যুদ্ধাবস্থায় ইউক্রেনে জাহাজ: তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি
২০ মে ২০২২ ১৩:৫৯ | আপডেট: ২০ মে ২০২২ ১৭:০৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: যুদ্ধাবস্থার মধ্যে ইউক্রেনে জাহাজ পাঠানোর ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দুই মাসেও প্রকাশ না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমওএ)। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ ও রকেট হামলায় নিহত নাবিক হাদিসুর রহমানের পরিবারকে এক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
শুক্রবার (২০ মে) দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদে বিএমএমওএ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়েছে। এতে লিখিত বক্তব্য পড়েন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী ও নিহত নাবিক হাদিসুরের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স।
গত ২ মার্চ ইউক্রেনের স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার কিছু পরে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে বিমান হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় রুশ বাহিনীর এই হামলায় মো. হাদিসুর রহমান নামে এক নাবিকের মৃত্যু হয়। তিনি জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তার বাড়ি বরগুনা জেলা বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামে।
জাহাজটিতে মোট ২৯ জন নাবিক ছিলেন। বাকি ২৮ জনকে পরবর্তী সময়ে দেশে ফেরত আনা হয়। নিহত হাদিসুরের মরদেহও দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
আরও পড়ুন-
- দেশে ফিরল ২৮ নাবিক
- ‘বাংকারে আছি, সুযোগ পেলে মুভ করব’
- ইউক্রেন থেকে দেশের পথে বাংলার সমৃদ্ধির নাবিকরা
- বাড়ি ফিরে বিয়ে করার কথা ছিল হাদিসের, চলছিল প্রস্তুতি
- হাদিসুরের জানাজায় মানুষের ঢল, পারিবারিক কবরস্থানে দাফন
- নিজ বাড়িতে পৌঁছেছে হাদিসুরের মরদেহ, স্বজনদের আহাজারি
- ইউক্রেনে বাংলাদেশি জাহাজে হামলা, জানে না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
- জাহাজে রাশিয়া হামলা করেছে— এমন প্রমাণ নেই: পররাষ্ট্র সচিব
- একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হাদিসুরের মা-বাবা
- হাদিসুরের ভাইয়ের আহাজারি— আমার পড়ালেখার খরচ কে চালাবে?
৪ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবি জানায় বিএমএমওএ। এর মধ্যে প্রধান দাবি ছিল, যুদ্ধাবস্থার মধ্যে ইউক্রেনে জাহাজ পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) কোনো ভুল বা গাফিলিত ছিল কি না, সেটি তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন।
পরে ২০ মার্চ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. তোফায়েল ইসলামকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিতে বিএসসির কোম্পানি সচিব মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন— নৌপরিবহন অধিদফতরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার, চট্টগ্রাম নৌবাণিজ্য দফতরের প্রিন্সিপাল অফিসার, চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমির চিফ ইঞ্জিনিয়ার, বুয়েটের নেভাল আকিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের একজন সহযোগী অধ্যাপক ও বিএসসির মহাব্যবস্থাপক (ওয়ার্কশপ)।
কমিটিকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে দুই মাসের মাথায়ও কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছে বিএমএমওএ।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘দুঃখের বিষয়, তদন্ত কমিটির গঠন করা হলেও সেখানে অ্যাসোসিয়েশনের কোনো প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি। ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা থাকলেও আমরা এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত প্রতিবেদন পাইনি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।’
নিহত নাবিকের পরিবারকে এক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএসসির কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন আমীর মো. আবু সুফিয়ান গত ১৫ মার্চ জানিয়েছিলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে নিহত হাদিসুরের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। কিন্তু দুই মাস পার হয়ে গেলেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।’
এদিকে, হাদিসুর রহমানের পরিবারকে সংগঠনের পক্ষ থেকে ১০ লাখ ২৭ হাজার ১৭৭ টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। তার ভাই গোলাম মাওলার হাতে শুক্রবার অনুদান তুলে দেওয়া হয়।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর
টপ নিউজ নাবিক হাদিসুর বিএমএমওএ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন