তফসিল ঘোষণার পর সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির
১৮ জুলাই ২০২২ ১৯:৩৭ | আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২২ ২২:৫৮
ঢাকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টি। একইসঙ্গে দলটির পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের তত্ত্বাবধানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে। দলটি বলছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, অর্থ, তথ্য ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
সোমবার (১৮ জুলাই) বিকেলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দলটির ১০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে ইসি কমিশনার মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতান, আনিছুর রহমান ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান এবং সচিব হুমায়ুন কবির খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপুসহ ১০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে।
সাইফুল হক বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের সম্মান, মর্যাদা ও দায়িত্ব ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। দেশের নাগরিকদের ভোটের অধিকার রক্ষায় দৃঢ় ভূমিকা গ্রহণ না করে ভোটের অধিকার হরণে নির্বাচন কমিশন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকারি দলের সহযোগীর ভূমিকা পালন করে এসেছে।
আরও পড়ুন- নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি খেলাফত মজলিসের
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন আর ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বরের ভোট আগের রাতেই অনেকটা সম্পন্ন করে নির্বাচনের নামে দুনিয়ার নির্বাচনি ইতিহাসে এক নজিরবিহীন তামাশা মঞ্চস্থ করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, এসব অপরাধের জন্য ভবিষ্যতে গত নির্বাচন কমিশনকে বিচারের কাটগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এই নেতা বলেন, বিদ্যমান দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে নিরাপদে ভোটারদের নিজেদের পছন্দের দল বা প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের কিছু এখতিয়ার ও ক্ষমতা থাকলেও প্রকৃত প্রস্তাবে বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন জেলা প্রশাসক, এসপি, ওসিসহ স্থানীয় প্রশাসন। তাদের পক্ষে সরকার ও সরকারি দলের নির্দেশনা ও পরামর্শের বাইরে স্বাধীনভাবে কাজ করা সম্ভব নয়। এ কারণে আমরা মনে করি, দেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা প্রয়োজন। কারণ আরেকটি ব্যর্থ নির্বাচনের দায় দেশের মানুষ নিতে পারবে না।
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে সাইফুল হক বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোট নেওয়ার ব্যাপারে আপনাদের মাত্রাতিরিক্ত তৎপরতায় এরই মধ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে আপনাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আপনারা সরকারি দলের হয়ে কাজ করছেন কি না, জনগণের মধ্যে এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন- বিএনপি না এলেও নির্বাচন করব: সিইসি
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সব বিরোধী রাজনৈতিক দল যেখানে অনেকগুলো যৌক্তিক কারণে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং জনগণের বড় অংশ যেখানে ইভিএমকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে গ্রহণ করতে পারছে না এবং এই পদ্ধতিকে ডিজিটাল কারচুপির বাক্স মনে করছে, সেখানে ইভিএম চালু করতে আপনাদের আগ্রহ শুরুতেই দুঃখজনকভাবে আপনাদেরকে সরকারি দলের পদভুক্ত করে ফেলছে। নির্বাচন ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনই যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ, সেখানে ইভিএম ইস্যু আপনাদের নিরপেক্ষতাকেও গুরুতর প্রশ্নের মুখোমুখি করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি চালুর সব তৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার।
সাইফুল হক বলেন, সদ্য সমাপ্ত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আপনাদের নৈতিক পরাজয় ঘটেছে। শেষ দিকে এসে যেভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে তা ইভিএম ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকে বিতর্কিত করেছে। সর্বোপরি নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে সরকার দলীয় সংসদ সদস্যকে নির্বাচনি এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ কার্যকর করতে না পারা আপনাদের বড় ব্যর্থতা হিসাবেই চিহ্নিত হয়েছে। এই প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে— যেখানে আপনারা একজন সংসদ সদস্যের ঔদ্ধত্য মোকাবিলা করতে পারলেন না, সেখানে কীভাবে জাতীয় নির্বাচনের সময় একটি আগ্রাসী দলীয় সরকারের জবরদখল আর স্বেচ্ছাচারিতা মোকাবিলা করবেন?
সারাবাংলা/জিএস/টিআর