Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জামায়াত নেতার দাপটে তটস্থ পানগাঁও বন্দর, অবশেষে কারাগারে

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২১ জুন ২০২২ ২১:৪০ | আপডেট: ২২ জুন ২০২২ ১০:০৫

ঢাকা: রাজধানীর অদূরে পানগাঁও বন্দরের আতঙ্ক ইমদাদুল হক। তিনি একজন সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী। তার কোম্পানির নাম ই এইচ ট্রেডিং। মনে হতে পারে তিনি সামান্য একজন ব্যবসায়ী। কিন্তু তা নন তিনি। তিনি সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসার আড়ালে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তিনি এখন পানগাঁও বন্দরের মাফিয়া হিসেবে পরিচিত।

পানগাঁও বন্দর সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ইমদাদুল হক ও তার চক্রের সদস্যরা মিলে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে পুরো বন্দরের পরিবেশটাকেই নষ্ট করে ফেলেছে। সবকিছুতেই তিনি প্রভাব খাটান। মিথ্যা ঘোষণায় নিয়ে আসা অবৈধ পণ্য খালাস করান। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তার পরিবার দেশে না থাকলেও সুদুর আমেরিকায় ঠিকই টাকা চলে যায়। কোটি কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

এমনকি পণ্য ছেড়ে না দিলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের নাজেহাল করার অভিযোগ রয়েছে ইমদাদুল হকের বিরুদ্ধে।

গত বছরের (২০২১) ১৫ অক্টোবর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সৌরভ কুমার পাল বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫/বি ও ২৫-ডি ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার বাদী সৌরভ কুমার পাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে জানতে হলে পানগাঁও কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমি মামলা করেছি কিন্তু কোনো কিছু বলতে পারব না।’

জানতে চাইলে মামলা তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এসআই তৌহিদুল আরেফিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত বছরের অক্টোবরে মামলা হলেও আদালতের নির্দেশে ইমদাদুল হককে গত ১৫ জুন গ্রেফতার করা হয়। ১৬ জুন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ইমদাদুল হক ২ নম্বর আসামি। ১ নম্বর আসামি মাহিনকে এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। মাহিন হচ্ছে ছদ্ম নাম। এ জন্য তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে এরইমধ্যে তার সঠিক নাম ঠিকানা পাওয়া গেছে। শিগগিরই তাকেও গ্রেফতার করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছে, ইমদাদুল হক পানগাঁও বন্দরের একজন মাফিয়া। সেখানে একশ থেকে দেড়শর মতো সিএন্ডএফ এজেন্ট রয়েছেন। যাদের মধ্যে ইমদাদুল বেশির ভাগকেই নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে অবৈধ পণ্য খালাস করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে— ইমদাদুল হক একজন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের একজন রোকন পর্যায়ের নেতা। তিনি কয়েকশ কোটি টাকার মালিক। এ সব টাকা জামায়াতের রাজনীতির পেছনে ব্যয় করেন। বাকি টাকা আমেরিকায় পাচার করারও অভিযোগ রয়েছে।

প্রায় দিনই মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য খালাস করতেন ইমদাদুল হক। অনেক দিন ধরা পড়লেও অসাধু কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়ে পার পেলেও গত বছরের অক্টোবরে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আসা অবৈধ বিদেশি সিগারেট পণ্য খালাস করতে গিয়ে ধরা পড়েন কাস্টমস কর্মকর্তাদের হাতে। ওই চালানে সাড়ে চার কোটি টাকার সিগারেট ছিল।

সেই ঘটনায় আদালতে একটি মামলা হয়। সেই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে গত ১৫ জুন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ ইমদাদুল হককে গ্রেফতার করে। ওই মামলায় বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

জানা গেছে— ইমদাদুল হককে যখন গ্রেফতার করা হয় তখন থেকেই তার বড়ভাই ঢাকা কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাশার বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে থানায় হাজির হন। ইমদাদুল হককে যেন রিমান্ডে নেওয়া না হয় সে জন্য পুলিশকে টাকা ঘুষ দিয়ে আসেন। থানা থেকে তাকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও পুলিশ জানায়, এটি আদালতের মামলা তাই কোনো উপায় নেই। তাকে আদালতে পাঠানো হবে। এরপর খায়রুল বাশার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা থেকে চলে আসেন।

অন্যান্য সিএন্ডএফ এজেন্টদের অভিযোগ— খায়রুল বাশার বড়ভাই এবং তিনি এজেন্ট ব্যবসায়ীদের মাফিয়া হওয়াতে তার ভাইও অসীম ক্ষমতার অধিকারী বনে যান। দুই ভাইয়ের দুটি আলাদা প্রতিষ্ঠান থাকায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ মাল অন্য মালামালের কথা বলে খালাস করান। এভাবে তারা দুই ভাই বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন প্রতিদিন। তাদের দাপটে অন্যান্য এজেন্ট ব্যবসায়ীরা সবসময় তটস্ত থাকেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাশার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আইনিভাবেই আমার ভাইকে আমি বের করব। আমরা কর্ম করে খাই। কারও টাকা মেরে খাই না।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারের টাকা সবাই মেরে খায়। যারা ওখানে বসে আছেন তারা কি সাধু। শুধু দোষ আমাদেরই।’

তার ভাইয়ের জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির জড়িত থাকার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

আপনি তো পরিবারসহ আমেরিকায় থাকেন। মাঝেমধ্যে আপনি ঢাকায় আসেন। তাহলে কিভাবে আপনি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় থাকলে কি সাধারণ সম্পাদক হওয়া যাবে না কোথায় লেখা আছে? যারা আমাকে নির্বাচিত করেছেন তাদের জিজ্ঞেস করুন কেন তারা আমাকে ভোট দিলেন।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

ইমদাদুল হক জামায়াত নেতা টপ নিউজ পানগাঁও বন্দর বন্দর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর