বিষ হাতে ও কাফনের কাপড় গায়ে ইসিতে ৩৫ প্রার্থী
৩১ মে ২০২২ ১৭:৫৮ | আপডেট: ৩১ মে ২০২২ ১৯:৪১
ঢাকা: সুষ্ঠু নির্বাচন এবং প্রচার প্রচারণার সুযোগ চেয়ে গায়ে কাফনের কাপড় পরে ও হাতে বিষের বোতল নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন ৩৫ জন প্রার্থী। নোয়াখালী জেলার হাতিয়ার দুই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে আগামী ১৫ জুন নির্বাচনের জন্য তারা প্রার্থী হয়েছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বামীর অত্যাচারে নির্বাচনের প্রচার চালাতে পারছেন না বলে তাদের অভিযোগ। তারা বলছেন, স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে সিইসির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। এদিকে দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ অবস্থান নেওয়া প্রার্থীদের জোর করে ইসি ভবনের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। পরে কয়েকজন প্রার্থী ইসি কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
মঙ্গলবার (৩১ মে) বেলা সোয়া ১১টায় ইসি ভবনের সামনে অবস্থান নেন ভুক্তভোগী প্রার্থীরা। প্রার্থীদের অভিযোগ, আগামী ১৫ জুন ভোটের আগে হাতিয়ার নব গঠিত ১ নং হরনী ও ২ নং চানন্দি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের উপর হামলা, প্রচার-প্রচারনায় বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব বিষয়ে স্থানীয়ভাবে অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার না পেয়ে তারা নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে এসে অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে ইসিতে অবস্থান করা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. মুসফিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় হামলার শিকার হয়েছি। আমরা তখন অনেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারিনি। তারপর সিইসি ও সচিবকে জানানোর পর তিনি আমাদের পার্শ্ববর্তী উপজেলা সুবর্ণচরে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। সেখানে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর নির্বাচনী প্রচারে নামলেই আমাদের উপর হামলা করা হচ্ছে। আমরা এখন নির্বাচন করব কি? পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ জনগণকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে প্রাণনাশের মতো ভয়ভীতির হুমকিসহ প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ইউনিয়ন দুটির পাশে মেঘনা নদী, রামগতি ও সুবর্ণচর উপজেলা সীমানা থাকাই সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। ১ নং হরনী ইউনিয়ন ও ২ নং চানন্দি ইউনিয়ন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে প্রত্যেকটি কেন্দ্রে প্রশাসনিক তৎপরতা জোরদার করা জরুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নোয়াখালী-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যের (এমপি) স্বামী তার সন্ত্রাসীদের দিয়ে প্রার্থীদের উপর হামলা ও প্রার্থীদের প্রচরণার কাজ বন্ধ করে দেন। বর্তমানে প্রার্থীদের সকল কাজ বন্ধ রয়েছে। ইতিপূর্বে হাতিয়া উপজেলার মূল ভূখণ্ডে সকল ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হওয়ার কারণে ভোটাররা আতঙ্কিত। তাই প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাচনে র্যাব, বিজিবি ও কোস্টকার্ড মোতায়েন করা প্রয়োজন।’
সুষ্ঠ নির্বাচনের লক্ষ্যে ওই এলাকার থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সার্কেল এসি প্রত্যাহার ও নির্বাচনী প্রচার চালানোর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া ঘোষণা দেন।
এ ব্যাপারে সংরক্ষিত নারী প্রার্থী জাকিয়ো বেগম লাকি বলেন, ‘আমরা যেকোনো কিছুর বিনিময়ে সুষ্টু নির্বাচন চাই। আমরা এলাকায় থাকতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে হাতিয়া উপজেলায় বাহির থেকে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পুলিং অফিসার এবং প্রশাসনিক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জনবল নিয়োগ করা আবশ্যক। অন্যথায় নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমার প্রার্থীরা প্রচারণা কাজ চালাতে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে হামলার শিকার হচ্ছি। এতে পুলিশ, সাংবাদিকও আহত হয়েছেন।’
ইসির সামনে অবস্থান নেওয়া প্রার্থীরা আরও জানান, এই কর্মসূচিতে দুইজন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী, ২৭ জন সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী ও ৬ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী উপস্থিত রয়েছেন।
১ নং হরনী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এমপির স্বামী সমর্থিত প্রার্থী ছাড়া কাউকে নির্বাচন করতে দেওয়া হচ্ছে না। তারা ভোটারদের বলছেন ইভিএমে ভোট হলেও তোমরা শুধু ফিঙ্গার দেবা। আর আমাদের লোকেরা ভোট দিয়ে দেবে। তোমরা ভোট দিতে পারবা না। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। ভোটাররা যাতে ভোট দিতে পারে কমিশনের কাছে সেই দাবি জানাই।’
এ বিষয়ে ইসি কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেউ পেশিশক্তি ব্যবহার করে নির্বাচনে জয়লাভ করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি কোনো প্রার্থী যদি অপর প্রার্থীকে নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নলেজে ছিল না। এখন এটা জানতে পেরেছি। পরে বিস্তারিত খোজ-খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
সারাবাংলা/জিএস/এনএস