মামলার বাদীর মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে
২২ মে ২০২২ ২২:৪৭ | আপডেট: ২৩ মে ২০২২ ০০:৩৪
গাইবান্ধা: জমিজমা সংক্রান্ত এক মামলার ঘটনা তদন্তে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা এসআই (নিরস্ত্র) শামছুল হক বাদীর মেয়েকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সময় তিনি কর্মরত ছিলেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি থানায়। বর্তমানে কাজ করছেন রংপুরের মিঠাপুকুর থানায়। তার বিরুদ্ধে কয়েক দফা ধর্ষণের অভিযোগ এনে গাইবান্ধার আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী। বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
জানা যায়, জমিজমা নিয়ে প্রতিবেশি আব্দুল মজিদ দিগরের বিরুদ্ধে ফুলছড়ি থানায় ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী নারীর মা। এসআই (নিরস্ত্র) শামছুল হক এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান। তদন্তে এসে গত বছরের ২৪ অক্টোবর শামছুল হক বাদীর ঘরে তার মেয়েকে ধর্ষণ করে। এরপর ভয় দেখিয়ে তিনি আরও কয়েক দফা ধর্ষণ করেন। সর্বশেষ গত বছরের ১২ নভেম্বর বিকেলে ফের ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
আদালতে ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, ধর্ষণের বিষয়ে ফুলছড়ি থানায় মামলা করতে গেলে তালবাহনা করা হয়। পরে টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি মীমাংসা করার জন্য চাপ দেন স্থানীয় কয়েকজন দালাল ও শামছুল দারোগার লোকজন। এদিকে ধর্ষণে ভুক্তভোগী অন্তঃসত্তা হয়ে গেলে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সুকৌশলে শামছুল হক ভিকটিমকে ওষুধ খাওয়ান। এতে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি গর্ভপাত ঘটে এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে তিনি গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদি হয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা শামছুল হককে আসামি করে ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদী বলেন, ‘আমার মা একটা জমিজমা বিষয় নিয়ে মামলা করে। সেই মামলায় এসআই শামছুল হক তদন্তে এসে মামলার ভয় দেখিয়ে আমাকে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে একইভাবে আমাকে জেল খাটানো এবং স্বামীকে সব বলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে নিয়মিত ধর্ষণ করে। ফুলছড়ি থানা মামলা না নেওয়ায় আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আমি বিচার পাচ্ছি না। সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হচ্ছে।’
অভিযুক্ত উপপরিদর্শক (এসআই) শামছুল হকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনা শুনেই বলেন, ‘ভাই আমি ব্যস্ত আছি, পরে ফোন করছি।’ এরপর বারবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জুলফিকার আলী ভুট্টু বলেন, ‘ধর্ষণ মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে। প্রায় তিন মাস পর গত ১৮ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। সেখানেই সমস্ত বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। আদালত এরপর যা সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কাওছার আলী বলেন, ‘আমার থানায় ভিকটিমের মা জমি নিয়ে মারামারির একটি মামলা করে। ওই মামলায় শামছুল হক তদন্ত করে আসামি ধরে আদালতে চার্জশিট দেন। তদন্তকালে শামছুল বাদীর পরিবারের সঙ্গে কি করছে, তা আমি জানি না। ভিকটিম শামছুলের বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি। তবে শামছুলের বিরুদ্ধে গাইবান্ধা আদালতে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের হয়েছে শুনেছি। সেটা তদন্ত করছে পিবিআই, তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।’
সারাবাংলা/এমও