‘মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হলে চাপে পড়বে সরকার’
২১ জুলাই ২০২২ ১৮:৪৪ | আপডেট: ২১ জুলাই ২০২২ ২২:৩৯
ঢাকা: সরকারের নেওয়া মেগা প্রকল্পগুলো এতদিন স্বস্তির জায়গাতে থাকলেও সেটি এখন আর নেই বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এসব মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে নেওয়া ঋণ পরিশোধের সময় এগিয়ে আসাকেই এর কারণ হিসেবে মনে করছেন তিনি।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, দিন যত গড়াচ্ছে দায়দেনা পরিশোধের সময় তত এগিয়ে আসছে। বড় বড় অঙ্কের বৈদেশিক ঋণ এখন পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। এর মধ্যে প্রথম চাপ আসবে চীন থেকে। ঋণ পরিশোধের সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসবে ২০২৪ ও ২০২৬ সালে। দিন দিন বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমছে। মূল্যস্ফীতির হারও বাড়ছে। ২০২৪ সাল থেকে ঋণ পরিশোধ শুরু হলে সরকার আরও চাপের মুখে পড়বে।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) ‘বাংলাদেশের বৃহৎ ২০টি মেগা প্রকল্প: প্রবণতা ও পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডি’র এই সম্মানীয় ফেলো এসব কথা বলেন।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বাংলাদেশে চলমান ২০টি মেগা প্রকল্পের মোট ব্যয় ৭০ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশি ঋণই ৪৩ বিলিয়ন ডলার। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের যে হার, তাতে অনেকগুলোর কাজ ২০৩০ সালেও শেষ হবে না। কিন্তু ২০২৪ সাল থেকেই এসব প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু করতে হবে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমরা ৭০ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করছি। এই অর্থ দিয়ে ২০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসব প্রকল্পের মোট দায়দেনার পরিস্থিতি কী? দেখা যায়, এই বিপুল পরিমাণ অর্থের মধ্যে স্থানীয়ভাবে এসেছে ২৭ বিলিয়ন ডলার, বিদেশি অর্থায়ন ৪৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ অর্থই এসেছে বিদেশ থেকে। বাকি ২৫ শতাংশেরও কম টাকা দেশীয়। ২০২৪ সাল থেকেই এসব মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু করতে হবে। প্রথম চাপ আসবে চীন থেকে। এরপর রাশিয়া, তারপর জাপান।
এখন থেকে প্রস্তুতি না নিলে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পতিত হওয়ার শঙ্কার কথা জানান ড. দেবপ্রিয়। বলেন, ২০টি প্রকল্প ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চলতি দশকে সব কটি শেষ করা সম্ভব হবে না। প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবও রয়েছে।
দেবপ্রিয় বলেন, ২০ প্রকল্পের ১৫টাই ভৌত অবকাঠামো। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ ব্যয় হয়েছে রাস্তাঘাটে। ৩৫-৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ খাতে ব্যয় হয়েছে। বাকি অর্থ স্বাস্থ্যসহ অন্য খাতে দেওয়া হয়। এসব প্রকল্পে বড় ধরনের ধাক্কা দেওয়ার প্রবণতা আছে। আমাদের সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এজন্যই ২০টি মেগা প্রকল্প বেছে নিয়েছি। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে ২০১৮ সালের পর প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের গতি কমে যায়। এর মধ্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১১টি প্রকল্পের বাস্তবায়নের হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি। ২০১৮ সালের পর নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের হার দুর্বল। অর্থায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে রাশিয়া। তারপর যথাক্রমে জাপান ও চীন।
বড় বড় অনেক প্রকল্পের দায়দেনা পরিশোধের সময় এগিয়ে আসছে উল্লেখ করে সিপিডি’র এই গবেষক বলেন, সাশ্রয়ী সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন পরিশোধ করতে হবে দেনা। ঋণের বড় অংশ যাবে রাশিয়ার কাছে— ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া জাপানের কাছে প্রায় ৩৫ শতাংশ ও তৃতীয় স্থানে থাকা চীনকে ২১ শতাংশের বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে ২০২৪ সালে চীনকে দেনা পরিশোধ করতে হবে বেশি। পদ্মা সেতু দেশীয় অর্থায়নে বাস্তবায়নের কারণে অন্যান্য খাতে টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সিপিডি’র এই গবেষক যে ২০টি মেগা প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন, তার মধ্যে মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লাইন-১ (মেট্রোরেল), মাতাবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লাইন-৫ ও লাইন-৬ (মেট্রোরেল), পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প, ফোর্থ প্রাইমারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ (তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ), ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ডিপিডিসি’র পাওয়ার সিস্টেম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে ব্রিজ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প, সেফ ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প ও কোভিড ইমারজেন্সি রেসপন্স ও প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রকল্প।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর