Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সমুদ্র সম্পদকে উন্নয়নে কাজে লাগানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২২ মে ২০২২ ১৮:৩৮ | আপডেট: ২৩ মে ২০২২ ০০:১৭

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যে বিশাল সমুদ্ররাশি পেয়েছি এই সম্পদটাকে আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কাজে লাগাতে হবে। এরইমধ্যে আমরা এই ক্ষেত্রে কিন্তু সুনীল অর্থনীতির ঘোষণা দিয়েছি। কাজেই সমুদ্র সম্পদকে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগানো।

রোববার (২২ মে) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলের প্রথম সভার শুরুতে বিভিন্ন নির্দেশনা নিয়ে এ কথা বলেন। সভায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাসহ মন্ত্রিপরিষদের সংশ্লিষ্ট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দুভার্গ্য ১৯৭৫’র পরে অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল তারা এ সব দিকে কোনোদিন দৃষ্টিই দেয়নি। আমাদের যে সমুদ্রসীমা অধিকার সেটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে, আমাদের যে স্থল সীমানা চুক্তি সেটা আমরা বাস্তবায়ন করেছি।’

নদীমাতৃক বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুযোর্গের সঙ্গে জীবনযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে জীবন অতিবাহিত হয় স্মরণ করিয়ে দেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সরকারের মেয়াদে দেশের মানুষকে বাঁচানো এবং দুযোগ মোকাবিলায় একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন বলেও মনে করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘তখনকার রেডক্রস বা এখনকার রেডক্রিসেন্ট এদেরে সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রায় ৪৫ হাজার ভলান্টিয়ার ট্রেনিং দিয়ে গিয়েছিলেন। দুর্যোগকালীন সময়ে যারা মানুষকে সচেতন করবে এবং মানুষকে রক্ষা করবে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে যেখানে এ ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস হয়। সেখানে সাইক্লোন শেল্টারও নির্মাণের কাজ শুরু করেন এবং গবেষণার ওপর তিনি গুরুত্ব দেন।

বিজ্ঞাপন

৭৫’র পর এরকটা বছর আমাদের সময় অতিবাহিত হয়। কিন্তু এ সব ক্ষেত্রে আর কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারের আসার পরে আমরা বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করি। ব-দ্বীপটাকে রক্ষা করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা উন্নত জীবন দেওয়া এটি আমাদের জন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন। আসলে পরিকল্পিতভাবে পদক্ষেপ নিতে পারলে যে কোনো কঠিন কাজ সমাধান করা যায়। যে পদক্ষেপেই আমি নেই সময়ের বিবর্তনে সেগুলো সংশোধন করা, এই মানসিকতাও থাকা উচিত। কাজেই আমরা সেইভাবেই পদক্ষেপগুলো নিয়েছি ও বাস্তবায়ন করেছি। যার ফলে আমরা কিন্তু একটা সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ থেকে ২০৪১ এই পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা আমরা দিয়েছি। তারই পাশাপাশি আমরা এখানে বসে থাকিনি। আমরা ২১০০ সালের বাংলাদেশ সেটা মাথায় রেখে আমাদের ডেল্টা প্ল্যান। এই ব-দ্বীপ অঞ্চলের মানুষকে সুরক্ষিত করা এবং এদেশের মানুষকে সুন্দর জীবন দেওয়া উন্নত জীবন দেওয়া, এটি মাথায় রেখেই এটি কিন্তু।’

