছে।
তিনি আরও বলেন, মানববন্ধনে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভাওতাবাজি ও জনগণকে বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। বস্তুত ইউপিডিএফ পার্বত্য অধিবাসীদের অধিকারের সনদ পার্বত্য চুক্তিকে কালো চুক্তি বলে আখ্যায়িত করেছে এবং চুক্তির বিরোধিতার মধ্যেই যার জন্ম, সেই ইউপিডিএফ এখনো একই অবস্থানে রয়ে গেছে। তারা এখনো সমানে চুক্তিবিরোধী কথা বলে, চুক্তিবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে এবং চুক্তিতে সই করা জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বকে ধ্বংস করার অপচেষ্টায় লিপ্ত।
এর আগে, বুধবার (২০ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সামনের সড়কে পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির প্রধান সন্তু লারমার প্রতি ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধের দাবিতে ১০ মিনিটের একটি ঝটিকা মানববন্ধন করে ইউপিডিএফের সহযোগী দুই সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ। মানববন্ধনে জনসংহতি সমিতি ও সংগঠনটির শীর্ষ নেতা সন্তু লারমাকে আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়ে লিখিত বক্তব্য দেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা।
সারাবাংলা/টিআর