সাম্প্রদায়িক হামলার পেছনে কারা খেলছে— প্রশ্ন সিপিবি সভাপতির
১৯ জুলাই ২০২২ ২১:৫৭ | আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২২ ২২:০৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রকাশ্যে সাম্প্রদায়িক হামলা পুলিশ ঠেকাতে পারছে না কেন— এমন প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহআলম। তিনি বলেছেন, ‘পুলিশকে কেন সরকার হামলা ঠেকানোর নির্দেশ দেয় না, হামলার পর কেন আমরা পুলিশকে দেখি— তাহলে নিশ্চয় এর পেছনে কোনো খেলা আছে। সাম্প্রদায়িক হামলার পেছনে কারা খেলছে, আমরা জানতে চাই।’
নড়াইলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম জেলা সিপিবি আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেছেন। মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বিকেলে নগরীর সিনেমা প্যালেস চত্বরে এ সমাবেশ হয়েছে।
শাহআলম বলেন, ‘নড়াইলে হামলার পর সংসদ সদস্য মাশরাফিকে বলতে শুনলাম— এই নড়াইল তো আমি আগে দেখিনি। তিনি আবার বললেন— সব কথা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। কেন সম্ভব নয়? তাহলে নিশ্চয় সরকারি দলের লোকেরা এই হামলার সঙ্গে জড়িত। না হলে সরকারি দলের এমপি কেন সব কথা বলতে পারবেন না? গত বছর কুমিল্লায় পূজা মণ্ডপে কোরআন শরিফ রেখে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলা হলো। আমরা নোয়াখালীর চৌমুহনীতে গেলাম। সেখানকার লোকজন বলল— ছয় ভাগে ভাগ হয়ে আড়াই ঘণ্টা ধরে হামলার ঘটনা ঘটেছে, আর পুলিশ গেছে আড়াই ঘণ্টা পর।’
‘পুলিশের যেতে আড়াই ঘণ্টা লাগল কেন? পুলিশ কেন হামলা প্রতিরোধ করতে গেল না? নিশ্চয় সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। অথবা এমন বলা হয়েছে— আগে ভেঙে শেষ করুক, তারপর তোমরা যেও। সুতরাং এসব সাম্প্রদায়িক হামলার পেছনে খেলা আছে। পেছনে কারা খেলছে, আমরা জানতে চাই,’— বলেন সিপিবি সভাপতি।
সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আরও সাম্প্রদায়িক হামলা হতে পারে আশঙ্কা করে তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালের শেষ দিকে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের আগে আরও ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এই বাংলাদেশ সব মানুষের, নির্দিষ্ট কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নয়। স্বাধীনতার ৫১ বছর পর আমাদের সাম্প্রদায়িক হামলা দেখতে হবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
‘দুঃখজনক হলেও সত্য পাকিস্তানের পরাজিত শক্তি, যাদের আমরা মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত করেছিলাম, তারা এখনো বাংলাদেশের রাজনীতিতে রয়ে গেছে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে রাজাকার গোলাম আজম, শাহ আজিজ, আব্দুল আলীমদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছিল। জিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন— এটা যেমন ঐতিহাসিক সত্য, তেমনি জিয়া রাজাকারদের পুনর্বাসন করেছিলেন— এটাও ঐতিহাসিক সত্য।’
শাহআলম বলেন, ‘এরশাদের পতন হয়ে আজ ৩২ বছর। এই ৩২ বছর ধরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি পালাক্রমে দেশ শাসন করছে। তাদের কাছে গরীব-দুঃখী, শোষিত মানুষ হচ্ছে লাথির কাঁঠাল। একবার আওয়ামী লীগ লাথি দেয়, আরেকবার বিএনপি লাথি দেয়। ৩২ বছর ধরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় শাসনামলে আমরা সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ঘটনা দেখেছি। অবস্থা এমন হয়েছে, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে আমাদের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একদিকে দ্রব্যমূল্যের চাপ, বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ছে, মানুষের জনজীবনে ব্যয় বাড়ার চাপ, অন্যদিকে সাম্প্রদায়িকতার চাপ— আমরা তো নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারেকাছেও নেই। বঙ্গবন্ধুর ছবি বুকে লাগিয়ে শুধু দখলবাজি করে। বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে আর মানুষের পকেট হাতায়, লুটপাট করে। এদের পরাজিত করে ভাত ও ভোটের লড়াই, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই এগিয়ে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে— এই বাংলাদেশ কারও বাপের তালুকদারি না। এই বাংলাদেশ কারও বংশের তালুকদারি না।’
সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অশোক সাহার সভাপতিত্বে ও সহকারী সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, কোতোয়ালি থানার সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, জেলা কমিটির রেখা চৌধুরী, সিতারা শামিম, মোহাম্মদ আলী এবং জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এ্যানি সেন। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘোরে।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর
টপ নিউজ সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সমাবেশ সিপিবি সিপিবি সভাপতি সিপিবি সভাপতি শাহআলম