নদীমাতৃক দেশে নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে এনে পণ্য পরিবহন বা দুর্যোগ মোকাবিলার সুবিধার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদেরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হাতে নিয়েছি বলেও অবহিত করেন তিনি ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, যার অভিঘাত থেকে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। সেটি হচ্ছে— জলবায়ু পরিবর্তন এবং জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কিন্তু কোনোরকম আমাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই। কারণ আমরা কখনও জলবায়ু পরিবর্তনে কোনো ক্ষতি আমরা করতে দেই না প্রকৃতিকে। কিন্তু উন্নত দেশগুলো যে সমস্ত ক্ষতির সৃষ্টি করেছে তার প্রভাবেই কিন্তু এই জলবায়ু পরিবর্তন সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এর আঘাতটা বাংলাদেশের ওপর আসবে। কারণ আমাদের যেহেতু একদিকে বিশাল সমুদ্র অপরদিকে নদীমাতৃক দেশ। আর হিমালয় থেকে যে নদীগুলো নেমে আসে সবথেকে বেশি পলি আমাদের দেশের ভেতর থেকেই বঙ্গোপসাগরে পড়ে। সেদিকে বিবেচনা করেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, ‘সেই ক্ষেত্রে আমি মনে করি যে, বদ্বীপ পরিকল্পনাটা এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে অন্ততপক্ষে ২১০০ সালে কি কি করণীয় তার একটা কাঠামো এখানে দেওয়া হয়েছে। তবে এখানে একটি জিনিস বাদ গেছে। সেটি আমাদের বোধহয় করতে হবে। সেটি হচ্ছে আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। যেখানে এক সময় আমাদের অধিকার ছিল না। জাতির পিতা আইন করে গিয়েছিলেন সত্যি এবং তিনি কিছু আলোচনা করে যেমন মিয়ানমারে সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের সমুদ্রসীমা কতটুকু হবে সেটি কিন্তু তিনি নির্দিষ্ট করে গিয়েছিলেন। ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু। কিন্তু ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছে সেই জিয়াউর রহমানের সরকার, এরশাদের সরকার বা খালেদা জিয়ার সরকার কেউ কিন্তু এ ব্যাপোরে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অথচ আমাদের যে একটি অধিকার আছে সাগরে এই বিষয়টা কিন্তু তারা কখনো তুলেই ধরেনি। তারা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’

‘এটা কী কারণে সেটি আমি জানি না। সেটা বিশ্লেষণ হয়ত জ্ঞানী-গুণীরাই করবেন। আমি সোজা কথা জানি, ক্ষমতাটা তাদের একটা ভোগের বস্তু ছিল। কিন্তু দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য ছিল না। এটিই হলো বাস্তবতা। সেটিই আমি মোটামুটি ‍বুঝতে পারি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে আমাদের ডেল্টা প্ল্যানের সঙ্গে আজকে যে বিশাল সমুদ্ররাশি আমরা পেয়েছি এই সম্পদটাকে আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কাজে লাগাতে হবে। এরইমধ্যে আমরা এই ক্ষেত্রে কিন্তু ব্লু-ইকোনমি ঘোষণা দিয়েছি অর্থ্যাৎ সুনীল অর্থনীতি। সমুদ্র সম্পদকে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগানো।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডেল্টা প্ল্যানের মধ্য দিয়ে আমারা আমাদের পরিবেশ রক্ষা করা, যত্রতত্র ইন্ড্রাস্টি যেন না হয় আমরা সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছি। একশোটা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের রাস্তাঘাট করার সময় আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। এরইমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি যে সমস্ত জলাভূমি বা বিল অঞ্চল সেখানে এলিভেটেড রাস্তা করে দেওয়া। সেখানে কিন্তু ওই মাটি ভরাট করে করা না হয়। অর্থ্যাৎ পানির যে গতিটা সেটি যেন ঠিক থাকে। এটি খুব বেশি প্রয়োজন আমাদের দেশের জন্য।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা ব্রিজটা যখন হয় আমি কিন্তু ব্রীজকে ছোট হতে দিইনি। নদী যতটা ওই জায়গায় চওড়া সেটা মাথায় রেখে তারপর বাফার জোন রেখেই কিন্তু আমরা ব্রিজটা করেছি। যে জন্য ব্রিজটা সবচেয়ে দীর্ঘ হয়েছে। যমুনা ব্রিজটা (বঙ্গবন্ধু সেতু) কিন্তু এটিকে চার কিলোমিটারে কমিয়ে আনা হয়। আমি মনে করি এটি ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। কিন্তু ডিজাইন প্ল্যান আগেই হয়ে গিয়েছিল। যেটি নিয়ে আমাদের বেশি কিছু করার ছিল না। আমি শুধু রেললাইনটা সংযোজন করতে পেরেছিলাম।’

সারাবাংলা/এনআর/একে

টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমুদ্র সম্পদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর