‘রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি করছে’
১২ জুন ২০২২ ২২:৫৪ | আপডেট: ১৩ জুন ২০২২ ২২:৫২
ঢাকা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সাময়িকভাবে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি করছে।
রোববার (১২ জুন) জাতীয় সংসদের ১৬তম অধিবেশনে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য মো. শফিউল ইসলামের (ঢাকা-১০) এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে মানবিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ও বিতাড়িত হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়। এর পর থেকে প্রত্যাবাসনের কার্যক্রম দ্রুত শুরুর জন্য দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে।’
ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশ ও পশ্চিমা দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী এবং জাতিসংঘের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রোহিঙ্গা বিষয়ে তাদেরকে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত হওয়া আহ্বান জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি, বহুপাক্ষিক ফোরামগুলোতে গৃহীত কূটনৈতিক উদ্যোগের আওতায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এবং নিরাপত্তা পরিষদের মিয়ানমার সংক্রান্ত সব বৈঠক ও কার্যক্রমে অংশ নিয়ে সংকটটির স্থায়ী সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অব্যাহত কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সফররত প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার আসিয়ানের সদস্যরাষ্ট্র। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। বাংলাদেশ আসিয়ানের বিশেষ দূত নিয়োগকে স্বাগত জানায়। আমরা আশা করি যে, বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের তাদের দেশে নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধানে আসিয়ান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
ড. মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার স্থিতাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চীন সরকারের সম্পৃক্ততায় একটি ত্রিপাক্ষিক আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই বিকল্প উদ্যোগের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব এবং রাষ্ট্রদূত-মহাপরিচালক পর্যায়ে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি পরশেষে বলতে চাই, রোহিঙ্গা সমস্যাটি একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক সমস্যা। এ সংকটের শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও দ্রুত প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক পর্যায়ে বাংলাদেশের জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধারা বজায় থাকবে। মিয়ানমার তাদের নিয়ে যেতে অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। তবে পাঁচ বছর হলো তারা তাদের অঙ্গীকার এখনো কার্যকর করেনি। তাই তাদের উপর চাপ অব্যাহত রয়েছে।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম