‘শেখ হাসিনার সন্ত্রাসী পরিকাঠামোর অংশ নির্বাচন কমিশন’
১৮ জুলাই ২০২২ ১৩:২৬ | আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২২ ১৪:৪৯
ঢাকা: ‘শেখ হাসিনার সন্ত্রাসী পরিকাঠামোর অংশ নির্বাচন কমিশন’- এমনটিই মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সোমবার (১৮ জুলাই) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া এবং গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
রিজভী বলেন, ‘যে নির্বাচন কমিশন সন্ত্রাসকে উসকে দেয়, ভোটের আগেই যে নির্বাচন কমিশন আতঙ্ক তৈরি করে, তলোয়ার এবং রাইফেলকে প্রশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা করে, সেই নির্বাচন কমিশন যে ভয়ংকরভাবে ভোটবিরোধী কর্মকাণ্ড করবে এবং ভোট যাতে না হয়, সেই জন্য গ্রামে গ্রামে ভোটারদের ভয় পাইয়ে দেবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যে সন্ত্রাসের পরিকাঠামো শেখ হাসিনা তৈরি করেছেন, সেই পরিকাঠামোর অংশই হচ্ছে নির্বাচন কমিশন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম- এই নির্বাচন কমিশন শেখ হাসিনার একটা অনুগত রাভারস্ট্যাম্প। তারা শেখ হাসিনার নিজস্ব কৃতদাস হিসেবে কাজ করছে- প্রত্যেকটি ঘটনায় সেটাই তারা প্রমাণ করছেন। উনি (সিইসি) বলেছেন, ‘কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে নামেন, তাহলে রাইফেল নিয়ে নামবেন’। দেশের সাংবিধানিক একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কি এটা বলতে পারেন?’
রিজভী ভলেন, ‘যত অবৈধ বন্দুক, রাইফেল- সব তো আওয়ামী লীগের হাতে। আর সাধারণ ভোটাররা তো তলোয়ার রাইফেল- কিছুই নিয়ে যায় না। তারা তাদের অধিকারটা প্রতিষ্ঠা করতে যায়। সেই অধিকারটা প্রতিষ্ঠা করা অর্থাৎ শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যায়। কোনো ভোটার রাইফেল আর তলোয়ার নিয়ে যায় না।’
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার, আপনার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই প্রমাণ হচ্ছে যে, আপনি হলেন শেখ হাসিনার মানসিক সন্তান। প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য বানিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগকে একটা টেরর দল, সন্ত্রাসী দল বানিয়েছেন এবং তিনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাদের বসিয়েছেন, তারা তার মনেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন, তিনি যা চান সেটাই তারা করছেন’- বলেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘এ কথাটা কেন আসবে যে, তলোয়ার নিয়ে নামলে রাইফেল নিয়ে নাববেন। আপনি তো সাংবিধানিক দায়িত্বে রয়েছেন। নির্বিঘ্নে, নিশ্চিন্তায় মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব তো নির্বাচন কমিশনের। যতটুকু ক্ষমতা আছেন নির্বাচন কমিশনের, তাতেই এটা করা সম্ভব। কিন্তু আপনিতো… যেদিন আপনাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেদিন থেকেই গোটা জাতি জানে যে, আপনি বর্তমান অবৈধ সরকারের অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর নীলনকশা বাস্তবায়ন করবেন।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘এর আগে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচন করেছেন আর ও ২০১৮ সালে মিডনাইট নির্বাচন করেছেন। আর এবার অন্য ধরনের পরিকল্পনা আপনাদের আছে। এই পরিকল্পনা বাস্তায়নে প্রধান কুশিলব হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তার আলামত আমরা দেখতে পাচ্ছি ইভিএম নিয়ে যে কথাবার্তা হচ্ছে তার মধ্যে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সবাই বলছে এটা একটা নিকৃষ্ট যন্ত্র। যারা এটার বিষয়ে গবেষণা করেছেন, যারা এটা নিয়ে কাজ করেছেন, তারা সবাই বলছেন এটা বাতিল যন্ত্র। কিন্তু বার বার আপনি এটাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসছেন কেন?
তিনি বলেন, ‘বিএনপি স্থির সিদ্ধান্ত নিয়েছে- আপনার কোনো আমন্ত্রণে বিএনপি সাড়া দেবে না। কারণ, সবাই জানে পর্দার অন্তরাল থেকে শেখ হাসিনা যে বিবৃতিটি দিয়েছেন তার বাইরে নির্বাচন কমিশন যেতে পারবে না। সুতরাং একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ছাড়া শেখ হাসিনার সরকার এবং এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
জাপান বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর রেজাউল করিম রেজার সভাপতিত্বে এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য (দপ্তরের সংযুক্ত) আবদুস সাত্তার পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের সাবেক সহ–সভাপতি আলী আকবর চুন্নু, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব খন্দকার এনামুল হক এনাম স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ডা. জাহিদুল কবির, সহ–সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন সেন্টু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বাবুল সারেং, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সদস্য হোসেন হায়দার, ছাত্রদলের সাবেক পাঠাগার সম্পাদক মেহেদী হাসান, ছাত্রদলের সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. তৌহিদ আউয়াল, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী নিলুফা ইয়াসমিন নিলু, জাপান বিএনপি নেতা ফয়সাল সালাউদ্দিন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ক্রসফায়ারে নিহত মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুর মোর্শেদ শিপু, খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনি, নিউমার্কেট থানা ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমান বাপ্পি, বিএনপি নেতা সানাউল্লাহ সানা, গুমের শিকার সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টু, সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সম্রাট মোল্লা, সুত্রাপুর থানা ছাত্রদল নেতা খালেদ হাসান সোহেল, বংশাল থানা ছাত্রদলের নেতা পারভেজ রেজা, বংশাল থানা ছাত্রদল নেতা চঞ্চল হোসেন, সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাহবুব হাসান সূজন, বংশাল থানা ছাত্রদলের সহ–সাধারণ সম্পাদক সোহেল (চাচা সোহেল), পল্লবী থানা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক তরিকুল ইসলাম তারা, মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাবেক সহ–সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মিলন, বিমানবন্দর থানা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নিজামুদ্দিন মুন্নার পরিবারকে ঈদ উপহার দেওয়া হয়। এছাড়া মহিলা দলের নেত্রী সালমা আক্তার কাজলকেও ইদ উপহার দেওয়া হয়।
সারাবাংলা/এজেড/এএম