বন্যায় সাড়ে ৬ লাখ হেক্টর ফসল আক্রান্ত, বাড়ছে প্রণোদনা
২৯ জুন ২০২২ ১০:৪৯
ঢাকা: বন্যায় দেশের ২০ জেলায় বিভিন্ন ফসলের সাড়ে ৬ লাখ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। আর পানিতে একেবাইরে তলিয়ে গেছে দেড় লাখ হেক্টরের বেশি জমি। এতে চলতি মৌসুমের আউশ ধানের উৎপাদন অনেকাংশেই কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুধু আউশ নয়, আমন ধানের বীজতলাও আক্রান্ত হয়েছে বন্যার পানিতে। এজন্য দ্বিতীয়বার বীজতলা তৈরির পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। বিভিন্ন যায়গায় ভাসমান বীজতলাও তৈরি হচ্ছে।
এদিকে, বন্যার কারণে এবার কৃষকদের প্রণোদনার পরিমাণ বাড়ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদতর সূত্রে জানা গেছে, বীজ ও বিভিন্ন উপকরণে ২২ কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়া হতে পারে।
জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, সারাদেশে ৭৫ হাজার হেক্টরের বেশি আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে। তবে এতে তেমন ক্ষতি হবে না। আমরা সেটি পুষিয়ে নিতে পারব।
বেনজীর আলম বলেন, আমাদের কৃষি জলবায়ুর পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল। কৃষকরাও সেটি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কুড়িগ্রামের কৃষক তিন ধাপে বীজতলা তৈরি করে। একবার নষ্ট হয়ে গেলে দ্বিতীয় ধাপের বীজতলা দিয়ে ফসল ফলানোর চেষ্টা করে। দ্বিতীয় ধাপে নষ্ট হলে তৃতীয় ধাপ। অর্থাৎ কৃষক ফসলের এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এই কর্মকর্তা বলেন, ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে, এটিকে স্বাভাবিক বন্যাই বলা যায়। তবে কিছু জেলায় ঘর-বাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফসল নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কৃষকদের আমরা উচ্চফলনশীল জাত দেওয়ার চেষ্টা করছি।
কৃষকদের প্রণোদনা প্রসঙ্গে বেনজীর আলম বলেন, প্রতিবছরই আমরা প্রণোদনা দিয়ে থাকি। এ বছরও প্রণোদনা দেওয়া হবে। প্রণোদনায় আগে ১৭ কোটি টাকার মতো বরাদ্দ ছিল। এবার বাড়িয়ে ২২ কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়া হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের তথ্য বলছে, দেশের ২০ জেলায় বন্যায় বিভিন্ন ফসলের ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৭৯০ হেক্টর আবাদি জমি আক্রান্ত হয়েছে। নিমজ্জিত হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৫৩৭ হেক্টর জমি। আক্রান্তের হার ২৫ শতাংশ। বিভিন্ন ফসলের মধ্যে আউশ ধানের আক্রান্ত জমির পরিমাণ ৮১ হাজার ১২ হেক্টর, রোপা আমনের বীজতলা ১ হাজার ৬১ হেক্টর, বোনা আমনের ৩০ হাজার ১৩৬ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন সবজির পরিমাণ ১৫ হাজার ৭২৩ হেক্টর ও অন্যান্য ফসলের জমির পরিমাণ ৩৩ হাজার ৬০৫ হেক্টর।
বন্যায় আক্রান্ত জেলাগুলো হলো— কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ।
বন্যায় আক্রান্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে আউশ ধান, আমনের বীজতলা, বোনা আমন, গ্রীষ্মকালীন সবজি, পাট, ভূট্টা, চীনাবাদাম, তিল, মরিচ, কলা, পেঁপে, আম, তিল ও আখ। এর মধ্যে কুড়িগ্রামে আক্রান্তের হার ৫১ শতাংশ, সুনামগঞ্জে ৮৮ শতাংশ, সিলেটে ৬৭ শতাংশ, হবিগঞ্জে ৪৪ শতাংশ, মৌলভীবাজারে ২৪ শতাংশ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ শতাংশ, বগুড়ায় ১০ শতাংশ ও সিরাজগঞ্জে আক্রান্তের হার ২৫ শতাংশ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, সারাদেশে এ মৌসুমে ১৩ লাখ ৯ হাজার হেক্টর আউশ আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এবার ১২ লাখ হেক্টর পর্যন্ত আবাদ করা যাবে। আর এ বছর আমন আবাদের লক্ষ্য ৫৯ হাজার হেক্টর।
এদিকে, আমন ধানের উৎপাদন যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দেশে আমন একটি বড় ফসল, যেখান থেকে বছরে ১ কোটি ৫০ লাখ টনের মতো চাল উৎপাদন হয়। এখন রোপা আমনের বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বন্যা আর না বাড়লে বীজতলা তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তবে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমনের বীজতলা তৈরির জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যেসব বীজতলা করা হয়েছে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আবার করা হবে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত বীজ সংরক্ষিত আছে, সেগুলো চাষিদের দেওয়া হবে। অন্যদিকে, বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে নাবী জাতের (লেইট ভ্যারাইটি) ধান চাষের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক সারাবাংলাকে বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি, কী হয়। আমরা নির্দেশ দিয়েছি বীজ সেভ (সংরক্ষণ) করার জন্য, পানি নেমে গেলে যেন বীজ বপন করা যায়। প্রয়োজন হলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আউশ ও সবজি চাষিদের প্রণোদনা দেওয়া হবে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর