‘সমস্যা মোকাবিলা করেই আমাদের চলতে হবে’
২৭ জুন ২০২২ ১৬:৪৫
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মহামারি করোনাভাইরাসের মতো একটা আঘাত সামলাতে না সামলাতেই আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের প্রভাব শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা বিশ্বব্যাপী পড়েছে। সেইসঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা। যাই হোক, সমস্যা আসবে। কিন্তু সেই সমস্যা মোকাবিলা করেই আমাদের চলতে হবে।
সোমবার (২৭ জুন) সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা প্রান্তে যুক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেক গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
বন্যায় মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখনই কোনো দুর্যোগ দেখা যায়, দুর্বিপাক দেখা দেয় তখন আপনারাই উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে আসেন। আর্তমানবতার সেবায় পদক্ষেপ নেন এবং তাদের জন্য কিছু করেন। এটা আপনাদের বিশাল মানবিক গুণ। সেজন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে, বাংলাদেশে একদিকে দারিদ্র্য বিমোচন করা, জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানো এবং সেইসঙ্গে বাংলাদেশকে উন্নত করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। যেন আমরা বিজয়ী জাতি মাথা উঁচু করে চলতে পারি, সম্মানের সাথে চলতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশে এখন আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। যত্রতত্র শিল্প নয়, আমরা পরিবেশ রক্ষার দিকে দৃষ্টি রেখে, পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার দিকে দৃষ্টি রাখছি। সেইসঙ্গে শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছি, যেখানে একটা শিল্প গড়ে তোলার সবরকম সুযোগ থাকবে। সেভাবে মাথায় চিন্তা রেখেই আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাশাপাশি আমাদের এটাও চিন্তা করতে হয়, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আর এত বিশাল জনসংখ্যা, কিন্তু জমি সীমিত। আমাদের উন্নয়নও করতে হবে আবার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাও দিতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আমাদের উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয়, কৃষি উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই শিল্পাঞ্চলগুলো গড়ে তুলছি। কৃষিজমি রক্ষার পাশাপাশি গবেষণা করে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে দু’টি বছর অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী এখন মন্দা আর মন্দা। তারপরও আমরা প্রণোদনা দিয়েছি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় একদিকে আমরা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। পাশাপাশি আমাদের শিল্প-কল-কারখানায় ব্যবসা-বাণিজ্য যথাযথভাবে যাতে চলতে পারে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করে দিয়েছি; যাতে কোনোভাবেই আমাদের অর্থনৈতিক গতিশীলতা শ্লথ না হয়, ব্যহত না হয়।’ সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সবধরনের সুযোগ-সুবিধা ও আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে বলে অবহিত করেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ আপনারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন আমাদের বন্যাকবলিত মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য। আপনারা যখন এইভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ান তখন আর আমাদের চিন্তা কী? আমরা তো মনে করি, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেন বিশ্ব দরবারে একটা মর্যাদা নিয়ে চলতে পারি নিশ্চয়ই সে ব্যাপারে আপনারাও সচেতন থাকবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সব অর্থনৈতিক কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত করেছি। যাতে একেবারে গ্রামের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে। অর্থাৎ আমাদের শিল্পে যে সমস্ত জিনিস উৎপাদিত হয় সেগুলো যেন গ্রামের মানুষও কিনতে পারে- সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের সমস্ত নীতিমালা ও প্রকল্প গ্রহণ করি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব টাকায় এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। এই দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল অঞ্চল, যেটা অনেকদিন অবহেলিত ছিল। সেই অঞ্চলে এখন শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেই অঞ্চলের মানুষের আর্থিক উন্নতি হবে। সেখানেও আপনাদের উৎপাদিত পণ্য বিপণনের ক্ষেত্র তৈরি হবে এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে। আমি মনে করি, এই ২১ জেলার মানুষের ভাগ্যই পরিবর্তন হয়ে যাবে।’
উল্লেখ্য, এদিন ৪৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মোট ৩০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার অনুদান দেন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বিডিবিএল, ইডকল, বিআইএফএফএল, এক্সিম ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, যমুনা ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম