কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২
৫ জুন ২০২২ ১২:৩০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোর আগুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান সারাবাংলা জানান, এ পর্যন্ত ৩২ জনের মরদেহ মেডিকেলে এসেছে। সেগুলো মর্গে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচজন সদস্য রয়েছেন।
এদিকে সর্বশেষ খবরে কনটেইনার ডিপোর আগুন এখনও নেভেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট কাজ করছে। সেখানে যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনীও।
রোববার (৫ জুন) সকাল ১০টার দিকে সেনাবাহিনীর দেড় থেকে দুই শতাধিক সদস্যের একটি দল আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন।
চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইঞ্জিনিয়ারিং কোর ১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনিরা সুলতানা সাংবাদিকদের জানান, কন্টেইনার ডিপোটিতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রয়েছে। যে কারণে আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞরা ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
অগ্নিকাণ্ডের তদন্তে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করার কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন বলেছেন, কমিটিকে চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হবে।
ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকল সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার (৪ জুন) আনুমানিক রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম নগরী থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুর এলাকায় অবস্থিত বিএম কন্টেইনার ডিপোর লোডিং পয়েন্টের ভেতরে আগুন লাগে। প্রথমে কুমিরা ও সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে রাত পৌনে ১১টার দিকে এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ একটি কনটেইনারে রাসায়নিক থাকায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও শ্রমিকসহ ৪ শতাধিক মানুষ দগ্ধ ও আহত হন।
জানা গেছে, শুরুতে ডিপোর কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এরপর স্থানীয় কুমিরা স্টেশনের দুটি ইউনিটের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু পরে রাসায়নিকের একটি কন্টেইনারে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে পর পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেন।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ স্টেশন থেকে সব গাড়ি রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হয়। রাত বাড়ার সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীর সব স্টেশনের সব গাড়িই সেই ডিপোতে আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত হয়। এরপরও আগুন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে অগ্নি নির্বাচক গাড়ি পাঠাতে অনুরোধ করা হয়।
সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক বলেন, কেমিকেলের কন্টেইনারে আগুন লাগার পর পানি দিলে তা আরও বেড়ে যায়। এতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আগুন নেভাতে গেলে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের একজনের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বিএম কন্টেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ আগুন লাগার কারণ সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি। ডিপোর কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা জানান, রাতের পালায় তাদের নিজস্ব দুই শতাধিক কর্মী ডিপোতে কাজ করেন। এরসঙ্গে আরও যুক্ত থাকেন কয়েকশ ট্রাক ও কভার্ডভ্যানের চালক, সহকারী ও শ্রমিকরা। প্রায় ২৪ একর জমির উপর ওই ডিপোটি অবস্থিত। সেখানে কয়েক হাজার কন্টেইনার ছিল। তবে এ সংখ্যা আসলে কত তা নির্দিষ্ট করে কেউই জানাতে পারেনি।
রোববার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন বলেন, আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর রাত থেকে আমরা এখানে কাজ করছি। লাশের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে মালিকপক্ষের কাউকে পাচ্ছি না। মালিকদের পেলে আমরা জানতে পারতাম কোন কনটেইনারে কী আছে। এটি আমাদের জানা নেই। এ জন্য উদ্ধার কাজে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে।‘
মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা এখনও ভেতরে পুরোপুরি প্রবেশ করতে পারছি না। এ ঘটনায় ফায়ারের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।’
সারাবাংলা/একে