১৭০ যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ল মৈত্রী, ১৯ যাত্রী নিয়ে ফিরল বন্ধন
২৯ মে ২০২২ ১৬:৪৫ | আপডেট: ২৯ মে ২০২২ ১৮:০৫
ঢাকা: টানা ২৬ মাস বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু হলো। এর মধ্যে কলকাতা থেকে যাত্রী নিয়ে খুলনা এসেছে বন্ধন এক্সপ্রেস। আর ঢাকা থেকে কলকাতার পথে ছেড়ে গেছে মৈত্রী এক্সপ্রেস।
রোববার (২৯ মে) সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে ১৭০ জন যাত্রী নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে যায় মৈত্রী এক্সপ্রেস। এর আগে, স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ২০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ৫০ মিনিট) কলকাতা থেকে ১৯ জন যাত্রী নিয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে বন্ধন এক্সপ্রেস। দীর্ঘ বিরতির পর প্রথম যাত্রায় যাত্রী সংখ্যা কম হলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা, ভারত-বাংলাদেশের রেল পথে শিগগিরই যাত্রী সংখ্যা বাড়বে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দুই বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর নতুন করে চালু হওয়া ৪৫৬ আসনের মৈত্রী এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি হয়েছে ১৭২টি। এর মধ্যে দু’জন যাত্রী যাননি। বাকি ১৭০ জন নিয়ে ঢাকা ছেড়েছে মৈত্রী। এই যাত্রীদের মধ্যে ১৬ জন ভারতীয়, একজন ইন্দোনেশীয় এবং বাকিরা সবাই বাংলাদেশি।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, ৫০ শতাংশ আসন যাত্রীপূর্ণ না হলে লোকসান গুনতে হয়। সে তুলনায় দীর্ঘ বিরতির পর প্রথম যাত্রায় মৈত্রী এক্সপ্রেসের প্রায় ৬৪ শতাংশ আসনই ছিল ফাঁকা।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, দীর্ঘ দিন পর ট্রেন চলাচল শুরু হওয়া একটি বিষয়। তাছাড়া এ বিষয়ে তেমন প্রচার-প্রচারণাও করা যায়নি। সে কারণে যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কম হয়েছে। তবে এ পরিস্থিতি দ্রুতই কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এর আগে, সকালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে সবুজ পতাকা উড়িয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার। সঙ্গে ছিলেন রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রথম যাত্রায় যাত্রীদের ফুল দিয়ে অভিন্দন জানান রেলের কর্মকর্তারা। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন পর মৈত্রী চালু করতে পেরে তারা আনন্দিত।
ঢাকা-কলকাতা রুটে বৃহস্পতিবার ছাড়া সপ্তাহে ছয় দিনই মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচল করবে। ঢাকা-কলকাতা পথে মৈত্রীর এসি আসনের ভাড়া ৩ হাজার ৬০৫ টাকা, আর এসি চেয়ারের ভাড়া ২ হাজার ৫৭০ টাকা। ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ভাড়ায় রয়েছে ৫০ শতাংশ ছাড়। ঢাকা-কলকাতা রুটে মৈত্রী চালু হয় ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল। ২০২০ মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ওই বছরের ১৫ মার্চ থেকে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এদিকে, খুলনা-কলকাতা পথে চলাচল করা বন্ধন এক্সপ্রেস রোববার (২৯ মে) স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ২০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ৫০ মিনিট) কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করে। মৈত্রী এক্সপ্রেসের মতো বন্ধন এক্সপ্রেসেও আসন সংখ্যা ৪৫৬টি। তবে এদিন মাত্রা ১৯ জন যাত্রী এসেছেন কলকাতা থেকে। ট্রেনটি খুলনা পৌঁছেছে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে। এক ঘণ্টা বিরতির পর দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে খুলনা থেকে ৪৬ জন যাত্রী নিয়ে ফের কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেননি।
মৈত্রী এক্সপ্রেসের মতো এই ট্রেনেও যাত্রী সংখ্যা কম হওয়ার পেছনে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন রেলওয়ের কর্তারা। জানা গেছে, এই পথে এমনিতেই যাত্রী সংখ্যা অনেক কম হয়ে থাকে। তার ওপরে দীর্ঘ দিন পর চালু হওয়ায় এবং বিষয়টি খুব বেশি মানুষ না জানায় যাত্রী সংখ্যা কম হয়েছে। তবে এই সংকটও দ্রুতই কেটে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বরে খুলনা-কলকাতা রুটে চালু করা হয় বন্ধন এক্সপ্রেস। পরে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ২৬ মাস ধরে এই পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
৪৫৬ আসনের বন্ধন এক্সপ্রেসে ৩১২টি এসি চেয়ার ও ১৪৪টি প্রথম শ্রেণির আসন রয়েছে। ভারত থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার ও রোববার খুলনা-কলকাতার মধ্যে চলাচল করে বন্ধন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কোচের ভাড়া ১ হাজার টাকা, কেবিনের সিট ভাড়া ১৫০০ টাকা। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে ভ্রমণ কর আরও ৫০০ টাকা। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বাড়তি দিতে হচ্ছে ৭৫ টাকা। তবে এটি সাময়িক।
দুই দেশের মধ্যে মৈত্রী ও বন্ধন এক্সপ্রেস অনাড়ম্বরভাবে পুনরায় চালু হলেও ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে চালু হতে যাওয়া মিতালী এক্সপ্রেসের জন্য রয়েছে নানা আয়োজন। ১ জুন প্রথমবারের মতো যাত্রী পরিবহন শুরু উপলক্ষে এরই মধ্যে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ভারত সফরে রয়েছেন। ওই দিন বাংলাদেশের পক্ষে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এবং ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ভার্চুয়ালি এই আয়োজনের উদ্বোধন করবেন।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর
টপ নিউজ বন্ধন এক্সপ্রেস বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন চলাচল মৈত্রী এক্সপ্রেস