Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তদন্ত কর্মকর্তা মাগুরায়, বাবুলের ২ সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদ সোমবার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩ জুলাই ২০২২ ২১:২৩ | আপডেট: ৪ জুলাই ২০২২ ১০:১৪

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নানা আইনি জটিলতা পার করে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের দুই সন্তানকে তাদের মা মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের চূড়ান্ত উদ্যোগ নিয়েছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আগামীকাল সোমবার (৪ জুলাই) মাগুরায় বাবুলের বাবার বাড়িতে শিশু আইন অনুসরণ করে তার ছেলে ও মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক মাগুরায় অবস্থান করছেন।

বিজ্ঞাপন

বাবুলের দুই সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তে আরও গতি ফিরবে বলে মনে করছেন পিবিআই কর্মকর্তারা।

রোববার (৩ জুলাই) সন্ধ্যায় পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পুলিশ সুপার কাজী নাইমা সুলতানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামীকাল (সোমবার) আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা মাগুরায় বাবুল আক্তারের বাবার বাসায় যাবেন। সেখানে বাবুল আক্তারের ছেলে ও মেয়ে আছেন। আদালতের নির্দেশে সমাজসেবা অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা ও একজন নারী পুলিশ সদস্য এবং তাদের দাদার উপস্থিতিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের মামলা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। এক্ষেত্রে শিশু আইন অনুসরণে আদালতের নির্দেশনা অবশ্যই প্রতিপালন করা হবে। দেখা যাক, জিজ্ঞাসাবাদে কী কী তথ্য পাওয়া যায়।’

কারাবন্দি বাবুল আক্তারের ছেলের বয়স এখন ১৩ বছর এবং মেয়ের ৯ বছর। বাবুল কারাগারে যাবার পর থেকে তারা মাগুরায় দাদার বাড়িতে আছে। বাবুলের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক।

আরও পড়ুন-

বাবুল আক্তারের ছেলের বয়স যখন সাত বছর, তার সামনেই মা মাহমুদা খানম মিতুকে নির্মমভাবে খুন করা হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তাকে গত একবছর ধরে জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পিবিআই। কিন্তু নানা আইনি জটিলতায় আদালতের একাধিকবার নির্দেশের পরও বাবুলের দুই সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পায়নি তদন্ত সংস্থা।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ১৩ জুন বাবুল আক্তারের ছেলে ও মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চট্টগ্রাম নগরীতে পিবিআই কার্যালয়ে হাজিরের জন্য চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন করেছিলেন তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। আদালত তাদের ১৫ দিনের মধ্যে হাজিরের জন্য বাবুল আক্তারের বাবা ও ভাইকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ওই সময় বাবুলের আইনজীবী এ নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে শিশু আইন অনুসরণ করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের দ্বারস্থ হন। ৩০ জুন আদালত শিশু আইন কঠোরভাবে অনুসরণ করে মাগুরায় গিয়ে দুই সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।

এরপর চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি মিতু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাদের ১৫ দিনের মধ্যে নিজের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তার হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশের বিরুদ্ধে দুই শিশুর হেফাজতকারী হিসেবে বাবুলের চাচা অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান লাভু মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারি রিভিশন দায়ের করেন। এতে দুই শিশুকে মাগুরায় গিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের আরজি জানানো হয়। আদালত গত ১৬ মার্চ  শিশু আইনের ধারা কঠোরভাবে অনুসরণ করে সতর্কতার সঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের চট্টগ্রামে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন বলে আদেশ দেন।

এ আদেশের পর তদন্ত কর্মকর্তা মাগুরা ও ঢাকার মোহাম্মদপুরে গিয়ে দুই শিশুর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর আবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন হাবিবুর রহমান লাভু। তবে সেটি নাকচ হয়েছে বলে পিবিআই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

হত্যাকাণ্ডের পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন। নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পিবিআইয়ের ওপর। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার।

২০২১ সালের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের লক্ষ্যে ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই।

একইদিন (১২ মে) দুপুরে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আট জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন— মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া।

মামলা দায়েরের সময় মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেছিলেন, চার বছর ধরে তাদের সঙ্গে মিতুর ছেলেমেয়েদের কোনো যোগাযোগ নেই। তারা নাতি-নাতনির মুখও দেখতে পারছেন না। বাবুল আক্তার ও তার পরিবারের সদস্যরা ইচ্ছাকৃতভাবে মিতুর ছেলেমেয়েদের তাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন।

তবে মোশাররফ হোসেনের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সেটি নিষ্পত্তি করেছে পিবিআই। আদালতের নির্দেশে এখন কেবল বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত চলছে। ওই মামলাতেই বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

এসপি বাবুল এসপি বাবুল আক্তার টপ নিউজ বাবুলের সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ মাহমুদা খানম মিতু মিতু হত্যা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর