Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কলেরা ভ্যাকসিন কারা পাবেন, কারা পাবেন না

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৭ জুন ২০২২ ১৭:৪৫ | আপডেট: ২৭ জুন ২০২২ ২০:১০

ঢাকা: রাজধানীর ৫ এলাকায় ডায়রিয়া-কলেরা নিয়ন্ত্রণে কলেরা টিকা কর্মসূচি শুরু হয়েছে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কলেরা টিকাদান কর্মসূচিতে ২৪ লাখ বাসিন্দাকে রোববার (২৬ জুন) থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত মুখে খাওয়ার কলেরার ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে এই কর্মসূচিতে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে এক বছরের কমবয়সী শিশুদের। একইসঙ্গে গর্ভবতী নারী ও যারা ১৪ দিনের মধ্যে অন্য কোনো ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন তারা কলেরা ভ্যাকসিন পাবেন না।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৬ জুন) বিকেলে মহাখালীর আইসিডিডিআর,বিতে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন। তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতর, আইসিডিডিআর,বিসহ সংশ্লিষ্টদের দ্রুততার সঙ্গে এই টিকাদান কর্মসূচি গ্রহণের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা (সিডিসি) আইসিডিডিআরবির সহযোগিতায় এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. মো. শফিকুল ইসলাম।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২৬ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রথম ডোজ কলেরা টিকাদান কর্মসূচি চলবে। যাত্রাবাড়ীর প্রায় ৫ লাখ, সবুজবাগের প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার, দক্ষিণখানের প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার, মিরপুরের প্রায় ৭ লাখ ৮০ হাজার এবং মোহাম্মদপুরের প্রায় ৪ লাখ অধিবাসীকে কলেরার ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ভ্যাকসিন প্রয়োগ বিষয়ে ইতোমধ্যেই স্থানীয় পর্যায়ে মাইকিং করা হচ্ছে। প্রায় ৭০০টি টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রতি এক হাজার বাড়ির জন্য একটি ভ্যাকসিন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ইপিআই কর্মসূচিতে ব্যবহৃত টিকাদান কেন্দ্র, সূর্যের হাসি ক্লিনিক রয়েছে।

চলমান কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সতর্কতা অবলম্বন করে এসব এলাকার অধিবাসীকে কলেরার ভ্যাকসিন গ্রহণ ও টিকাদান কার্যক্রমকে সহায়তা করতে অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

বিজ্ঞাপন

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, মুখে খাওয়ার কলেরার এই ভ্যাকসিনের দুই ডোজ গ্রহণ করতে হবে। প্রথম ডোজ নেওয়ার পর অন্তত ১৪ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে।

প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ার ইউবায়োলোজিক্স কোম্পানি লিমিটেডের তৈরি ইউভিকল প্লাস নামের কলেরার দুই ডোজের ভ্যাকসিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানায়, এক বছর থেকে তদূর্ধ্ব বয়সীদেরকে কলেরা ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে। এই ভ্যাকসিন গর্ভবতী মহিলা এবং যারা বিগত ১৪ দিনের মধ্যে অন্য কোনও ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে তারা ব্যতীত সবাই এটা গ্রহণ করতে পারবেন। এই ভ্যাকসিন নেওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে করোনার ভ্যাকসিনসহ অন্য কোনো ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে না। এই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার পর ১৪ দিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত দেশে এপ্রিল থেকে মে এবং আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর বছরে দু’বার ডায়রিয়ার তীব্র প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ বছর ঢাকায় মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি রোগীর বসবাস ঢাকার যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, সবুজবাগ, মোহাম্মদপুর ও মিরপুর এলাকায়। এ সময়ে কলেরায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল।

প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) শাখার অধীন ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর খুব দ্রুততার সঙ্গে ইন্টারসেক্টোরাল কোঅর্ডিনেশন গ্রুপের (আইসিজি) কাছে প্রতিক্রিয়া-ভিত্তিক (রিঅ্যাক্টিভ) কলেরা টিকাদান কর্মসূচির জন্য ভ্যাকসিনের সংস্থান করতে আহ্বান জানায়। আইসিজি প্রায় ৪৭ লাখ ৫০ হাজার মুখে খাওয়ার কলেরা ভ্যাকসিন প্রদানে সম্মত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় আইসিডিডিআর,বি এ টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করবে।

কর্মসূচিতে আরও সহায়তা করছে জাতীয় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও এমএসএফ। দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, গ্যাভি’র আর্থিক সহায়তায় এই টিকাদান উদ্যোগ পরিচালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

এদিন কলেরা ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম উদ্বোধন করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমরা সব বয়সের মানুষকে ডায়রিয়ার ওর‌্যাল ভ্যাকসিন দেব। ঢাকার সংক্রমণপ্রবণ পাঁচটি এলাকার ২৩ লাখ মানুষকে এই ভ্যাকসিন দেব। আমরা প্রথমবারের মতো দেশে বড় পরিসরে এই ভ্যাকসিন দিচ্ছি। এর আগে ট্রায়ালে যেসব এলাকায় ভ্যাকসিন দিয়েছি সেখানে কলেরার প্রাদুর্ভাব একদম কমে গেছে।

তিনি বলেন, একসময় কলেরা-ডায়রিয়ায় হাজার হাজার মানুষ মারা যেত। এখন তা হয় না। এর পেছনে সরকার ও আইসিডিডিআর,বির গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার সারা দেশে নিরাপদ পানি ও স্যানিটারির ব্যবস্থা করেছে। সরকার সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছে। আমরা প্রতিটি জেলা-উপজেলার হাসপাতালে কলেরা-ডায়রিয়া ইউনিট চালুর নির্দেশ দিয়েছি।

অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআরবি,র সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ও ইনফেকশন ডিজিজ ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. ফেরদৌসী কাদরী টিকাদান কর্মসূচির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি অন্যান্য প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম যেমন- নিরাপদ পানির ব্যবহার, নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, আইসিডিডিআরবি,র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহামিদ আহমেদ, ড. মু. শফিকুল ইসলাম অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এসবি/এএম

কলেরা ভ্যাকসিন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর