Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘দেশ এগিয়ে নিচ্ছে আ.লীগ, বিএনপির হিংসা হচ্ছে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৪ জুন ২০২২ ১৮:৫১ | আপডেট: ২৪ জুন ২০২২ ২০:৪৭

ঢাকা: পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ আর এসব দেখে দেখে হিংসা করছে বিএনপি।

তিনি বলেন, দেশ চালাতে সুশাসন অবশ্যই দরকার। তবে সবার আগে প্রয়োজন সাধারণ জনগণের চাহিদাকে মূল্যায়ন করা। সেটি আওয়ামী লীগ সরকার করছে।

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত জাতীয় বাজেট এবং অর্থনৈতিক গতিধারা শীর্ষক এক সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন ।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারপারসন এবং অর্থনীতিবিদ ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীরসহ অন্যান্যরা।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী এবং সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সুশাসনের রাস্তা অনেক দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় সরাসরি কেউ যেতে পারে না। পৃথিবীর বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশগুলোও বহু বছরের অপেক্ষার পর সুশাসন অর্জন করতে পেরেছে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে বিগত ১৫ বছর ধরে দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। এই সরকারই দেশের মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। মহামারির সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ছিল বাংলাদেশের। এমনকি ভারত এবং চীনের চেয়েও এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

বাজেট নিয়ে তিনি বলেন, বাজেটে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। কিন্তু এটি কেবল মাত্র একটি খসড়া বাজেট। এই বাজেট নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হবে। তারপর এটি সংসদে পাস হবে।

এদিকে, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান বিষয়ক একটি প্রতিবেদনের ফলাফল তুলে ধরে বলেন, পরিসংখ্যান সক্ষমতার দিক দিয়ে বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের স্কোর ৬০, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। বর্তমান সরকারকে তিনি কর্তৃত্বপরায়ণ এবং অনির্বাচিত সরকার দাবি করে বলেন, একটি রাষ্ট্রে যখন রাজনীতিকরণ অর্থনীতিকে গ্রাস করে ফেলে তখনই সরকার কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে যায়। এতে জনগণের কথা বলার সুযোগ থাকে না।

বাজেটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজেটে সীমাবদ্ধতার কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি জনসেবামূলক খাতগুলোতে প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। যেখানে সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হওয়ার কথা ছিল, সেখানে এই খাতগুলো এখন অবহেলিত।

তিনি বলেন, এসব কার্যকলাপ আড়াল করতে জনগণের মনোজগতে ঢুকে কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার উন্নয়নের গল্প শোনাতে থাকে।

তিনি আরও বলেন, দেশে দুর্নীতি এত বেড়েছে যে, দেশে টাকা রাখার জায়গা হচ্ছে না। দেশের টাকা বাইরের দেশে চলে যাচ্ছে। পরিচালন ব্যয় উন্নয়ন ব্যয়ের দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে, যা এই কর্তৃত্ববাদী সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করছে।

এই বিএনপি নেতা বলেন, এই সরকার পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতি করছে যেখানে দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। এর উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, বর্তমানে বিএনপির ৩৫ লাখ নেতা-কর্মী জেলে আছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, সরকার বারবার নাশকতার কথা বলে। যমুনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন আওয়ামী লীগ হরতাল ডেকেছিল। বিএনপি তো হরতাল ডাকেনি পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন। তাহলে নাশকতা কোথায় এখানে? এই সরকার নিজেদের লোকজনের সুযোগ সুবিধার নিশ্চিতের জন্য ‘রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ করেছে।

তার বক্তব্যের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন বিএনপির হরতাল দেওয়ার সাহস নেই। কারণ জনগণই তাতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এই পদ্মা সেতুর সঙ্গে জনগণের স্বপ্ন এবং অভিলাষ জড়িয়ে আছে।

সেমিনারে মুখ্য আলোচক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ- এর চেয়ারপারসন এবং অর্থনীতিবিদ ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, কার্যকরী গণতন্ত্রের জন্য জনপরিসরে অর্থনৈতিক আলোচনা বাঞ্ছনীয়। তিনি ইতিহাসের প্রসঙ্গ টেনে উল্লেখ করেন, মূল্যস্থীতিকে কেবল মাত্র সংখ্যা দিয়ে বিচার করলে হবে না। এর সাথে জনগণের জীবন-যাত্রার ব্যয়ের প্রসঙ্গও জড়িত।

তিনি ১৯৩০ সালের মহামন্দা থেকে উত্তরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের নীতির কথা উল্লেখ করে বলেন, মহামন্দা থেকে উত্তরণের জন্য রুজভেল্ট করের পরিমাণ ৮৬ শতাংশ বৃদ্ধি করেছিলেন। এভাবে তিনি দেশের জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন কর্মসংস্থান বাড়িয়ে অর্থনৈতিকভাবে জনগণকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তাজউদ্দীন আহমেদ ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছিলেন, যার মধ্যে ৬০০ কোটি টাকা ছিল উন্নয়ন ব্যয় এবং ১৮৬ কোটি টাকা ছিল পরিচালন ব্যয়। তিনি বলেন, বর্তমান বাজেটে আমরা ঠিক এর বিপরীত চিত্র দেখতে পাই।

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, প্রাক-কোভিডকালে দেশের কর্মসংস্থান ঋণাত্মক পর্যায়ে চলে গিয়েছে। ফলে কোভিডকালে এবং কোভিডের পর দেশে নতুন করে দারিদ্র্য যুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে যাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা, তারা অন্তর্ভুক্ত হতে পারছেন না। তিনি কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ওপর জোর দেন এবং সেই সাথে করের আকার বৃদ্ধির কথাও বলেন।

তিনি বলেন, একটি নিবর্তনমূলক আইনের কারণে জনপ্রতিনিধিরা সংসদীয় পদ্ধতিতে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারেন না। ফলে বাজেট প্রস্তাবনায় কেবলমাত্র অর্থমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত প্রতিফলিত হয়, জনপ্রতিনিধিরা সক্রিয় মতামত দিতে পারেন না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)- এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, বর্তমানে দেশে রাজনীতি অর্থনীতিকে ছাপিয়ে উঠেছে। ফলে বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট হচ্ছে না। এমনকি বছরের নির্দিষ্ট এই সময়টুকু ছাড়া সারাবছর বাজেট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। সম্পূরক বাজেট নিয়ে কেউ কথা বলছে না, যেটি কিনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর টোলের দায়িত্ব বাইরের দেশের একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে জনগণের আয়ের একটি বড় অংশ দেশের বাইরে ডলারে চলে যাবে। এসব বিষয় নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আলোচনা করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, চার বছর পর এসে নির্বাচনের আগের বছরেই সর্বজনীন পেনশনের কথা তোলা হচ্ছে। এসব ঘটনা বাজেটে ধারাবাহিকতা না থাকাকেই প্রমাণ করে।

তিনি আরও বলেন, কর প্রদানের জন্য যথাযথ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কারণ, জনগণ কর দিতে চায় কিন্তু যথাযথ পরিবেশের অভাবে আগ্রহী হয় না।

সারাবাংলা/টিএস/একেএম

টপ নিউজ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান

বিজ্ঞাপন

বাসচাপায় ২ কলেজছাত্র নিহত
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর