আন্তঃএশিয়া রেল যোগাযোগ বাড়াবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু’
২২ মে ২০২২ ২১:৩৪
ঢাকা: রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেলপথে যোগাযোগ বাড়াতে ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর উপরে নির্মিত হয় ‘বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু’। কিন্তু বছর দশেকের মাথায় গিয়ে সেই সেতুতে ফাঁটল দেখা দিলে গতি কমে আসে রেল চলাচলে। তখন থেকেই কথা হচ্ছিল এই সেতুর পাশে আরেকটি সেতু নির্মাণের। যে সেতু আন্তঃএশিয়ার সঙ্গে রেল যোগাযোগ বাড়াবে। সে লক্ষ্য নিয়েই ২০২০ সালে শুরু হয়‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু’।
রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, তিনটি প্যাকেজে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। যার তৃতীয় প্যাকেজ বাস্তবায়নে রোববার (২২ মে) রেলপথ মন্ত্রণালয়ে একটি চুক্তি সই করা হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং জাপানের ইয়াশিমা-জিএসইর মধ্যে হওয়া চুক্তিতে রেলওয়ের পক্ষে প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান ও ইয়াশিমা-জিএসই’র নোরিও ইকঝিমা চুক্তিতে নিজ নিজ পক্ষে সই করেন। চুক্তি সই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রকল্পটি মোট তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্যাকেজ-৩ এর আওতায় পশ্চিম ও পূর্ব স্টেশনের জন্য সিগন্যাল ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার বাস্তবায়ন করবে জাপান।
এসময় রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর প্রথম দুইটি প্যাকেজের অবকাঠামোর কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। যা গত ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন। ২০১১ সালে রেলপথের উন্নয়নে রেলপথ মন্ত্রণালয় আলাদা করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে তা এগিয়ে চলছে।
তিনি বলেন, পিছিয়ে পড়া রেল ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও ভারসাম্যপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে রেলকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অনেকগুলো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ব্রডগ্রেজ এবং পশ্চিমাঞ্চলে মিটারগেজ ট্রেন চলাচল করে। যমুনা ও পদ্মা নদী আমাদের দেশকে আলাদা করে রেখেছে। বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু হওয়ার আগ পর্যন্ত সড়ক ও রেলপথে আমরা বিচ্ছিন্ন ছিলাম। ১৯৯৬ সালে বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আমাদের সড়ক ও রেল যোগযোগ সমৃদ্ধ হয়।
রেলপথ মন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে সেই সময় যমুনা নদীর উপরে রেল সেতু সংযুক্ত করা হয়। এটা অনেক দেরিতে ছিল বলে এখানে রেলের স্বাভাবিক যে গতি সেটা পুর্ণাঙ্গ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ২০ কিলোমিটার গতিতে আমাদের চলতে হয়। একইসঙ্গে ওজনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যে কারণে একটি পরিপূর্ণ রেল ব্যবস্থা, বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তঃএশিয়া যোগাযোগ, বাংলাদেশের রেল ব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক রেল অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য ট্রান্স এশিয়া রেলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যে কারণে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন এবং দ্বিতীয় রেল সেতু নির্মাণ করতে হচ্ছে। এই সেতু হলে পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রেল যোগাযোগ উন্নত হবে। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগে সব বাধা দূর হবে।
তিনি এসময় নির্দিষ্ট সময়েই নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মাণ করা হচ্ছে সরকারের মেগা প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু’। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই সেতু দাড়াবে ৫০ পিয়ারের উপর। ইতোমধ্যে ১০ পিয়ারের কাজ শেষ করে এনেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সেতুটি চালু হলে ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে রেল চলাচল করতে পারবে।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