বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুন-বিস্ফোরণ তদন্তে ৬ কমিটি
৬ জুন ২০২২ ০০:৫২ | আপডেট: ৬ জুন ২০২২ ১০:০০
ঢাকা: সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে মোট ছয়টি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ডিপো কর্তৃপক্ষ নিজেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশন, জেলা প্রশাসন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের ওই ডিপোতে আগুন লাগে। দ্রুত সে আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। একের পর এক কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়। কনটেইনারে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক থাকায় সে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যাপক বেগ পেতে হয়।
আগুন লাগার প্রায় ২৬ ঘণ্টা পরও ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুন নতুন করে আর ছড়াবে না। তবে পুরোপুরি নিভতে আরও সময় লাগবে। ভয়াবহ এ আগুনে ফায়ার সার্ভিসের কমপক্ষে ৯ কর্মীসহ ৪৯ জনের প্রাণহানির তথ্য জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। আহত ও দগ্ধের সংখ্যা প্রায় দুইশ।
আরও পড়ুন-
- ১৩টি মরদেহ শনাক্ত হয়েছে: জেলা প্রশাসক
- ২০ ঘণ্টাতেও নেভেনি আগুন, নিহত বেড়ে ৪৯
- রাত ১০টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসবে: সেনাবাহিনী
- সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ, পুলিশ সদস্যসহ ৩ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে
- ‘আগুন আর ছড়ানোর আশঙ্কা নেই, পুরোপুরি নিভতে সময় লাগবে’
- ডিপোতে বিস্ফোরণ: ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের মধ্যে নিহত ও নিখোঁজ যারা
- নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ, আহতদের ৪-৬ লাখ টাকা দেবে ডিপো কর্তৃপক্ষ
বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন বেসরকারি এই কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ এই আগুন লাগার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। টার্মিনাল ম্যানেজার, ডেপুটি ডিরেক্টর ও চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপকমিশনারকে নিয়ে গঠিত কমিটিতে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এই আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে গঠন করেছে ৯ সদস্যের কমিটি। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তারকে সদস্য সচিব করে গঠন করা এই কমিটিকে সময় দেওয়া হয়েছে পাঁচ কার্যদিবস।
এই তদন্ত কমিটির বাকি সাত সদস্য হলেন— পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন খান, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার আবু নুর রাশেদ আহমেদ, পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম জেলার পরিচালক মুফিদুল আলম, সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের মেজর আবু হেনা মো. কাউসার জাহান, চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম ও চট্টগ্রামের বিস্ফোরক পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন।
৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনও। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক বদিউল আলমকে আহ্বায়ক করে গঠন করা কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে সাত কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম কাস্টমসের পক্ষ থেকে এ ঘটনা তদন্ত করতে গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের কমিটি। কাস্টমস কমিশনার ফখরুল আলম জানিয়েছেন, এই কমিটির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শফিউদ্দিন। বাকি সদস্যরা হলেন— যুগ্ম কমিশনার তারেক হাসান ও সালাহউদ্দিন রিজভী এবং সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা ও রাজস্ব কর্মকর্তা বিকাশ দাশ। প্রতিবেদন জমা দিতে সাত কার্যদিবস সময় পাচ্ছে এই কমিটিও।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে এ ঘটনা তদন্তে গঠন করা কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন পরিচালক (প্রশিক্ষণ,পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রেজাউল করিম। ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক শাহজাহান সিকদার জানিয়েছেন, কমিটিতে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন চট্টগ্রাম বিভাগের উপ পরিচালক মো. আনিছুর রহমান। মোট সাত সদস্যের এই কমিটিকে পাঁচ দিন সময় দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদন জমা দিতে।
অন্যদিকে, রোববার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছে বিএম কনটেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ। এই কোম্পানির মালিকানা স্মার্ট গ্রুপের। তাদের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তারা পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি কত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তবে এই দুর্ঘটনা তদন্তে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার তদন্ত কমিটিকে সহায়তার অঙ্গীকার করেছে স্মার্ট গ্রুপ।
আরও পড়ুন-
- ডিএনএ পরীক্ষার পর মরদেহ হস্তান্তর: পুলিশ
- গুরুতর আহতদের ঢাকায় আনার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
- সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের
- ‘হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছড়িয়ে পড়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসছে না’
- ৭ ফায়ার ফাইটারসহ নিহত ৩৯, হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হচ্ছে আহতদের
- বিএম কনটেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মজুতের অনুমতি ছিল না
সারাবাংলা/টিআর