৫ মন্ত্রণালয়কে ইসির অধীনে চায় ইসলামী ফ্রন্ট
১৮ জুলাই ২০২২ ১৩:১৫ | আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২২ ১৫:১৮
ঢাকা: বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব এম এ মতিন বলেন, নির্বাচনকালীন স্থানীয় সরকার, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়— এ ৫টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে সাংবিধানিক পন্থায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে। উল্লেখিত মন্ত্রণালয়গুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করা না হয় তবে কখনো নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে না। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করে কেবল স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যেতে পারে।
সোমবার (১৮ জুলাই) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সংলাপে অংশ নিয়ে দলটির মহসচিব এম এ মতিন এ সব কথা বলেন।
পট্রদান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সভাপতিত্বে সভায় চার কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ১১ সদস্য প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মান্নান, মহসচিব মাওলানা এম এ মতিন, প্রেসিডিয়াম সদস্য সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী হারুন, অধ্যক্ষ আহমেদ হোসাইন আলকাদেরী, মহাসচিব অধ্যক্ষ আবু জাফর মুইনুদ্দিন প্রমুখ।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব এম এ মতিন বলেন, ‘৯০ দশক হতে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে রূপরেখা ও কর্মকাণ্ড জাতির সামনে প্রকাশ হয়েছে তাতে আমাদের পূর্বানুমানই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। নিরপেক্ষ, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পাদনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি যে স্থায়ী সমাধান নয় তা এরইমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। তাই ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠার পর হতে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। অবশ্য স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন পাস করা হলেও আমরা মনে করছি— এ আইনে নির্বাচন কমিশনের হাত পা বেঁধে রাখা হয়েছে নির্বাচনকালীন সময়ে স্থানীয় সরকার, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়— এ ৫টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে সাংবিধানিক পন্থায় জানার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি উল্লেখিত মন্ত্রণালয়গুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করা না হয় তবে কখনো নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে না। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। অর্থাৎ কার্যকরণে এ কমিশন পরাধীন।’
তিনি বলেন, ‘একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনকল্পে আবারও পুনর্ব্যক্ত করছি তা হচ্ছে— জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে একজন চৌকস নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাকে রিটার্নিং অফিসার পদে নিয়োগ দিতে হবে। প্রিসাইডিং অফিসারকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় যে কোনো অভিযোগ দ্রুত সময়ে মীমাংসা করার ক্ষমতা ন্যস্ত করতে হবে। তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তার বিধানও প্রণয়ন করতে হবে। তবে নৈতিকভাবে পদস্খলিত বা অসুদপায় অবলম্বনের অপরাধ প্রমাণিত হলে প্রিসাইডিং অফিসারকে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ নির্বাচনি দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা- কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত ভোটাধিকার প্রয়োগে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। গোপন কক্ষে বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপগ্রহণসহ ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে সি সি ক্যামেরা দ্বারা নজরদারি নিশ্চিত না করলে জনগণ সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না। পাশাপাশি জনগণের টাকা আত্মসাৎকারী কোনো ঋণখেলাপী যেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারে সে ব্যাপারে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণসহ এ ধরনের কেউ প্রার্থী হলে তার প্রার্থিতা বাতিল করতে হবে।’
এম এ মতিন বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সমন্বিত টিম গঠন করার পদক্ষেপ নেবে নির্বাচন কমিশন। এ টিম নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ যে কোনো গুরুতর অভিযোগ দেওয়া মাত্রই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথ্য প্রশাসন তা দ্রুত সময়ে যেন পদক্ষেপ নিতে পারে সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বাচাইয়ের লক্ষ্যে ‘জনতার মুখোমুখি সংসদ সদস্য প্রার্থী’ শিরোনামে উন্মুক্ত আয়োজনে প্রার্থীরা জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আলোচনার আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। এ ধরনের পর্বের মাধ্যমে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরবে।
তিনি বলেন, ‘ইভিএম মেশিনে নয় বরং স্বচ্ছ ব্যালেট পেপারের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোতে ৩৩% নারী নেতৃত্ব বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্তি সংবলিত আরপিও আইন সংশোধন করতে হবে।’
সারাবাংলা/জিএস/একে