ছেলেকে পোলাও-মাংস-পায়েস খাওয়ানো হলোনা মছিরন নেছার
১ জুন ২০২২ ১৯:৫০ | আপডেট: ১ জুন ২০২২ ২২:০৪
রাজবাড়ী: মারামারির মামলায় রাজবাড়ী জেলা কারাগারে আটক ছেলে ইসলাম সেখ (৪০)। তাকে দেখতে যাচ্ছিলেন মা মছিরন নেছা (৬০)। ছেলেকে খাওয়ানোর জন্য রান্না করে নিয়ে যাচ্ছিলেন পোলাও, গরুর মাংস ও পায়েস। মছিরনের সঙ্গে ছিলেন তার দুই মেয়ে মর্জিনা ও মরিয়ম এবং তিন নাতি-নাতনি। তবে ছেলেকে পোলাও-মাংস ও পায়েস খাওয়ানো হলোনা মছিরনের। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে করে কারাগারে যাওয়ার পথে ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান মছিরনসহ তার পরিবারের পাঁচ জন। ইজিবাইকের চালকও নিহত হয়েছেন একই দুর্ঘটনায়।
বুধবার (১ জুন) সকাল ৯টার দিকে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার চাঁদপুর বাস স্ট্যান্ডের কাছে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন— রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের মুচিদাহ বনগ্রামের বছির মিয়ার ছেলে ইজিবাইকচালক নাসির মিয়া (৩৫), একই গ্রামের মোতালেব হোসেনের স্ত্রী মছিরন নেছা (৬০), মছিরনের মেয়ে মরিয়ম (৪০) ও তার মেয়ে শিলা (২০) এবং মছিরনের আরেক মেয়ে মর্জিনার দুই ছেলে নয়ন (৭) ও ইউছুফ (৬)। এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত মর্জিনাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- ট্রাকচাপায় একই পরিবারের ৫ জনসহ ইজিবাইক চালকের মৃত্যু
নিহত মছিরন নেছার বড় ভাই মো. আক্কাস আলী সারাবাংলাকে জানান, তার ভাগনে ইসলাম একটি মারামারি মামলায় রাজবাড়ী জেলা কারাগারে আটক আছেন। বুধবার সকালে পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়ন থেকে একটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ভাড়া করে তার বোন মছিরনসহ পরিবারের সদস্যরা ইসলামকে দেখার জন্য রাজবাড়ী জেলা কারাগারে যাচ্ছিলেন। মছিরন তার ছেলে ইসলামকে খাওয়ানোর জন্য পোলাও, গরুর মাংস ও পায়েস রান্না করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কালুখালী চাঁদপুর বাস স্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের চাপায় মছিরনসহ তাদের পরিবারের পাঁচ জন প্রাণ হারান। শুধু বেঁচে যান মছিরনের মেয়ে মর্জিনা। তবে তার শারীরিক অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
পাংশা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। তবে এর চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছেন। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশগুলো ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
ওসি আরও বলেন, দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, নিহত মছিরন নেছা তার মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে রাজবাড়ী জেলা কারাগারে আটক ছেলেকে দেখার জন্য যাচ্ছিলেন। আমরা ইজিবাইকটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের সময় দুর্ঘটনাস্থল থেকে একটি সিলভারের খাবারের বাটি পেয়েছি। বাটির ভেতরে পোলাও, গরুর মাংস ও পায়েস ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ছেলেকে খাওয়ানোর জন্য মছিরন নেছা খাবারগুলো নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তা আর খাওয়ানো হলো না। এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা।
হাইওয়ে পুলিশ মাদারীপুর রিজিয়নের ফরিদপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, রাজবাড়ী থেকে একটি ট্রাক কুষ্টিয়ার দিকে যাচ্ছিল। চাঁদপুর বাস স্ট্যান্ডের কাছাকাছি স্থানে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইককে চাপা দেয় ট্রাকটি। এতে ইজিবাইকের চালক ও পাঁচ যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এরপর ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কুষ্টিয়ার দিক থেকে রাজবাড়ীর দিকে আসা একটি প্রাইভেট কারকেও চাপা দেয়। তবে প্রাইভেট কারে থাকা কারও তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।
সন্ধ্যা ৬টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় খাবারের বাটিটি পাংশা হাইয়ে থানায় ইজিবাইকটির ধ্বংসাবশেষের পাশে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
সারাবাংলা/টিআর