১৩টি মরদেহ শনাক্ত হয়েছে: জেলা প্রশাসক
৫ জুন ২০২২ ২০:৫৮ | আপডেট: ৫ জুন ২০২২ ২৩:০৩
ঢাকা: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রায় অর্ধশত মৃত্যুর তথ্য জানা গেছে এখন পর্যন্ত। সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, এর মধ্যে মাত্র ১৩টি মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বেশিরভাগ মরদেহই আগুনে জ্বলে অঙ্গার হয়ে গেছে। ফরেনসিক পরীক্ষা ছাড়া সেগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হবে না।
রোববার (৫ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এক ব্রিফিংয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন। এসময় তিনি বলেন, প্রথম যে বিস্ফোরণ হয়েছিল, সেখানে ফায়ার সার্ভিসের ৯ জনসহ যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের কাউকেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে রোববার বিকেলে পুলিশের চট্টগ্রাম জোনের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনোয়ার হোসেনও সারাবাংলাকে বলেন, ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে বেশিরভাগ মরদেহই স্বাভাবিকভাবে শনাক্ত করার অবস্থায় নেই। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে মরদেহ শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
আরও পড়ুন- ডিএনএ পরীক্ষার পর মরদেহ হস্তান্তর: পুলিশ
জেলা প্রশাসক বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেসব মরদেহ রয়েছে, ময়নাতদন্তের পর সেগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আপনারা (গণমাধ্যমকর্মী) সংবাদ প্রকাশ করুন, কেউ যেন এদিক-সেদিক না ঘুরে সরাসরি মেডিকেলে যোগাযোগ করে। আমরা যাদের শনাক্ত করতে পেরেছি, তাদের নগদ অর্থ সহায়তাসহ মরদেহ হস্তান্তর করব। যেসব মরদেহ এখনো শনাক্ত করতে পারিনি, সেগুলো শনাক্তের পর নগদ অর্থ সহায়তাসহ হস্তান্তর করা হবে।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা গেছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের বিশেষজ্ঞ টিম সেখানে কাজ করছে। দেশের সব এজেন্সি এক হয়ে কাজ করছে। তারা যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো বিশেষজ্ঞ মতামত না দিতে পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আগুনের সূত্রপাতের কারণ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারব না। আপনারা ধৈর্য ধরুন। আমরা নিশ্চিত হয়েই আপনাদের সঠিক কারণ জানাব। কোনো ধরনের গুজব কিংবা ভুল খবর যেন প্রকাশ না হয়, সবাইকে সেই অনুরোধ করেন তিনি।
আরও পড়ুন- রাত ১০টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসবে: সেনাবাহিনী
সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের প্রথম যে দলটি আগুন নেভাতে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে ৯ জন নিহত হয়েছেন জানিয়ে জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, আশপাশের এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তখন বিস্ফোরণ হয়েছে। তাই শুরুতে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সাধারণ জনগণ কাউকে আশপাশে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। কারণ কখন কোথায় বিস্ফোরণ হয়, তার কোনো ঠিক ছিল না। সকালে যখন বিস্ফোরণের মাত্রা কমে আসতে থাকে, তখন ফায়ার সার্ভিসসহ পুলিশ, র্যাব, রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্যরা সেখানে প্রবেশ করে।
জেলা প্রশাসক বলেন, বিএম কনটেইনার ডিপোর সব কনটেইনারেই রফতানি পণ্য ছিল। অধিকাংশ কনটেইনারেই ছিল তৈরি পোশাক খাতের পণ্য। সেগুলোতে আগুন ধরে গেলে একটার পর একটা কনটেইনার বিস্ফোরিত হতে থাকে। তাই সকাল পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার কার্যক্রম স্তিমিত রাখতে হয়েছিল। এখনো কিছু কনটেইনারে আগুন জ্বলছে, কিছু কনটেইনারে টায়ার ছিল, সেগুলো বিস্ফোরিত হচ্ছে। ভেতরে যেহেতু ঢোকা যাচ্ছিল না, তাই আসলে এটি কীসের বিস্ফোরণ তা বোঝা যাচ্ছিল না।
আরও পড়ুন- ২০ ঘণ্টাতেও নেভেনি ডিপোর আগুন, নিহত বেড়ে ৪৯
এদিকে, রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত এই আগুনে প্রাণহানি ঘটেছে ৪৯ জনের। এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, পার্কভিউ হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৮২ জন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও পার্কভিউ হাসপাতাল থেকে অন্তত ১২ জনকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। আরও শতাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
আরও পড়ুন-
- গুরুতর আহতদের ঢাকায় আনার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
- আগুন নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২
- কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২
- সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের
- সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ, পুলিশ সদস্যসহ ৩ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে
- ‘হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছড়িয়ে পড়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসছে না’
- ৭ ফায়ার ফাইটারসহ নিহত ৩৯, হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হচ্ছে আহতদের
- বিএম কনটেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মজুতের অনুমতি ছিল না
সারাবাংলা/এসএন/এসএসএ/টিআর