‘সম্প্রীতি নষ্টে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ষড়যন্ত্র শুরু করেছে’
১৯ জুলাই ২০২২ ২০:১৬
নড়াইল: জেলার লোহাগাড়া উপজেলার দিঘলিয়া এলাকায় মহানবীকে (সা.) নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার ব্যাপারে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা কঠোর অপরাধ। যেই অপরাধী হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুর আড়াইটায় নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া এলাকায় দুস্কৃতিকারীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির, বাড়িঘর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র পান ব্যবসায়ী গোবিন্দ সাহার বাড়িঘর পরিদর্শনকালে এ কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী ওই চক্র দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে অগ্নিসংযোগ, হামলাসহ নানা অরাজকতা সৃষ্টি করে দেশকে সবসময় অস্থিতিশীল পরিবেশে রাখতে চায়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এ দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও মন্দিরের পুরোহিতদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের ভয় পাবার কোনো কারণ নেই। ১৫ জুলাইয়ের ঘটনায় আপনারা যারা ক্ষতির শিকার হয়েছেন সবাইকে পুর্নবাসন করা হবে এবং যেসব মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব মন্দির পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
দিঘলিয়ার ঘটনা পরবর্তী পদক্ষেপে নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার ভূমিকা তুলে ধরে ফরিদুল হক খান বলেন, ‘আপনাদের এমপি আমাদের গর্ব মাশরাফি দৃঢ়তার সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। আপনাদের পাশে এসে সাহস যুগিয়েছেন তিনি।’
এ সময় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে যে পরাজিত বিপথগামী শক্তি, জঙ্গিবাদী ও মৌলবাদী গোষ্ঠী জড়িত ছিল আজ তারাই শেখ হাসিনার সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে এদেশকে সাম্প্রদায়িক দেশে পরিণত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। বাংলাদেশে সকল সম্প্রদায়ের লোক সম্প্রীতির বন্ধনে অটুট থেকে যাতে একত্রে বসবাস করতে পারে সে লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এদেশকে শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সরকার শক্ত অবস্থানে আছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয় এমন যে কোনো অপতৎপরতা সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করবে। বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। নিরপরাধ মানুষের ওপর সংঘবদ্ধ হামলা, বাড়িঘর-দোকানপাট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, উপাসনালয়ে হামলা যারা করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। নড়াইলের এই ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, বাংলাদেশবিরোধী। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে জনগণের নিকট প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এ সময় সংসদের হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস, অসীম কুমার উকিল, বীরেন শিকদার, পঙ্কজ দেবনাথ এবং হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল, নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলুসহ স্থানীয় জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর বিকেল সাড়ে ৫টায় মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের উপস্থিতিতে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার্থে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মত বিনিময় সভায় বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৫ জুলাই নড়াইলের দিঘলিয়া এলাকার কলেজ ছাত্র আকাশ সাহার ফেসবুকে মহানবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি ওই দিন জুমার নামাজের পর বিভিন্ন পেশার মানুষের নজরে আসে। এরপর বিক্ষুদ্ধ লোকজন আকাশ সাহার গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে তাদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেন। ওই দিন বিকেল থেকে উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে সাহাপাড়ার ৫-৬টি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। এর মধ্যে একটি বাড়িতে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুনে দুই রুম বিশিষ্ট টিনের শেডের ঘর পুড়ে যায়। এছাড়া সাহাপাড়ার মন্দিরের চেয়ার ও সাউন্ডবক্স এবং আখড়াবাড়ি মন্দিরের টিনের চালা ভাঙচুরসহ ইট ছুড়েছে বিক্ষুব্ধরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেছে।
সারাবাংলা/একেএম