চট্টগ্রামে রথযাত্রায় লাখো মানুষের ঢল
১ জুলাই ২০২২ ২০:১৪ | আপডেট: ২ জুলাই ২০২২ ০০:১৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় আয়োজন জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উপলক্ষে চট্টগ্রামে লাখো মানুষ সমাগম ঘটেছে। নানা শ্রেণি-পেশার বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর নেচে গেয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দুই বছর বন্ধ থাকার পর এবার আবারও রথযাত্রার আয়োজন করা হয়। লোক সমাগম ছিল আগের চেয়ে অনেক বেশি।
শুক্রবার (১ জুলাই) বিকেলে নগরীর প্রবর্তক মোড় থেকে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের আয়োজনে রথযাত্রা উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের হয়। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ রথযাত্রার উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবগুলো বাঙালি সংস্কৃতির অংশে পরিণত হয়েছে। রথযাত্রাও বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি নয়মাস যুদ্ধ করে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান থেকে বের হয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন করেছিল। কেউ স্বীকার করুক বা না করুক, ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছিল সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে। হিন্দুদের জন্য একটি রাষ্ট্র ও মুসলমানদের জন্য একটি রাষ্ট্র।’
বর্তমান সরকার রাষ্ট্রের মূল চরিত্র ফিরিয়ে আনার কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌরদাস ব্রহ্মচারীর সভাপতিত্বে ও রথযাত্রা উদযাপন কমিটির মিডিয়া সমন্বয়ক বিপ্লব পার্থের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- ইসকন বিভাগীয় কমিটির সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণমন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, চসিক কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর, নীলুনাগ ও রুমকি সেনগুপ্ত, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য্য ও সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বলসহ অনেকে।
শোভাযাত্রা প্রবর্তক থেকে শুরু হয়ে মেহেদীবাগ, আলমাস মোড়, কাজির দেউড়ি, জামালখান, চেরাগি পাহাড় হয়ে নন্দনকাননে গিয়ে শেষ হয়। অন্যদিকে একইসময়ে কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উৎসব উদযাপন কমিটির উদ্যোগে শুক্রবার বিকেলে নগরীর নন্দনকানন তুলসীধাম মন্দির থেকে আরেকটি শোভাযাত্রা বের হয়।
এই শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন। উদ্বোধনী বক্তব্যে রাজীব রঞ্জন বলেন, ‘রথযাত্রায় মানুষের মিলনমেলা দেখে আমি অভিভূত। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের আত্মার সম্পর্ক। ভূতাত্ত্বিক সীমানা আত্মার সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে না। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক কখনও ছিন্ন হবে না। সব ধর্ম-বর্ণের মানুষকে সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে।’
কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি রঞ্জন প্রসাদ দাশগুপ্তের সভাপতিত্বে ও অনুপম দেবনাথের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- তুলসীধামের মোহন্ত দেবদীপ পুরী, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামদাশ ধর, চমেক হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিনয় পাল, অধ্যাপক প্রণব মিত্র চৌধুরী, চসিক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, শৈবাল দাশ সুমন, পুলক খাস্তগীর ও রুমকি সেনগুপ্ত, তুলসীধাম পরিচালনা পরিষদের সভাপতি স্বপন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক প্রণত মিত্র চৌধুরী।
বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে চট্টগ্রাম মহানগরী ও আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লাখো মানুষ শোভাযাত্রায় অংশ নেন। হাতির পিঠে চড়ে, ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে, ট্রাক- কাভার্ড ভ্যানে দেবদেবীর মূর্তি নিয়ে ও বাদ্যবাজনা বাজিয়ে লোকজন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
হাজার হাজার মানুষ সড়কের দুইপাশে দাঁড়িয়ে রথযাত্রার রশি টেনে একাত্মতা প্রকাশ করেন। নারীরা উলুধ্বনি ও মঙ্গলশাঁখ বাজিয়ে রথযাত্রাকে অভ্যর্থনা জানান। শোভাযাত্রায় পৌরাণিক সাজের মাধ্যমে আবহমান বাংলার ও বৈদিক সংস্কৃতির চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়।
আগামী ৮ জুলাই উল্টো রথযাত্রার মধ্য দিয়ে এ উৎসবের সমাপ্তি হবে।
সারাবাংলা/আরডি/এমও