যমুনার বিপৎসীমা পেরিয়ে বন্যা এখন সিরাজগঞ্জে
১৯ জুন ২০২২ ২৩:৩৩ | আপডেট: ১৯ জুন ২০২২ ২৩:৪১
সিরাজগঞ্জ: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে যমুনা নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর দু’টি পয়েন্টেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে জেলার নিম্নাঞ্চল দ্রুত প্লাবিত হওয়ার দুর্ভোগে পড়ছেন স্থানীয়রা।
জেলার কাজিপুর পয়েন্টে গত ১২ ঘণ্টায় যমুনার পানি আরও ৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া গত ১২ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় আরও ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে যেমন যমুনার চরের নতুন ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে, তেমনি নিম্নাঞ্চলের মানুষের বাড়িঘরে পানি ঢোকায় অনেকেই নিরাপদ কোনো উঁচু স্থানে গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
রোববার (১৯ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন ও সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক হাসানুর রহমান।
পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, জেলার কাজিপুর পয়েন্টে গত ১২ ঘণ্টায় (১৯ জুন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) ৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ১৯ জুন সকালে ৬টায় জেলার কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছিল ১৫.৪৭ মিটার। এখানে পানির বিপৎসীমার স্তর ধরা হয় ১৫.২৫ মিটার। ফলে এই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবোর পানি পরিমাপক হাসানুর রহমান জানান, সন্ধ্যায় শহরের হার্ড পয়েন্ট এলাকায় পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে ১৩.৫৭ মিটার। এর আগে সকাল ৬টায় পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩.৪৭ মিটার। গত ১২ ঘন্টায় এই পয়েন্টে পানি বেড়েছে ১০ সেন্টিমিটার। যেহেতু তিস্তায় পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, ফলে যমুনায় আরও কয়েক দিন পানি বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে সিরাজগঞ্জে বন্যা ছড়িয়ে যেতে পারে।
প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিকভাবে পানিবৃদ্ধির ফলে যমুনার চরাঞ্চলের নিচু জমিগুলো তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। ফলে যমুনার পাশাপাশি ফুলজোড়, করতোয়া, বড়াল, হুড়াসগর, ইছামতীসহ চলনবিলের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এরই মধ্যে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ায় কাঁচা পাট, তিল, কাউন, বাদাম, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের উঠতি ফসল নষ্ট হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকেরা।
এদিকে পানিবৃদ্ধির ফলে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতেও পানি বাড়ছে। এতে ধীরে ধীরে প্লাবিত হচ্ছে যমুনার চর ও নিম্নাঞ্চল। ফলে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে বন্যা ও ভাঙন-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এসব এলাকার অনেকেই উঁচু বাধ বা নির্মাণাধীন কোনো ভবনে ঠাঁই নিচ্ছেন, পার করছেন মানবেতর জীবন। অনেকেই আবার রাস্তার ধারে নির্মাণ করার চেষ্টা করছেন অস্থায়ী ছাপড়া ঘর।
অপরদিকে, যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার কাজিপুর, চৌহালী, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুরের চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সারাবাংলা/এমও