শ্রম আইনের যে ধারায় রাত ৮টায় দোকানপাট বন্ধ
১৯ জুন ২০২২ ২০:৩৪ | আপডেট: ১৯ জুন ২০২২ ২২:৩২
ঢাকা: রাত ৮টার পর সারাদেশে দোকানপাট ও শপিং মল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের উপস্থিতিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ১১৪ ধারার ৩ উপধারা বাস্তবায়ন করতেই মূলত নেওয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত।
রোববার (১৯ জুন) অনুষ্ঠিত বৈঠকে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, সার্বিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয় করার জন্য সরকার বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬-এর ১১৪ ধারা কঠোরভাবে প্রতিপালনের উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, এফবিসিসিআইসহ সব ব্যবসায়ী সংগঠন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার প্রতি সম্মান জানিয়ে সরকারের এ উদ্যোগ সর্বসম্মত মেনে নিয়েছেন।
শ্রম আইনের ১১৪ ধারার ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো দোকান রাত ৮টার পর খোলা রাখা যাবে না। তবে কোনো গ্রাহক যদি ওই সময়ে কেনাকাটার জন্য দোকানে থাকেন, তাহলে ওই সময়ের আধা ঘণ্টা পর পর্যন্ত তাকে কেনাকাটার সুযোগ দেওয়া যাবে।
আরও পড়ুন-
- রাত ৮টার পর দোকান-মার্কেট বন্ধ রাখার নির্দেশ
- রাত ৮টার পর ঢাকা শহর বন্ধ করতে চান মেয়র তাপস
- সোমবার থেকে রাত ৮টার পর সারাদেশে দোকানপাট বন্ধ
- ইদের ১০ দিন রাত ১০টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখতে চায় মালিক সমিতি
২০০৬ সালে এই আইন পাস হলেও এরপর গত দেড় দশকের খুব সময়েই এই বিধান কার্যকর ছিল। এবারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয় করতে এই বিধানটিই কার্যকর করছে সরকার।
১১৪ ধারার ওই বিধানে আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি দোকান বা বাণিজ্য বা শিল্প প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে অন্তত দেড় দিন সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। কোন এলাকায় এসব প্রতিষ্ঠান কোন দেড় দিন সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে, তা প্রধান পরিদর্শক নির্ধারণ করবেন। এ ক্ষেত্রে প্রধান পরিদর্শকও জনস্বার্থ বিবেচনায় ওই এলাকার জন্য এরকম বন্ধের দিন পুনঃনির্ধারণ করতে পারবেন। এছাড়া সরকারও বিশেষ অবস্থা বিবেচনায় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোনো এলাকার দোকান বন্ধের সময় পরিবর্তন করতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ১১৪ ধারার ৪ উপধারায়।
শ্রম আইনের ১১৪ ধারার প্রথম চারটি উপধারার যেসব শর্তের কথা বলা হয়েছে, এই শর্তগুলো যেসব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না তা উল্লেখ করা হয়েছে ৫ উপধারায়। এই উপধারা অনুযায়ী যেসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে রাত ৮টার পর ও সপ্তাহে দেড় দিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিধান প্রযোজ্য হবে না সেগুলো হলো— ডক, জেটি, স্টেশন অথবা বিমানবন্দর এবং পরিবহন সার্ভিস টার্মিনাল অফিস; তরি-তরকারি, মাংস, মাছ, দুধ জাতীয় পণ্য, রুটি, পেস্ট্রি, মিষ্টি ও ফুল বিক্রির দোকান; ওষুধ, অপারেশন সরঞ্জাম, ব্যান্ডেজ অথবা চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান; দাফন ও অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রির দোকান; এবং তামাক, সিগার, সিগারেট, পান-বিড়ি, বরফ, খবরের কাগজ, সাময়িকী বিক্রির দোকান, এবং দোকানে বসিয়া খাওয়ার জন্য হালকা নাশতা বিক্রির খুচরা দোকান।
নিষেধাজ্ঞার বাইরে আরও থাকবে খুচরা পেট্রোল বিক্রির জন্য পেট্রোল পাম্প এবং মেরামত কারখানা নয়— এমন মোটর গাড়ির সার্ভিস স্টেশন; নাপিত ও কেশ প্রসাধনীর দোকান; যেকোনো ময়লা নিস্কাশন অথবা স্বাস্থ্যব্যবস্থা; যেকোনো শিল্প, ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান যা জনগণকে শক্তি, আলো-অথবা পানি সরবরাহ করে; এবং ক্লাব, হোটেল, রেস্তোরাঁ, খাবার দোকান, সিনেমা অথবা থিয়েটার।
এই উপধারায় আরও বলা হয়েছে, একই দোকানে অথবা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে যদি একাধিক ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হয় এবং এসবের অধিকাংশ প্রকৃতিগত কারণে এই ধারার অধীন অব্যাহতি পাওয়ার যোগ্য, তাহলে পুরো দোকান বা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানটির জন্য এরকম অব্যাহতি প্রযোজ্য হবে।
শ্রম আইনের এই ধারাটি প্রতিপালনে ব্যবস্থা নিতে শ্রম মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহী, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মহ. শের আলী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুসরাত জাবীন বানু, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ করিম, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন ও দফতর-সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বাণিজ্য সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. নূর কুতুব আলম মান্নানসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
টপ নিউজ দোকানপাট বন্ধ বাংলাদেশ শ্রম আইন রাত ৮টায় দোকান বন্ধ শ্রম আইন ২০০৬ শ্রম মন্ত্রণালয়