Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রনির পাঠানো স্মারকলিপির ব্যাখ্যা দিলো রেলওয়ে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২১ জুলাই ২০২২ ১৯:৫১ | আপডেট: ২১ জুলাই ২০২২ ২৩:১৩

ঢাকা: বাংলাদেশ রেলওয়ের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার অভিযোগ নতুন নয়। এবার এই অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে টানা ১৩ দিন অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। এই অব্যবস্থাপনা দূর করতে রেলওয়ের কাছেও স্মারকলিপি দিয়েছেন তিনি। সেই স্মারকলিপির জবাব দিয়েছে রেলওয়ে।

রেলের টিকিটিং ব্যবস্থা নিয়ে ঢাবি শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি যেসব প্রশ্ন তুলেছেন তার জবাবে রেলওয়ে বলছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে টিকিটিং সিস্টেমে অনলাইন কোটায় টিকিট ব্লক বা টিকিট বুকিংয়ের কোনো সুযোগ নেই। অনলাইন বা কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করার অধিকার দেশের সব শ্রেণির নাগরিকের রয়েছে। টিকিটের প্রাপ্যতাসাপেক্ষে যেকোনো নাগরিক রেলওয়ের নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে টিকিট কিনতে পারে। এখানে বৈষম্যের সুযোগ নেই।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ রেলওয়েকে আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে, সেখানে যদি কারও পরামর্শ পাওয়া যায় তাহলে তা বাস্তবায়ন করার ব্যবস্থা করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে রেলওয়ের ব্যাখ্যায়।

বৃহস্পতিবার ( ২১ জুলাই) রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো. শরিফুল আলমের সই করা রেলওয়ের বক্তব্য সম্বলিত একটি চিঠি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। সেখানে বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে সরকার এ পর্যন্ত যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা তুলে ধরা হয় ওই চিঠিতে।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

ব্যাখ্যায় রেলওয়ে বলছে, রেলওয়ে ১৯৯৪ সাল থেকে কম্পিউটারাইজড টিকিটিং চালু করেছে। প্রাথমিকভাবে ২৭টি স্টেশনে স্ট্যান্ড অ্যালোন সিস্টেমে টিকিটিং চালু হলেও বর্তমানে ৮৩টি স্টেশনে টিকিটিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সহজ লিমিটেড বর্তমানে রেলওয়ের টিকিটিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে কাউন্টার, অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রীদের টিকিট ইস্যু করা হয়। আর টিকিট ইস্যুর সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিয়মিত মনিটর করে থাকেন। যাত্রী হয়রানির কোনো অভিযোগ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে এলে তা তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গত ২৮ বছর ধরে চলমান সিস্টেমের যাত্রী চাহিদা বা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে সিস্টেমের মান উন্নয়ন করা হয়েছে।

ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়, যদি রেলওয়ে টিকিটিং সিস্টেমের উন্নয়নে সুস্পষ্ট অভিমত, মতামত বা সুপারিশ পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে রেলওয়ে তা বাস্তবায়ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

রেলওয়ে আরও বলছে, টিকিট কালোবাজারির বিরুদ্ধে রেলওয়ে নানা কার্যক্রম চলমান। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, টিকিটের ওপরে যাত্রীর নাম, এনআইডি নম্বর, বয়স, জেন্ডার উল্লেখ থাকে, যেন একজনের নামে কেনা টিকিট আরেকজন ভ্রমণ না করতে পারে। এছাড়া অনলাইন অ্যাপের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সাত দিনে সর্বোচ্চ দুই বারের বেশি রেলওয়ের টিকিট যেন কিনতে না পারেন, সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ স্লোগান বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে সংরক্ষিত জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই করে টিকিট ইস্যুর প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তারা বলছে, রেলওয়ের পক্ষ থেকে কমিশনের নির্ধারিত ফি জমা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত চুক্তি হবে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে এক ব্যক্তি বিভিন্ন নামে টিকিট কিনতে পারবেন না। এছাড়া রেলওয়ে পুলিশের মাধ্যমেও স্টেশন এলাকায় টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি অনেকাংশে প্রতিরোধ করাও সম্ভব হয়েছে। তবে এ বিষয়ে যদি কারও পরামর্শ পাওয়া যায়, তাহলে রেলওয়ে তা বাস্তবায়ন করবে।

ব্যাখ্যায় বলা হয়, রেলওয়ে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যাত্রীসেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রেলওয়ের বিভিন্ন অনিয়ম সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিস্ট কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে প্রচলিত আইনে বিভাগীয় তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।

এতে আরও বলা হয়, যাত্রী চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ২০০৯ সালে যাত্রীবাহী ট্রেন ছিল ২১৮টি। এর মধ্যে আন্তঃনগর ৬৪টি, আন্তঃদেশীয় দুইটি, লোকাল/মেইল/ এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করত ১৫২টি। বর্তমানে যাত্রীবাহী ট্রেনের সংখ্যা ৩৬৬টি। এর মধ্যে আন্তঃনগর ১০৪টি, আন্তঃদেশীয় আটটি, লোকাল/মেইল/এক্সপ্রেস ট্রেন ২৫৪টি। গত ১৩ বছরে ১৪৮টি ট্রেন যুক্ত হয়েছে রেলওয়েতে। তাছাড়া রেলওয়ের নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি ও ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোসহ নানা প্রকল্প চলমান রয়েছে, যার অধীনে অচিরেই আরও ১৬ জেলা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে।

রেলওয়ে বলছে, প্রতিষ্ঠানটিতে জনবল সংকটের কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যাত্রীসেবা দিতে বিঘ্ন ঘটে। এ কারণে জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ট্রেনে খাবার সরবরাহে ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত রয়েছে। রেলওয়েতে বর্তমান বাজারমূল্যের থেকে কম মূল্যে খাবার সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আর এ বিষয়টি কর্মকর্তারা নিয়মিত মনিটর করে থাকেন। এখানেও অনিয়ম করলে তদন্তসাপেক্ষে জরিমানার বিধান রয়েছে।

এছাড়া বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ ও বড় স্টেশনগুলোতে পানির ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে। সংস্থাটি বলছে, যাত্রীরা বিনামূল্যে পানি পান ও সংগ্রহ করতে পারেন। স্যানিটেশন ব্যবস্থা আধুনিয়কায়ন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৬০টি স্টেশনে প্ল্যাটফর্মের উচ্চতা বাড়ানো, ফেন্সিং নির্মাণসহ স্যানিটেশন আধুনিকায়নের কার্যক্রম চলছে।

এদিকে, টিকিট কিনতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ার পর গত ৭ জুলাই থেকে ছয় দাবিতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন মহিউদ্দিন রনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। রনির টানা অবস্থান কর্মসূচি সারাদেশে আলোড়ন ফেলে।

এরই মধ্যে মহিউদ্দিন রনির অবস্থানের কারণ জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২০ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে রনির বিষয়ে তথ্য জানাতে বলেন। এছাড়া রনির অভিযোগের ভিত্তিতে রেলের টিকিট বিক্রিতে অনিয়মের সঙ্গে সহজ ডটকমের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানাও করেছে।

সারাবাংলা/জেআর/একে

টপ নিউজ ট্রেন বাংলাদেশ রেল রেল রেলের দুর্নীতি