Friday 10 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বন্যায় ১৮ জেলা প্লাবিত, ৩৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, নিহত ১৮

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৭ জুন ২০২২ ১৬:২৬

ঢাকা: দশ দিন পর সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার ক্ষত শুকাতে শুরু করেছে। গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত নেই বললেই চলে। তাপমাত্রাও স্বাভাবিক রয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আপাতত এ অঞ্চলে নতুন করে বন্যার শঙ্কা নেই। ফলে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এবারের বন্যায় দেশের ১৮টি জেলা প্লাবিত হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৩ লাখ মানুষের। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, এখন বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গত ১৪ জুন থেকে শুরু হওয়া ঢলের জল আর বন্যায় দেশের ১৮ জেলার ৬৮ উপজেলার ৩৯৮ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এতে ৫ লাখ ৬২ হাজার ৯২৬ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৩৩ লাখ, আর মারা গেছে ১৮ জন।

বন্যা কবলিত জেলার মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সূত্র মতে, সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার ৫টি পৌরসভা এবং ১টি সিটি করপোরেশনের আংশিক প্লাবিত হয়। ৯৯টি ইউনিয়নের ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬৫৪টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ওই এলাকার ৬৫২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৯১ হাজার ৬৩ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়। আর আশ্রয় দেওয়া গবাদি পশুর সংখ্যা ১১ হাজার ৩০টি। সিলেট জেলায় ১ হাজার ৫৯৭ মেট্রিক টন চাল ২ কোটি ৬২ লাখ নগদ টাকা এবং ১৮ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। সব মিলিয়ে সিলেটে আনুমানিক ক্ষয় ক্ষতির শিকার হয়েছেন ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ৬৪৪ জন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, এবারের বন্যায় সুনামগঞ্জ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুনামগঞ্জের বেশ কিছু এলাকা ৯০ ভাগ পানিতে ডুবে যায়। সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলার ৮৮ ইউনিয়নের ৯০ হাজার পরিবারের সাড়ে ৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১ হাজার ৬৫৬ মেট্রিক টন চাল ২ কোটি ৩৫ লাখ নগদ টাকা এবং ২৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব তহবিল থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জের জন্য ৬৫ লাখ করে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা সাহায্যার্থে দেওয়া হয়।

সব মিলিয়ে এবারের বন্যায় দেশের ১৮ জেলার ৬৮ উপজেলার ৩৯৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। বন্যা কবলিত এলাকার ৫ লাখ ৬২ হাজার ৯২৬ জন পানিবন্দি হন। ক্ষতিগ্রস্ত হন ৩৩ লাখের বেশি মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার ৫ হাজার মেট্রিকটন চাল, ৬ কোটি ১২ লাখ নগদ টাকা এবং ৭২ হাজার ৭ শ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর বন্যায় মারা গেছে ১৮ জন। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, তার মন্ত্রণালয় শুধু বন্যার পানিতে ডুবে নিহতদের হিসাব নিরূপণ করে থাকে। তিনি বলেন, গত ১৪ জুন থেকে পানি বাড়তে শুরু করে। পরের দুই দিনে একটু একটু করে পানি বাড়তে বাড়তে তিন চার দিনের মধ্যে তা আট ফুটে পৌঁছায়। যা কয়েকদিন স্থায়ী হয়। আমরা মানুষকে যথা সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পেরেছি। তিনি বলেন, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে। পানি নেমে গেছে। মানুষজন বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। তারপরেও আমরা খোঁজ নিচ্ছি মানুষ খাবারে কষ্ট পাচ্ছে কিনা।

বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার পর পরই ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বসতবাড়ি, ঘর, গবাদি পশু, রাস্তাঘাট কি পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, তালিকা তৈরির পরই আমরা পুনর্বাসনের জন্য কাজ শুরু করবো। বাড়িঘর থেকে শুরু করে যার যতটুকু ক্ষতি হয়েছে সেভাবে আমরা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করব। এটা সহায়তার দ্বিতীয় ধাপ।

এদিকে সিলেটে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত কয়েক দিনে বন্যা কবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জে সামান্য পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী পাঁচ দিন দেশের অন্যান্য স্থানে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকলেও সিলেট সুনামগঞ্জে তেমন নেই।

আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ দিনে দেশের বেশ কয়েক জায়গায় বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে তবে সিলেট অঞ্চলে বড় ধরনের বন্যার শঙ্কা আপাতত নেই। তিনি জানান, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ বিহার পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় রয়েছে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।

উল্লেখ্য, ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা ঢলের জলে গত ১৪ জুন থেকে দেশের উত্তর- দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে। যা পরবর্তীতে ভয়াবহ বন্যায় রূপ নেয়।

সারাবাংলা/জেআর/আইই

টপ নিউজ সিলেট সুনামগঞ্জ

বিজ্ঞাপন

রিয়েলি এবার রিয়েলিই খুশি
১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:০০

আরো

সম্পর্কিত খবর