Friday 10 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পদ্মা সেতুতে নাট খোলার ঘটনা একাধিক, কঠোর হচ্ছে প্রশাসন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৭ জুন ২০২২ ০০:২৯ | আপডেট: ২৭ জুন ২০২২ ১২:০৪

ঢাকা: স্বপ্নের পদ্মা সেতু সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। খুলে দেওয়ার প্রথম দিনেই এই সেতু ঘিরে দেখা গেছে মানুষের ঢল। সেতু ঘিরে দেখা গেছে তুমুল উচ্ছ্বাস। একইসঙ্গে দেখা গেছে নিয়ম ভাঙারও হিড়িক। নিয়ম না থাকলেও সেতুতে গাড়ি থেকে নেমে ছবি তোলা, টিকটক ভিডিও করতে দেখা গেছে অনেককেই। এমনকি সেতুর রেলিংয়ের নাট পর্যন্ত খুলতে দেখা গেছে!

রোববার (২৬ জুন) সকালে সেতু খুলে দেওয়া হয় চলাচলের জন্য। এর মধ্যেই পদ্মা সেতুর নাট খুলে নেওয়ার একটি টিকটক ভিডিও দুপুরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পরে বায়েজিদ নামে ওই তরুণকে চিহ্নিত করে রাজধানীর শান্তিনগর থেকে আটকও করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করতে হয়েছে পদ্মা সেতু উত্তর থানাকে।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেবল বায়েজিদ নয়, এদিন পদ্মা সেতুর রেলিং থেকে নাট খোলার ঘটনা ঘটেছে একাধিক স্থানে। এ অভিযোগে অনেককেই চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। সেতুর ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) সহায়তায় বাকিদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন- পদ্মা সেতুর নাট খোলা ব্যক্তির নামে মামলা হবে বিশেষ ক্ষমতা আইনে

রোববার (২৬ জুন) রাতে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে সেতুর নিরাপত্তা রক্ষায় কঠোর হতে যাচ্ছে প্রশাসন। সোমবার (২৭ জুন) থেকে সেতুর উপরিভাগ এবং উভয় প্রান্তে জরুরিভিত্তিতে টহল জোরদার করা হবে। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা জোরদারের তাগিদ দিয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট ও সেফটি টিমের প্রধান সমন্বয়কের কাছে একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলামের সই করা চিঠিতে বলা হয়, শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর রোববার সকাল থেকে তা যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। সেতুর উপরিভাগ ও সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মালামাল রয়েছে। সেতুর ওপর যানবাহন থেকে নামা নিষিদ্ধ থাকলেও সাধারণ যাত্রীরা সেতুর উপরিভাগে নেমে সেতুর গুরুত্বপূর্ণ মালামাল চুরি ও ক্ষতি করছে। এছাড়া সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে সাধারণ জনগণ প্রবেশ করে মালামালের ক্ষতি করছে। এ অবস্থায় সেতুর উপরিভাগ ও উভয় প্রান্তে জরুরি ভিত্তিতে টহল জোরদার ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা যাচ্ছে।

চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলেন, সেতুর ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট ও সেফটি টিমের প্রধান সমন্বয়কসহ মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন- পদ্মা সেতুর নাট খোলা তরুণ সিআইডির হাতে আটক

তিনি বলেন, চিঠি পাওয়ার পরে সেতু সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সোমবার (২৭ জুন) সকাল থেকেই কঠোরভাবে সেতুর নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করা হবে। একইসঙ্গে কোনোভাবেই যেন কেউ সেতুতে নেমে অপ্রীতিকর কিছু করতে না পারে, সে বিষয়েও কঠোর ভূমিকা নেওয়া হবে। সেতুতে যেন কেউ না নামতে পারে, সে বিষয়ে প্রশাসন আরও কঠোর হবে।

পদ্মা সেতু সবার জন্য খুলে দেওয়ার প্রথম দিনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, দেশের এত বড় একটি অর্জন এই সেতু, একে ঘিরে মানুষের উচ্ছ্বাস থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু আজ যা হয়েছে, তাতে অনেক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাও ঘটে গেছে। সারাদিন এসব পরিস্থিতি সামাল দিতে কাজ করতে হয়েছে প্রশাসনের প্রায় সকলকেই। একজনকে দেখলাম পিলারের ওপরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। একজনকে দেখলাম বাইক থেকে রেঞ্জ বের করে সেতুতে লাগানো নাট খুলছে। একজনকে পেলাম, যিনি বলছেন বাড়িতে স্মৃতি হিসেবে নিয়ে যেতে নাকি নাট খুলেছেন! এগুলো দুঃখজনক। সবাইকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আর যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রশাসনিকভাবে সমন্বয় করে নিরাপত্তার বিষয়গুলো কার্যকর করা হবে। সবাই তো আর বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না। যারা পারে, তাদের নিয়েই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেট মো. পারভেজ হাসান বলেন, আজ সারাদিন নানাভাবে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কাজ করা হয়েছে। আমরা মাইকিং করেছি। তবে সেতুর ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে কিন্তু অনেক অংশীজন যুক্ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন আছে, ঠিক একইভাবে সেতু কর্তৃপক্ষও আছেন। উনারা যেভাবে নির্দেশনা দেন, সেভাবেই আমরা বাস্তবায়ন করব।

আরও পড়ুন-

জেলা প্রশাসক বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মানুষের দীর্ঘ দিনের অপেক্ষা ফুরিয়েছে। তাই উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা মেনেই সবকিছু করতে হবে। নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সব পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশের সাহায্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। সোমবার থেকে সেতু কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা থেকে শুরু করে অন্যান্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সেতুতে যানচলাচল উন্মুক্ত হওয়ার প্রথম দিনেই নাট খুলে নেওয়াসহ ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাকে বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছেন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এমন কিছু কেউই বোধহয় কল্পনা করেননি। খুবই বিব্রতকর কিছু বিষয় ঘটেছে। এগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। মানুষ দেখি গতকাল (শনিবার) লোহার বেড়া ও মাটির নিচ দিয়ে সিঁদ কেটে অবৈধভাবে সেতুর ওপরে উঠে হাঁটছে।  সেতুর এক টোল প্লাজা থেকে আরেক টোল প্লাজার দূরত্ব ১২ কিলোমিটারের মতো। সারাদিন সেতুর ওপরে যারা টহল দিচ্ছিল, তাদের সবারই প্রায় হাঁপিয়ে ওঠার মতো অবস্থা। অথচ সেতুর ওপরে হাঁটা-চলাফেরা করা সম্পূর্ণ নিষেধ বলে নির্দেশনায় জানানো হয়েছে আগেই।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, মানুষ সেতুতে নিয়ম মেনে পার হবে, এটাই তো স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু তা না করে সবাই একাধিক নিয়ম ভাঙলে কয়দিকে সামলানো যায়? কিছু বাসচালককে দেখা যায় টিকটকারদের তুলছে টোল প্লাজার বাইরে থেকে, আর এরপর তাদের সেতুর মাঝখানে নামিয়ে দিচ্ছে। ১০০ টাকার বিনিময়ে নাকি তারা এমনটা করেছে। আবার দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেলে অনেকে যাত্রী নিয়ে এসে সেতুর মাঝখানে নামিয়ে দিচ্ছে। এটা নাকি তাদের খ্যাপ!

মানুষ এমনটা করবে এগুলো ভাবা যায়?— এমন প্রশ্ন করে মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল থেকে এসব বিষয় কঠোরভাবে মোকাবিলা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দেশের সম্পদ কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না।

এর আগে, শনিবার (২৫ জুন) উদ্বোধন করা হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। রোববার (২৬ জুন) ভোর ছয়টা থেকেই গণপরিবহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সেতু। উদ্বোধনের আগে সরকারিভাবে দেওয়া নির্দেশনায় জানানো হয়, পদ্মাসেতুতে হেঁটে পার হওয়া যাবে না। এমনকি দাঁড়িয়ে ছবিও তোলা যাবে না। তবে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেটি চালুর পর থেকে দেখা যায় নানাভাবে অনেকেই মানছেন না সেই নিষেধাজ্ঞা।

পদ্মা সেতু ব্যবহারের নির্দেশনা

গত বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের এক গণবিজ্ঞপ্তিতে নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব রক্ষার্থে পদ্মা সেতু ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়।

নির্দেশনাগুলো হলো— পদ্মা সেতুর ওপর অনুমোদিত গতিসীমা থাকবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার, পদ্মা সেতুর ওপর যেকোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে ছবি তোলা/হাঁটা সম্পূর্ণ নিষেধ। তিন চাকা বিশিষ্ট যানবাহন (রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, অটোরিকশা ইত্যাদি), পায়ে হেঁটে, সাইকেল বা নন-মোটরাইজড গাড়িযোগে সেতু পারাপার হওয়া যাবে না, গাড়ির বডির চেয়ে বেশি চওড়া এবং ৫.৭ মিটার উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতার মালামালসহ যানবাহন সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার করা যাবে না, সেতুর ওপরে কোনো ধরনের ময়লা ফেলা যাবে না।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

নাট খোলা পদ্মা সেতু

বিজ্ঞাপন

বাধ্য হয়ে জোভান-তটিনীর বিয়ে!
১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:১৯

তাসকিনদের ঝলকে জয়ে ফিরল রাজশাহী
১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:০০

আরো

সম্পর্কিত খবর