‘লাভ নেই তো ভাই, উনারা যতই বলুক’
১৭ জুলাই ২০২২ ২০:১৫ | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২২ ২২:০৫
ঢাকা: ‘লাভ নেই তো ভাই, উনারা যতই বলুক’— প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) একটি বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (১৭ জুলাই) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের দায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন নেবে না। আমরা আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন করব।’
সিইসির এ বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘লাভ নেই তো ভাই, উনারা যতই কথা বলুক। প্রশ্নটা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে। এটাই মূল প্রশ্ন। পুরো জায়গাটা ওখানে। দেশের মানুষ চায় না যে এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন হোক বা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হোক। সে কারণেই আমরা এই কমিশনের কোনো সংলাপ, তাদের কোনো আলোচনা বা ইভিএম নিয়ে কোনো কমেন্টই করছি না।’
‘কারণ উই ডোন্ট বিলিভ, এই নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। সরকার যদি পরিবর্তন না হয়, নিরপেক্ষ সরকার যদি না আসে, এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগ তো আলোচনা করার সুযোগই রাখে নাই। তারা তো সরকারে। ড্রাইভিং সিটে স্টিয়ারিং তাদের হাতে। পুরোটা তাকেই (প্রধানমন্ত্রী) করতে হবে। দেশে যখন এই বিষয়ে একটি রাজনৈতিক বড় সংকট আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর বেশিরভাগই বলছে যে আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে চাই না, আমরা একটি নিরপেক্ষ সরকার চাই।’
‘তিনি (আওয়ামী লীগের প্রধান) তো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। বরং তিনি পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন— না, ওইভাবে নির্বাচন হবে। তাহলে আপনি সুযোগ রাখছেন কোথায়? স্পেস রাখছেন কোথায়? আপনি পলিটিক্যাল পার্টিগুলোকে স্পেস দিচ্ছেন কোথায়? মিটিং করতে গেলেই, এমনকি মিলাদ পড়তে গেলেও বাধা দিচ্ছেন পুলিশ দিয়ে। গতকালও মুন্সীগঞ্জে আমাদের একটা দোয়া মাহফিল করতে দেয়নি পুলিশ। এই সব ভণ্ডামির মানে হয় না। এটা তো হিপোক্রেসি,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নড়াইলের ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, সাম্প্রদায়িকতা কোনোমতেই এ দেশে কাম্য নয় এবং এগুলো কখনোই কোনো ভালো ফল নিয়ে আসে না এবং এটা অন্যায়। একইসঙ্গে সবাইকে অনুরোধ করব, এমন কোনো কথা না বলা বা স্ট্যাটাস না দেওয়া যেন অন্য সম্প্রদায়ের লোকেদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে।’
স্বাস্থ্য খাত ধ্বংস হয়ে গেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিজের কথা বলি, আমি গত তিন-চার দিন আগে হাসপাতালে গেলাম। আমাকে টেস্ট ধরিয়ে দেওয়া হলো ২২ হাজার টাকা। শুধু টেস্ট। অনলি ব্লাড অ্যান্ড আল্ট্রাসনোগ্রাফি। প্রতিটি হাসপাতাল আপনাকে টেস্টের ফর্দ ধরিয়ে দেবেই। এটা দেখার কেউ নেই। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ১১০টির মতো হাসপাতাল— ব্যাঙের ছাতার মতো তৈরি হচ্ছে। সেখানে কোনো টিচার নেই। বেশিরভাগ হাসপাতালে নার্স নেই, নার্সিং ইনস্টিটিউট নেই। সেগুলোর দিকে সরকারের কোনো খেয়াল নেই। যার ফলে আজকে গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে।’
শিক্ষা খাতে চরম দুরবস্থা বিরাজ করছে অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মানের শিক্ষা এখন হচ্ছে…। কলেজগুলোতে শিক্ষকদের মারছে, প্রিন্সিপালকে ধরে এমপি মারে। আজ দেখলাম এক উপজেলা চেয়ারম্যানকে এমপি নিজে মারছে। এই তো অবস্থা। দেশে টোটাল দুঃশাসন, এনার্কি শুরু হয়ে গেছে। এটাকে বলে ব্যর্থ রাষ্ট্র।’
কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত খুব সুন্দর উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আধুনিক বিশ্বে এটি রুটিন ব্যাপার, সৌজন্যবোধ। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা কথা বলি, নট ওনলি বিএনপি। আমরা সব দলের সঙ্গে কথা বলি।’
‘এটা আজকে নয় তো, বহুদিন ধরে হয়ে আসছে এটা। আওয়ামী এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি পারঙ্গম। তারা যত ধরনের মিথ্যা কথা বলে, যা কিছু করেছে, তারা ফলস চিঠিও আনিয়েছিল ইউনাইটেড ন্যাশন থেকে। তবে আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি যে, আমরা বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করি, আমরা বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ বিষয় নিয়ে কথা বলি। তার বাইরে তো আমরা কথা বলি না,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এবং সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর