Sunday 05 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করবে বিএনপি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ মে ২০২২ ১৭:৩০ | আপডেট: ২২ মে ২০২২ ১৯:৩৮

ঢাকা: আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ সবধরনের ‘নিবর্তনমূলক’ আইন ও অধ্যাদেশ বাতিল করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার (২২ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বিএনপি আয়োজিত গণমাধ্যম সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমাদের পরিষ্কার ঘোষণা, আমরা সরকার গঠন করলে মুক্ত গণমাধ্যমের অন্তরায় ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’সহ সবধরনের নিবর্তনমূলক আইন ও অধ্যাদেশ বাতিল করব। গণমাধ্যমে প্রকাশিত যেকোনো বিষয় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা সংস্থা প্রেস কাউন্সিলে ফয়সালা না করে কোনোভাবেই যেন আদালতে মামলা দায়ের করতে না পারেন, সেটা নিশ্চিত করা হবে।”

‘গণমাধ্যমকে স্বাবলম্বী করার জন্য বিএনপি বিজ্ঞাপনের সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা করবে। পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট সংখ্যক প্রকাশনা, প্রচারণা কিংবা টিআরপির ভিত্তিতে গণমাধ্যমগুলোকে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার চিন্তাও বিএনপির রয়েছে। দেশের ব্যবসা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন বিজ্ঞাপন প্রদানের ক্ষেত্রে দেশীয় গণমাধ্যমগুলোকে অগ্রাধিকার দেয় সেটি নিশ্চিতের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে’- বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘আজ গোটা জাতি বিপন্ন হয়ে পড়েছে, বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। এই জাতি বা রাষ্ট্রকে উদ্ধার করতে হলে একটা ইস্পাত দৃঢ় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। এই ঐক্য আমরা যদি সৃষ্টি করতে না পারি তাহলে এখান থেকে মুক্ত হওয়ার কোনো পথ নেই।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা খুব আশাবাদী। বাংলাদেশের মানুষ কখনো পরাজিত হয়নি। টানেলের পেছনে আলো দেখছি বলেই পুনরায় আমরা উৎসাহিত বা উৎফুল্ল হচ্ছি তা নয়। আমরা সবসময় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছি, কাজ করে যাচ্ছি। সরকারে যখন ছিলাম তখনও করেছি, সরকারে নেই এখনও গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের বিজয় অবশ্যই অর্জিত হবে। জেগে উঠতে হবে সকলকেই। নিজেকে রক্ষার জন্য, সাংবাদিকদের স্বার্থকে রক্ষার জন্য, মানুষকে রক্ষার জন্য, এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেগে উঠতে হবে। পরাজিত করতে হবে এই ভয়াবহ দানবীয় ফ্যাসিবাদী শক্তিকে।’

মতবিনিময় সভায় প্রথম আলো‘র যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ‘‘বিএনপির পক্ষ থেকে একটা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে কিছু অঙ্গীকার করা হয়েছে। তাদের অঙ্গীকারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে পারি, আশ্বস্ত হওয়ারও চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু আমাদের অতীত আশ্বস্ব হওয়ার মতো পরিস্থিতি নয়, বর্তমান তো নয়ই। স্বাধীনতার পর থেকে কোনো সরকারই সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমবান্ধব ছিল না, এখনো নেই। স্বাধীনতার পরে যারাই সরকারে এসেছে- প্রথমে আওয়ামী লীগ, পরবর্তীকালে বিএনপি, এরপর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ অথবা জাতীয় পার্টি, পরে আবার বিএনপি, আবার আওয়ামী লীগ, আবার বিএনপি এবং এখন আওয়ামী লীগ।’

বিএনপির আমলে জহুর হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কারাগারে নিয়ে যাওয়া, একুশে টিভি বন্ধ করে দেওয়া, বিভিন্ন মতের পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপন কমিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আজ আমরা বর্তমান সরকারের নিবর্তনমূলক আইন, নিগৃহ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অন্যায়-অবিচার এই নিয়ে কথা বলব, অবশ্যই বলব। কারণ, আমাদের মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে যেসব বাধা সেই বাধাগুলো দূর করতে হবে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের যেমন দায়িত্ব আছে, রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব আছে।’

সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আজ আওয়ামী লীগ যা করছে তার সমালোচনা করব না, তার সমর্থন করছি- সেটি নয়। অবশ্যই মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে, মত প্রকাশের ক্ষেত্রে যে বাধাগুলো আছে সেক্ষেত্রে বিরোধীদলের সমর্থন চাই, সহযোগিতা চাই। কিন্তু একসঙ্গে এই সর্তক বাণী উচ্চারণ করতে চাই, তারা ক্ষমতায় গেলে যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে- খুবই নিবর্তনমূলক আইন করেছে। এটি স্বৈরাচারী আইন। এর নিন্দা করি, প্রত্যাহারের দাবি জানাই।’

বিজ্ঞাপন

‘কিন্তু আইসিটি আইন যেটি সংশোধন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালে। সেই আইনটি কিন্তু প্রথম চালু হয়েছিল বিএনপির আমলেই। শাস্তিটা আওয়ামী লীগ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের সরকারি কাঠামো আমি জানি না। এটি রাজনৈতিক নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেন, নাকি আমাদের প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেন। প্রশাসন নিজেকে রক্ষা করার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বকে কীভাবে প্রভাবিত করে, কেন প্রভাবিত করে এবং সেটি এখনকার বাস্তব অবস্থায় নিশ্চয়ই আপনারা জানেন। আমরা যে কথাটি বলতে চাই, আমরা যেন সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে পারি, সবসময় বলতে পারি’- বলেন সোহরাব হোসেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, আপনাদের যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, গণতন্ত্রের পক্ষে আপনাদের লড়াই- সেই কথা আমরা তুলে ধরব। আবার সরকার যদি অন্যায় সিদ্ধান্ত নেয়, স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত নেয়, কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করে বা করে থাকে অবশ্যই তারও প্রতিবাদ করব। আমরা চাইব যে, বিরোধীদলে থাকতে গণমাধ্যমের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের যে সখ্য তৈরি হয়, সেটি যাতে ক্ষমতায় যাওয়ার পর অব্যাহত থাকে। আজ আওয়ামী লীগ যে ভাষায় কথা বলে, বিএনপির কোনো কোনো নেতা ক্ষমতায় থাকতে কিন্তু একই ভাষায় কথা বলতেন। আবার আজ বিএনপি যে ভাষায় কথা বলে, আশা করি আওয়ামী লীগ কোনো না কোনো সময়ে বিরোধীদলে এলে তখন হয়তো এই ভাষায় সংবাদপত্রের বন্ধুত্ব চাইবে, সখ্য চাইবে। সার্বিক গণতান্ত্রিক পরিবেশ যদি আমরা আদায় করতে না পারি তাহলে বিচ্ছিন্নভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।’

বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বর্তমান অবস্থা তু্লে ধরে যুগান্তরের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক মাহবুব কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেসের অবস্থা খুবই মারাত্মক। এর কারণটা হচ্ছে উইপেন অব ‘ল অর্থাৎ আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা। বাংলাদেশে অসংখ্য আইন আছে যা আমাদের দেশে স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থী। প্রত্যেকটি আইন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের জন্য পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে হুমকি স্বরূপ।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিকুল একটা পরিবেশের মধ্যে আমরা এখন আছি। এই প্রতিকুল পরিবেশ থেকে উত্তরণের জন্য সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার সেটা হচ্ছে- ডিজিটাল সিকিরিটি অ্যাক্টসহ প্রত্যেকটি আইনকে সংশোধন করা অথবা বাতিল করা। এদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থায় যারা ক্ষমতায় থাকবেন তারা যদি গণতান্ত্রিক না হন তাহলে আইন থাকুক বা না থাকুক সে দেশে ফ্রিডম অব প্রেস কখনো প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।’

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে এবং শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় আলোচনা সভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৭ মাস কারাগারে থাকার পর জামিন মুক্ত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, দিনকালের সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, এমএ আজিজ, নুরুল আমিন রোকন, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, কামাল উদ্দিন সবুজ, বাকের হোসাইন, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, সরদার ফরিদ আহমদ, কাদের গনি চৌধুরী, ইলিয়াস খান, শহীদুল ইসলাম, ইলিয়াস হোসেন, রফিকুল ইসলাম আজাদ, মুরসালিন নোমানী, শফিক আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

গণমাধ্যম টপ নিউজ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল বিএনপি

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর