Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘প্রাথমিকভাবে ১ ঘণ্টা লোডশেডিং, ঘাটতি না কমলে ২ ঘণ্টা’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৮ জুলাই ২০২২ ১৭:৪২ | আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২২ ২১:০০

ঢাকা: জ্বালানি তেলে লোকসান কমাতে দেশের ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্তের ফলে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দেবে। যে কারণে প্রাথমিকভাবে এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিদুৎ, জ্বালানি ও খনিজসস্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, প্রাথমিকভাবে আমরা এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেব। এতে ঘাটতি না কমলে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হবে। সোমবার (১৮ জুলাই) সচিবালয়ে বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরা আগামীকাল থেকে শুরু করব। প্রাথমিকভাবে এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেব। পিক এবং অফপিক আওয়ারেও দেখব। এভাবে এক সপ্তাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করব। লোডশেডিং দেওয়ার আগে ওই এলাকায় মাইকিং করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখব, যদি এক ঘণ্টা লোডশেডিং দিলে কভার হয়, তাহলে এটাই বহাল থাকবে। না হলে আরেক ঘণ্টা বাড়িয়ে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং দেওয়া হবে। তবে আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব শিল্প-কারখানায়। সেখানে আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেব। সন্ধ্যা আটটার পর সব দোকান-পাট বন্ধ রাখা হবে। যদি কেউ খোলা রাখে তবে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আরও চেষ্টা করছি কীভাবে অন্যখাতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী করা যায়।’

বিদ্যুৎ, গ্যাস খাতের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দাবি করতে পারি সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে স্বল্পতা, মূল্য বৃদ্ধি প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। মূল কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের কারণে ইউরোপে তীব্রভাবে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ২৩০০ এমএফসি গ্যাস নিজস্ব উৎস থেকে ব্যবহার করতাম। গত তিন বছর আগেও ২৭০০ এমএফসি পেতাম। যা কমে এখন ২৩০০ এমএফসিএফে পৌঁছেছে। আমরা ড্রিলিং করে ১৯০০ এমএফসিএফ এর মতো পাচ্ছি। বাকি গ্যাস প্রায় সাড়ে ৮০০ এমএফসিএফ আমদানি করতাম। এর মধ্যে ৫০০ এমএফসিএফ গ্যাস আমরা দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে আমদানি করি। যা তেলের দামের বাড়া কমার সঙ্গে সমন্বয় করে কেনা হয়। কাতার এবং ওমানের সঙ্গে ১৫ বছরের এরকম চুক্তি রয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘৪৫০ এমএফসিএফ গ্যাস আমদানি করা হয় স্পট মার্কেট বা খোলাবাজার থেকে। গত বছরের প্রথম দিক থেকে খোলাবাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে ছিল। যে কারণে নিজস্ব উৎস, খোলাবাজার এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এই তিনটাকে ব্যালেন্স করে চলেছি। সরকার সে সময় গ্যাস ও বিদ্যুতে ভর্তুকি দিত। কিন্তু তার পরিমাণ ও এখনকার পরিমাণ অনেক ব্যবধান হয়েছে। কারণ খোলাবাজারে গ্যাসের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। যে কারণে গত এপ্রিলে খোলাবাজার থেকে গ্যাস আমদানি বন্ধ রেখেছি।’

নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপাতত খোলাবাজার থেকে এই দামে গ্যাস কিনব না। কিনলে যে পরিমাণে ভতুর্কি সরকারকে দিতে হবে তাতে অস্বাভাবিক একটা মূল্য দাড়াবে। যে কারণে আমরা মনে করছি, গ্যাসভিত্তিক যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ছিল সেখানে কীভাবে রেশনিং করা যায়। আরেকটা বিষয়, তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা কিছু তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মোট ১১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসতো এসব কেন্দ্র থেকে। বন্ধ রাখার ফলে ১ থেকে ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দেবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে ইউরোপের দেশগুলোও নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। অনেক দেশ রেশনিং শুরু করেছে। কিছু কিছু দেশ দাম সমন্বয় করেছে। এ পরিস্থিতে দেখা যাচ্ছে এশিয়া ও ইউরোপের অনেক দেশে।’ তিনি বলেন, ‘একটা ক্রাইসিস মোমেন্ট যাচ্ছে। এটা চিন্তা করে আমরা সাশ্রয়ী হই। যানবাহন কম ব্যবহার করলে তেল আমদানি কমবে। রিজার্ভের ওপরে চাপ কিছুটা কম পরবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ভার্চুয়ালি বৈঠক করি তাতে যানবাহনে জ্বালানি সাশ্রয়ী হবে। কারণ আমরা যে পরিমাণ ডিজেল আমদানি করি তার ১০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। বাকিটা যানবাহনে। এই জায়গায় যদি সাশ্রয় করতে পারি তাহলে কিছুটা হলে আমদানিতে চাপ কমবে।’

এ সময় সরকারের এই সিদ্ধান্তকে গ্রাহকদের ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে অনুরোধ জানান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। তিনি সবাইকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘এই পরিস্থিতি সাময়িক।’

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

১ ঘণ্টা প্রাথমিকভাবে লোডশেডিং

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর