আগুন লাগার পেছনে ডিপো কর্তৃপক্ষের দায় বেশি: তদন্ত কমিটি
৬ জুলাই ২০২২ ২১:০৬ | আপডেট: ৭ জুলাই ২০২২ ০৩:২৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান ও দায়দায়িত্ব নির্ধারণে গঠিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত কমিটি বলছে, ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার সুনির্দিষ্ট কারণ তারা উদঘাটন করতে পেরেছে। তবে সেই কারণ ও দায়দায়িত্ব কার- এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো জবাব দেয়নি কমিটি। সবার দায় আছে- এমন মন্তব্য করে তদন্তে পাওয়া তথ্য আড়াল করেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির সদস্যরা বুধবার (০৬ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। দুর্ঘটনার পর মোট ছয়টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের গঠিত কমিটি গত ৪ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সর্বশেষ বিভাগীয় কমিশনারের গঠিত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিল।
বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর উপস্থিত সাংবাদিকরা কমিটির প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। তবে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে কারণ জানাতে রাজি হননি। বিভাগীয় কমিশনারও প্রতিবেদন পড়ার আগে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে কমিটি হয়েছে। আমরা এই প্রতিবেদন সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেব।’
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা তদন্তে একেবারে সুনির্দিষ্ট কারণ অনুসন্ধান করেছি। সেটি নিয়ে চার পৃষ্ঠার প্রতিবেদন আছে। এখন কারণগুলো ব্যাখা করতে গেলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। অযথা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হবে।’
অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের দায় আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ঘরে আগুন লাগলে তো আমার দায় সবচেয়ে বেশি। আমি দরজা খুলে রেখেছিলাম কি না, সুইচ বন্ধ করেছিলাম কি না- সেটি তো আমাকেই নিশ্চিত করতে হবে। তবে প্রতিবেশীদেরও দায় আছে। এক্ষেত্রে আমি বলব- আমাদের সবার দায় আছে।’
তদন্ত কমিটির প্রধান জানান, কমিটি মোট ২৪ জনের বক্তব্য গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে পাঁচজন প্রত্যক্ষদর্শী। ডিপোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ও পরিচালক মুজিবুর রহমানসহ আরও ১৯ জনের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবেদন নেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস, ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক অধিদফতর, শ্রম অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতর এবং নৌ পরিবহন অধিদফতর।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা ডিপোর অন্যতম মালিকপক্ষ স্মার্ট গ্রুপের মালিকানাধীন রাসায়নিক কারখানা হাটহাজারী উপজেলা আল রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে- যেসব কনটেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, সেগুলো আল রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্সে উৎপাদিত রাসায়নিক হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বোঝাই ছিল। সেগুলো রফতানির জন্য রাখা হয়েছিল।
বিএম ডিপোর নির্বাহী পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল হায়দার ও মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) নাজমুল আকতার খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দিলেও তারা হাজির হননি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাহী পরিচালক বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন বলে কমিটি জানতে পেরেছে। আর মহাব্যবস্থাপক মামলায় আসামি হওয়ার পর পলাতক আছেন বলে জানা গেছে।
ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কমিটিকে। কমিটির প্রতিবেদনে ২০টি সুপারিশ রাখা হয়েছে জানিয়ে মিজানুর বলেন, ‘আমরা দুর্ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়েছি এবং কারা এর জন্য দায়ী তা নির্ধারণের চেষ্টা করেছি। এটাকেই চূড়ান্ত বলা যাবে না। এ ঘটনায় বৃহত্তর তদন্তও হতে পারে।’
গত ৪ জুন দিবাগত রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এরপর সেখানে কয়েক দফা বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫১ জনের মৃত্যুর খবর প্রশাসন নিশ্চিত করেছে। প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ১০৭ জন। আহত-দগ্ধ অনেকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের অধিকাংশই ডিপো শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, ফায়ার সার্ভিসকর্মী, বিভিন্ন ট্রাক-কভার্ড ভ্যানের চালক, হেলপার এবং পুলিশ সদস্য।
আরও পড়ুন
বিএম ডিপো থেকে আরও হাড়গোড় উদ্ধার
৮৬ ঘণ্টা পর নিভল বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুন
বিএম ডিপোতে আগুন: ৫ দিনের মাথায় মামলা, আসামি ৮
বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুন-বিস্ফোরণ তদন্তে ৬ কমিটি
বিএম কনটেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মজুতের অনুমতি ছিল না
সারাবাংলা/আরডি/একে