বাজেট পাস
৩০ জুন ২০২২ ২১:০৩ | আপডেট: ৩০ জুন ২০২২ ২১:৫০
ঢাকা: কর দিয়ে বিভিন্ন সময়ে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব বহাল রেখে জাতীয় সংসদে পাস হলো ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই বাজেটের শিরোনাম দিয়েছেন ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন।’
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) রাত পৌনে ৯টার দিকে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার এই বাজেট পাস হয়েছে। এদিন বিকেল ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।
এর আগে, গতকাল বুধবার (২৯ জুন) সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে স্পিকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেট অধিবেশনে অর্থবিল কণ্ঠভোটে পাস করা হয়। বাজেট বিলে ১৭টি সংশোধনী গৃহীত হলেও সেগুলো মূলত ভাষাগত পরিবর্তন। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে তেমন কোনো সংশোধনী আনা হয়নি।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে আলোচিত ছিল দেশ থেকে পাচার করা অর্থ-সম্পদ কর দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাবটি। বুধবার পাস হওয়া অর্থবিলে বাজেট প্রস্তাবনা থেকে এই ধারায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। সংশোধনীতে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেশে আনার প্রস্তাব বাতিল করা হয়। শুধু নির্ধারিত হারে কর দিয়ে পাচার করা নগদ টাকা দেশে আনার বিধান বহাল রাখা হয়।
সম্পদ পাচারের বিষয়ে একটি শর্তও যোগ করা হয় বাজেটে। তাতে বলা হয়— দেশের বাইরে কারও সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেলে সেই সম্পদ অর্জনের উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে। সন্তোষজনক জবাব পাওয়া না গেলে ওই সম্পদের মূল্যের সমপরিমাণ জরিমানা অথবা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে।
বুধবার অর্থবিল পাস হওয়ার সময় সংসদে সরকার ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। অর্থবিল-২০২২ জনমত যাচাইয়ের জন্য যেসব প্রস্তাব আসে, সংসদ সদস্যদের কণ্ঠভোটে তা নাকচ হয়ে যায়।
পাস হওয়া বাজেটে সরকার আগামী অর্থবছর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, কর্মসংস্থান বাড়ানো, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছে। এ জন্য বাজেটে দিকনির্দেশনা রয়েছে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে চলতি অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় আগামী বাজেটেও করপোরেট করে গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এই বাজেট চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। বাজেটে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। বাজেটে পরিচালন বা আবর্তক ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৩ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশ।
এবারের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এডিপি’র আকার ছিল দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে দুই লাখ ৯ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
আগামী অর্থবছরে জন্য জিডিপি’র আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে, আগামী অর্থছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
গত ১৩ জুন সম্পূরক বাজেট পাসের পর ১৪ জুন থেকে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ২৯ জুন এই আলোচনা শেষ হয়। প্রায় ৩৯ ঘণ্টার এ আলোচনায় সরকার ও বিরোধী দলের মোট ২২৮ জন সংসদ সদস্য অংশ নেন। বৃহস্পতিবার রাতে বাজেট পাস হওয়ার মধ্য দিয়ে এই অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন স্পিকার।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট টপ নিউজ বাজেট ২০২২-২৩ বাজেট পাস সংসদ অধিবেশন