সেই শিশুর অভিভাবককে আপাতত ৫ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ
১৯ জুলাই ২০২২ ১৭:৩৫ | আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২২ ১৮:৪৭
ঢাকা: ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় মা-বাবা ও বোনকে হারিয়ে অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুর খরচা বাবদ আপাতত ৫ লাখ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সড়ক পরিবহন আইনে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ১৫ দিনের মধ্যে শিশুর আইনগত অভিভাবককে এই টাকা প্রদান করতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে শিশুটির চিকিৎসা চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ওই শিশুর দেখভালের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। ওই কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) এক রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো.জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। রুলে ওই শিশুর জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালতে রিট আবেদেনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ রেজাউল হক ও মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন।
গত ১৬ জুলাই ময়মনসিংহে ট্রাকচাপায় মা-বাবা ও বোন হারিয়ে অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুটির যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং কল্যাণ নিশ্চিতে গত সোমবার (১৮ জুলাই) রিট করেন আইনজীবী কানিজ ফাতেমা তুনাজ্জিনা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করেন।
পরে আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন জানান, রিট পিটিশনের শুনানি শেষে আদালত ওই নবজাতকের আইনগত অভিভাবককে ১৫ দিনের মধ্যে ৫ লাখ টাকা দিতে সড়ক পরিবহন আইনে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া সমাজকল্যাণ সচিব এই শিশুর দেখভালের জন্য একটি কমিটি গঠন করবেন। ওই কমিটি শিশুটির কল্যাণে কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিয়ে আদালতকে জানাতে বলেছেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, সড়ক পরিবহন সচিব, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ট্রাক মালিক মঞ্জুরুল ইসলামকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত শনিবার (১৬ জুলাই) বিকেলে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিল ছয় বছরের শিশুকন্যা সানজিদা।
এরপর ত্রিশালের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আল্টাসনোগ্রাম করে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির পথে মহাসড়ক পার হওয়ার সময় হঠাৎ বেপরোয়া একটি মালবাহী ট্রাক চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়।
তবে দুর্ঘটনার সময় মায়ের পেটের ওপর দিয়ে মালবাহী ট্রাকের চাকা চলে গেলেও অলৌকিকভাবে মায়ের গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ঠ হয় ফুটফুটে এক নবজাতক। জন্মের সময় নবজাতকের ডান হাতের দুইটি হাড় ভেঙে যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতা তাৎক্ষণিক ওই নবজাতককে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এরপর তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়। শিশুটি বর্তমানে ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া এলাকার লাবিব প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক মো. শাহজাহান।
তিনি জানান, নবজাতককে সব ধরনের উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তার সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়েছে। এখন সে সুস্থ এবং ভালো আছে। তবে তার হাতের ভেঙে যাওয়া হাড় প্লাস্টার করা হয়েছে। তা সারতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।
ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের রায়মনি গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী রত্না বেগমের আরও দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের মধ্যে মা-বাবার সঙ্গে ছয় বছর বয়সী সানজিদা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দুজন হলো- দশ বছর বয়সী মেয়ে জান্নাত ও সাত বছর বয়সী ছেলে এবাদত। মা-বাবা ও বোনকে হারিয়ে এখন তারা নির্বাক, দিশেহারা স্বজনরাও। এ ঘটনায় শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছে ত্রিশালের রায়মনি গ্রামসহ পুরো উপজেলার বাসিন্দারা।
পরে উপজেলার রায়মনি গ্রামে নিজ বসত ঘরের পেছনে পাশাপাশি কবরে জাহাঙ্গীর আলম (৪০), স্ত্রী রত্না বেগম (৩২) এবং তাদের ছয় বছরের মেয়ে সানজিদাকে দাফন করা হয়।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এনএস